সর্বশেষ
শেখ হাসিনা ও টিউলিপকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া শুরু: দুদক কমিশনার
কাতার আমিরের মায়ের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক
ঢাকায় বড় সমাবেশের ঘোষণা বিএনপির
বেনজীরের বিরুদ্ধে ‘রেড নোটিশ’ জারি করল ইন্টারপোল
‘বাংলাদেশ থেকে ৭২৫ সেনা সদস্য নেবে কাতার’
আগামী বিশ্বকাপেও রোনালদোকে চান ফিগো
সংসার ভাঙার গল্পে রাশেদ সীমান্ত-অহনা
জুনাইদ আহ্‌মেদ পলকের ‘হারানো সোয়েটার’ পাওয়া গেছে
সমকালের দেওয়া উপহার পেয়ে আনন্দে আত্মহারা মুশফিকের পরিবার
চাকরির প্রথম দিনেই কাভার্ড ভ্যানের চাপায় প্রাণ গেল ইমনের
মব জাস্টিস আর অ্যালাউ নয়, অনেক হয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
ফের ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষ
পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা উপহার দিলো বসুন্ধরা শুভসংঘ দিনাজপুর সরকারি কলেজ শাখা
এক ব্যক্তিকে তিনবার প্রধানমন্ত্রী চায় বিএনপি
বিয়ে বা বাচ্চা নিলেই মিলবে অর্থসহ বিভিন্ন সুযোগ

যত কষ্টই হোক, কারও কাছে হাত পাতবেন না পা হারানো হাবিবুর

অনলাইন ডেস্ক

সড়ক দুর্ঘটনায় একটি পা হারিয়েছেন ট্রাকচালকের সহকারী হাবিবুর রহমান (৪৩)। হাসপাতালে তিন মাস চিকিৎসা শেষে বাড়িতে ফিরে ব্যাটারিচালিত ভ্যান চালানো শুরু করেন। এখন তিনি ভ্যান চালিয়েই অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন। তাঁর এককথা, যত কষ্টই হোক, কখনো কারও কাছে হাত পাতবেন না।

হাবিবুর রহমানের বাড়ি যশোরের কেশবপুর উপজেলার মূলগ্রাম সানাপাড়ায়। ২০০৯ সালের শেষ দিকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লায় একটি ট্রাক অপর একটি ট্রাকের পেছনে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রাকচালকের সহকারী হাবিবুর রহমানের একটি পা থেঁতলে যায়। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর বাঁ পা কেটে ফেলতে হয়। বাড়িতে ফিরে এলে পায়ের কাটা অংশে সংক্রমণ (ইনফেকশন) দেখা দেয়। পরে খুলনার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচার করা হয়। সেখানে তিন মাস চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাড়িতে ফেরেন।

বাড়িতে ফিরে হাবিবুর রহমান সিদ্ধান্ত নেন কাজ করে খাবেন, কারও কাছে হাত পাতবেন না। শুরু করেন সবজির ব্যবসা। কিন্তু ব্যবসায় সুবিধা না হওয়ায় সংসার চালাতে পারছিলেন না। ব্যবসা ছেড়ে ঋণের টাকায় ব্যাটারিচালিত ভ্যান কিনে চালাতে শুরু করেন। প্রতিদিন ঋণের কিস্তি দিতে হয় ৩৫০ টাকা। ভ্যান চালিয়ে যা আয় করেন, তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালান, বাকি টাকায় কিস্তি পরিশোধ করেন। তাঁর বাড়িতে একটি ঘর ছাড়া আর কোনো জায়গাজমি নেই। এর মধ্যেই দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।

১২ নভেম্বর বিকেলে কেশবপুরের পুরোনো বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যশোর-সাতীক্ষারা সড়কে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে আলাপকালে জীবনের নানা চড়াই-উতরাইয়ের কথা শোনান তিনি। আক্ষেপ করে হাবিবুর বলেন, এক পা নিয়ে ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। বিশেষ করে ভ্যান উঁচু জায়গায় ওঠানামা করাতে বেশি কষ্ট হয়। অনেকে ভ্যানে উঠে প্রতিবন্ধী দেখে আবার ভ্যান থেকে নেমে যান। তখন কষ্ট পান তিনি। তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। কেউ কেউ অন্য ভ্যান রেখে তাঁর ভ্যানে উঠতে বেশি আগ্রহ দেখান। মূলগ্রামের ব্যবসায়ী মহিতোষ দত্ত তাঁর ভ্যান ছাড়া অন্য কারও ভ্যানে ওঠেন না। এ রকম অনেকের ভালোবাসাও পান।

জানতে চাইলে মূলগ্রামের বাসিন্দা ও বেগমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বপন মণ্ডল বলেন, হাবিবুর রহমান অনেক মানুষের জন্য অনুকরণীয়। একটি পা না থাকলেও তিনি ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। তবুও তিনি কারও করুণার পাত্র হতে চান না। বিষয়টি অবশ্যই তাঁর দৃঢ়তার অনন্য উদাহরণ।

স্ত্রী, এক ছেলেসহ বর্তমানে হাবিবুরের তিনজনের সংসার। প্রতিদিন ভ্যান চালিয়ে তিন থেকে চার শ টাকা আয় করেন। গোলাম রসুল নামে তাঁর ছেলে মূলগ্রাম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক দীন ইসলাম বলেন, হাবিবুর রহমান একজন অদম্য মানুষ। এক পা হারিয়ে তিনি দমে যাননি। পরিশ্রম করে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালান। বিষয়টি বিবেচনা করে তাঁর ছেলের বিদ্যালয়ের পড়াশোনার জন্য কোনো বেতন নেওয়া হয় না।

হাবিবুর রহমান বলেন, যত দিন নিজে রোজগার করে যেতে পারবেন, কারও কাছে হাত পাতবেন না। সৃষ্টিকর্তা যেন তাঁকে কখনো কারও কাছে হাত পাততে না দেন, এটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ