নির্বাচনের দিনসহ ভোটের আগের ও পরের দিন ছুটি ঘোষণা করা, কোনো আসনে ৫০ শতাংশের কম ভোট পড়লে সেই আসনে পুনরায় ভোট নেওয়াসহ নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের কাছে ১৭ দফা প্রস্তাব দিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ (নুর-রাশেদ)। এসব প্রস্তাব কমিশনের কাছে জমা দিয়েছে দলটি।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সংস্কার কমিশনে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ রাশেদ খাঁন এ তথ্য জানান। রাশেদ খান বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল আজ। কিন্তু তাদের আজকে অফিসে এসে পাওয়া যায়নি। তাই আমরা ইমেইলের মাধ্যমে জমা দিয়েছি।

দলটির অন্যান্য প্রস্তাবগুলো হলো- সংবিধানে নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করাসহ রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা; আওয়ামী লীগ ও তার দোসরদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করা; নির্বাচন কমিশনের সদস্য সংখ্যা বাড়ান। সেক্ষেত্রে ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পাশাপাশি ৮ বিভাগে ৮ জন নিয়োগ দেওয়া;  নির্বাচন কমিশন গঠনের বর্তমান বিতর্কিত সার্চ কমিটির প্রক্রিয়া বাতিল করে রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটি গঠনে আইন প্রণয়ন করা; দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ এবং উচ্চকক্ষে ১০০ ও নিম্নকক্ষে আসন ৩০০। নিম্নকক্ষে সরাসরি ভোটে এবং উচ্চকক্ষে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলসমূহের প্রাপ্তভোটে সংখ্যানুপাতিক হারে আসন নির্ধারণ করা; সংরক্ষিত আসন বাতিল করে সকল আসনে সরাসরি নির্বাচন। স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ, অর্থপাচারকারী, মাফিয়াদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করার বিধান যুক্ত করা; ইভিএম ব্যবস্থা বাতিল করাসহ প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রদানসহ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার বিধান যুক্ত করা; নির্বাচনে কোনো প্রার্থী, ভোটার, সমর্থক, প্রার্থীর এজেন্ট নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার, নির্বাচন বিঘ্নিত হয় এমন অনিয়ম, বিশৃঙ্খলায় জড়িত হলে ১০ বছরের জেল ও ১ কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা। জেলা জজদের নিয়ে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং ৬ মাসের মধ্যে নির্বাচনী  ট্রাইব্যুনালে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগের নিষ্পত্তি করা; রাজনৈতিক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্বাচনে প্রিসাইডিং ও সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার না করা। ভোট গ্রহণের অন্তত ৭ থেকে ১০ দিন পূর্বে সম্ভাব্য চূড়ান্ত ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তালিকা প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিকট প্রদান করা; প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা অন্যান্য কমিশনারগণের নির্বাচনে কোনো পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা প্রমাণিত হলে ১০ বছরের জেল এবং ১০ কোটি কোটি টাকা জরিমানার বিধান রাখা; নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পুরোপুরি নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা এবং নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ভোটে অনিয়ম, কারচুপি ও ক্ষমতার অপব্যবহারে শাস্তিপ্রাপ্ত কাউকে আদালতের অনুমতি ব্যতীত শাস্তি প্রত্যাহার না করা; জাতীয় পরিচয়পত্রের সকল কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনে ন্যস্ত করার পাশাপাশি এর নিরাপত্তা বিধানে নির্বাচন কমিশনকে প্রয়োজনীয় সকল সহযোগিতা প্রদান করা; নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন প্রাপ্তিতে ন্যূনতম জেলা, উপজেলায় কার্যক্রম নেই এমন নামসর্বস্ব দলের নিবন্ধন করে রাজনীতিতে কালো টাকা, পেশীশক্তির হ্রাস ও দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে প্রকৃত রাজনৈতিক দলসমূহের জন্য বাৎসরিক বরাদ্দ প্রদান। নির্বাচনে প্রার্থীদের পোস্টার ছাপিয়ে দেওয়া এবং গণমাধ্যমে প্রচারণার ব্যবস্থা করা; গুরুতর অনিয়ম, কেন্দ্র দখলসহ নৈরাজ্যকর অনিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ভোট গ্রহণ বন্ধ করতে পারবেন। একইভাবে যেকোন নির্বাচন বাতিল ও স্থগিত করার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের থাকবে এবং আরপিওতে নির্বাচনকালীন সময়ে সামরিক বাহিনীকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অন্তর্ভুক্ত করাসহ নির্বাচনী কর্মকর্তা বিশেষ আইন ১৯৯১-এ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্ত করে তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আনয়ন করা।