বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোনো টানাপোড়েন নেই বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন। গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, চালের সঙ্গে গতকাল থেকে টিসিবি ৪০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি শুরু করেছে। বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায়। এতে সংকটে পড়েছেন স্বল্প আয়ের ক্রেতারা। এ কারণে ভর্তুকি মূল্যে আলু বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি।
পণ্য বিক্রি কার্যক্রম উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক নয়। ফলে বাংলাদেশের জন্য ভারত, পাকিস্তান বা চীন কোনো ইস্যু নয়। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সবাইকে সংযুক্ত করতে চায় সরকার। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যিক কোনো টানাপোড়েন আছে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কোনো টানাপোড়েন নেই। ভারত থেকে নিয়মিত চাল, আলু, ডিমসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হচ্ছে।
সেখ বশির উদ্দিন বলেন, বৈশ্বিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে চাহিদা ও জোগানের ভারসাম্য রক্ষায় বাংলাদেশকে উদার হতে হবে। স্থানীয় বাজারে যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হয়, দেশ হিসেবেও (পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে) সিন্ডিকেট হলে সমস্যা। তিনি বলেন, নিত্যপণ্যের যে মূল্যস্ফীতি হয়েছে, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে তার অনেকটা সমাধান করা সম্ভব। সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নত করতে দিনরাত কাজ চলছে। পণ্যের উৎপাদন, আমদানি ও মজুতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে বৈঠক হচ্ছে। বিশেষ করে রমজান মাস সামনে রেখে পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত নিশ্চিতে কাজ চলছে। পণ্যের সরবরাহ ও দাম স্থিতিশীল রাখার বিষয়ে সবাই যথেষ্ট সংবেদনশীল। ভোক্তা অধিদপ্তরও তাদের তদারকি বাড়িয়েছে।
মূল্যস্ফীতি কমাতে কিছু তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী দামে আলু বিক্রি শুরু হলো। পাশাপাশি আলু আমদানির অনুমোদনও দেওয়া আছে। অন্যদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সহযোগিতায় খেজুর, চিনি, সয়াবিন তেল, ডিমসহ আরও কিছু পণ্যের আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে। রাষ্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি মেনে নিয়েই শুধু পণ্যমূল্যে স্থিতিশীলতা আনতে এসব শুল্ক কমানো হয়েছে।
জিনিসপত্রের দাম নিয়ে সাধারণ মানুষের কষ্টের বিষয়ে সরকার অবগত রয়েছে বলে জানান সেখ বশির উদ্দিন। তিনি বলেন, সরকার দাম কমানোর বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে চেষ্টা করছে। কিছু পদক্ষেপের ফলে ইতোমধ্যে ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি আসতে শুরু করেছে। বাজারে পণ্যের সরবরাহ ও পরিমাণ আরও বাড়ানো গেলে দ্রুততম সময়ে দ্রব্যমূল্যে স্থিতিশীলতা আসবে।
বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, যে সিন্ডিকেটের কথা বলা হচ্ছে তাতে মুষ্টিমেয় লোক যুক্ত থাকতে পারে। এ ক্ষেত্রে উত্তর একটাই, বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বাধা দূর করে আরও বেশি মানুষকে নিত্যপণ্যের ব্যবসায় যুক্ত করা। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা আরও বেশি সংখ্যায় এসব ব্যবসায় যুক্ত হন এবং আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবস্থা তৈরি করুন।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সাধারণ ভোক্তাদের কাছে ঢাকা মহানগরে ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরে ২০টি স্থানে ট্রাকে করে সাশ্রয়ী দরে টিসিবির ভোজ্যতেল ও মসুর ডাল বিক্রি চলছে। এ ছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের সরবরাহ করা চাল বিক্রি করছে টিসিবি। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, পাঁচ কেজি চাল ও তিন কেজি আলু কিনতে পারবেন।
প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ১০০ টাকা ও প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা। এ ছাড়া ক্রেতারা প্রতি কেজি আলু ৪০ ও চাল ৩০ টাকায় কিনতে পারবেন।
গতকাল সরেজমিন কারওয়ান বাজারে দেখা গেছে, টিসিবির ট্রাকের পেছনে ক্রেতাদের লম্বা লাইন। কম দরে পণ্য পাওয়ার আশায় সকাল থেকে নারী ও পুরুষ আলাদা লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তাদেরই একজন সাহেরা বেগম। সমকালকে তিনি বলেন, বাজারে আলুর দাম বেশি। কম দামে আলু কিনতে পারায় গরিবদের উপকার হবে।