অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
পাঁচবছরের শিশু- ঝোপে টেনে নিয়ে গেল কারা!
আধফোটা কুঁড়িও জানে, তুতোহাত নিরাপদ নয়!
চ্যানেলে চ্যানেলে সভা-আয়োজন: কাদা ছুড়ে মারা!
এলইডি-স্ক্রিনের-কাচে বিদ্বজ্জনের সে কী ভয়!
…‘গণধর্ষণের পরে শ্বাসনালি রোধ করে খুন’!…
শিশুর মৃত্যুর হার মুহূর্তে-মুহূর্তে বাড়ে রোজ!
সাম্প্রদায়িকতার প্রতিবাদে আজ মিছিলে হাঁটুন!…
রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কাল রাষ্ট্রপতির প্রীতিভোজ!
২
পূর্ণচ্ছেদ
তৈমুর খান
তোমার মুকুট উজ্জ্বল হয়ে ওঠে
আমার অশ্রুর নদী বয়ে যায়
যদিও নদীর পাশে মৃত বাল্যকাল
বারবার জেগে উঠতে চায়-
আমি ওকে ফেরাতে পারি না।
এখন হাওয়া নেই
ক্লান্ত দুপুর বিষণ্ণতা ফেরি করে
দরজায় দাঁড়াই-
তুমি পেরিয়ে যাও অনেক উৎসবের মাঠ
অনেক হাততালির ফোয়ারা
তোমার ছায়ায় স্বপ্নের জন্ম হয়
তোমার সৌন্দর্যে বসন্তকাল হাসে
তোমার বর্ণনায় কেবল উচ্ছ্বাস
সব বাক্যের পাশে পূর্ণচ্ছেদ দিতে দিতে
আমিও একটি পূর্ণচ্ছেদ হয়ে যাই।
৩
উথালপাতাল
দেবারতি ভট্টাচার্য
সকাল থেকেই মেঘেরা সজীব সক্রিয়
বারবার আকাশটাকে ঘিরে ফেলছে
মনে হয় কোন উৎসব আছে ওদের
তারই সাজসরঞ্জাম চলছে
আজ রবিবার তবু রবির দেখা নেই
এমনদিনে ঘরে থাকতে মন চায় না
আবার চায়ও –
নদীর কূল ছাপিয়ে, দু’চোখের কোল ছাপিয়ে
ভারী বর্ষণ, উথালপাতাল
হাওয়ায় ভাসে গাঙচিলেদের গান
ভিজে শালিক জানলার পাশে একলা বসে
চুপ করে শোনে বৃষ্টির সংলাপ
তবে কি আজ ওর মনখারাপ!
অনেক ক’টা বর্ষা পেরিয়ে গেল
ওই বুঝি বার্তা এলো মেঘলা খামে
শালিকের দু’চোখে জল দেখে ভাবি
দূরে কোথাও হয়তো বা আজও বৃষ্টি নামে …
৪
গোলমাল
অমিত কুমার দে
ঘরের সংজ্ঞা লিখতে গিয়ে বাহির লিখে ফেলি
বাহির লিখতে গিয়ে ঘর লিখি
একটা তীব্র চাওয়া লিখতে গিয়ে
অনায়াসে সন্ন্যাস লিখে ফেলি
আর না চাইবার রাস্তা লেখার সময়
কীভাবে যে চাইবার সড়ক তৈরি হয়ে যায়
এমনই গোলমালের মধ্য দিয়ে ইদানীং
আমার অক্ষরেরা হাঁটে।
নদীর মানে লিখতে গিয়ে বৃষ্টি লিখে ফেলি
বৃষ্টি লিখতে গিয়ে ছোট বড় পাথর লিখি
একটা শুনসান প্রান্তর লিখতে গিয়ে
গাছপালা ভর্তি গহন জঙ্গল লিখে ফেলি
আর না ফিরবার চরম চিঠিটি লিখে ফেলেই
কীভাবে যে আরো ঘন হয়ে আসি
এমনই গোলযোগের মধ্য দিয়ে ইদানীং
আমার বাক্যগুলো হাঁটে।
৫
আকাশের দরজা
তন্ময় দেব
যার মেঘ চুরি গেছে সে অভিযোগ করবে কোথায়?
কারণ যিনি অভিযোগ লেখেন তারও প্রিয় মেঘটি
নিরুদ্দেশ বহুদিন…
সবাই তাই আকাশের দরজা খুলে রাখে আর
অপেক্ষা করে মেঘেদের ফিরে আসার
দিন ফুরিয়ে রাত নামে। নক্ষত্রেরা ঘুম থেকে জেগে ওঠে,
আর তাদের কাচের বাক্সে ভরে মেঘেদের খুঁজতে বেরোয়
কিছু লোক…
বাকিরা বাধা দেয়। বলে, যেও না, যেও না কিন্তু তাঁরা
কোনো বারণ শোনে না…
তারপর মেঘ খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একদিন মানুষগুলো
আকাশের খোলা দরজা দিয়ে খসে পড়ে পৃথিবীর বুকে
৬
হা-হুতাশের বারুদ আলোয়…
সুকান্ত মণ্ডল
অস্থির রাত কাটে চুল্লির তাপে
বিস্ফোরণ কিংবা কোলাহলে
ক্ষুদে জীবেরা তর্জমা করে যন্ত্রণা-বিতান
সহানুভূতি ও সহমর্মিতার ধারালো প্রান্ত
মিশে গেছে ইতিহাসের অতলে
শহুরে হা-হুতাশের বারুদ আলোয়
ঝলসে ওঠে রাত্রির কালো ছায়া
রংধনু পতাকা হাতে আমি উদাসীন বালক
রক্তবৃষ্টিতে লাল আমার সমস্ত রঙিন
তবু একটা নতুন স্নিগ্ধ-শীতল সকালে
নিজেকে বিলোতে চাই সহানুভূতির ওপারে
৭
আষাঢ়ের ঘাস
কল্যাণ দে
তোমার অহংকারী চোখ ছুঁয়ে যায়
আমার ভাঙা প্রাচীর বুক
ধুকপুক অজস্র গ্রামের অস্থি খোঁজে
উত্তুঙ্গ পাহাড়
তরাইয়ের পাদপীঠে নমনীয় জঙ্ঘার খাদে
প্রস্ফুটিত পদ্মের পরাগ
একবার জলছবি ভেঙে এস নগ্ন বেলায়
কুঠারের হাতলে চেপে
বৃক্ষের সংসার থেকে ছিনিয়ে নিয়ে এসো
প্রতিমা নিবাস
বসে আছি প্রতিদিন জিরাফের গলায়
নীলিমার নীল ডিম ভেঙে
গড়িয়ে নামবে তুমি স্রোতস্বিনী নারী
উদ্ভিন্ন যৌবন রংয়ে রাঙা হোক প্রিয়তম