অনেকটা লাগামহীন হয়ে পড়েছে সবজির বাজার। গত চার-পাঁচ দিনে বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে কোনো কোনো সবজির দর। হাতেগোনা তিন-চারটা ছাড়া বাকি সবজিগুলোর দাম কেজিতে একশ টাকার ওপরে। ব্যবসায়ীদের যুক্তি, সাম্প্রতিক টানা বৃষ্টিতে উৎপাদন এলাকাগুলোর ক্ষেতে পানি জমে গেছে। তাতে অনেক সবজি গাছ মরে গেছে। তবে গত দুই-তিন দিন সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিভিন্ন মহাসড়কে যান চলাচল সীমিত থাকায় সরবরাহ একেবারেই কমে গেছে। এ জন্য সবজির দাম বাড়ছে। সরবরাহ না বাড়লে বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন কোনো কোনো সবজি ব্যবসায়ী।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার বিভিন্ন খুচরা বাজার ঢ্যাঁড়সের কেজি বিক্রি হয় ৪০ টাকার আশপাশের দরে। গতকাল মঙ্গলবার কারওয়ান বাজারেই প্রতি কেজি ঢ্যাঁড়স বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮০ টাকা দরে। সে হিসাবে ৫ দিনে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে সবজিটির দাম। মহাখালী, শান্তিনগর, হাতিরপুল এলাকার কাঁচাবাজারে কেউ কেউ ৯০ টাকাও হাঁকছেন ঢ্যাঁড়সের কেজি।
শুধু ঢ্যাঁড়স নয়, এভাবে বেশ কয়েকটি সবজির বিক্রি হচ্ছে দ্বিগুণের কাছাকাছি দরে। গত শুক্রবার উচ্ছের কেজি বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। গতকাল সবজিটির দর ছুঁয়েছে ১৪০ টাকা। প্রতিকেজি বরবটি ও কচুরমুখী ১০০ থেকে ১১০, বেগুন ১০০ থেকে ১২০, কাঁকরোল ৯০ থেকে ১০০, গাজর ১৮০ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। টমেটোর কেজি কিনতে খরচ হবে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা। চিচিঙ্গা, ধুন্দল ও ঝিঙ্গার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। সপ্তাহখানেক আগে সবজি তিনটি বিক্রি হয় যথাক্রমে ৪০ থেকে ৪৫ ও ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে।
মূলা এখন সারা বছরই কমবেশি উৎপাদন হয়। মৌসুম ছাড়া সাধারণত দাম একটু বেশি থাকে। তবে এখন দাম লাগামছাড়া। মূলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার আশপাশের দরে। কিছুটা কমে মিলছে পোটল ও পেঁপে। তারপরও সবজি দুটি কিনতে ক্রেতাদের কেজিতে গুনতে হবে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। ছোট আকারের একটি লাউয়ের দাম রাখা হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা।
অথচ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এসব সবজির উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ৮ থেকে ১৯ টাকার মধ্যে। সংস্থাটির প্রতিবেদনের তথ্যমতে, গত এক মাসে টমেটোর কেজিতে দর বেড়েছে ১২৪ শতাংশ। এছাড়া উচ্চের কেজিতে প্রায় ৮৫, ঢ্যাঁড়সের ৬৭, বেগুনের ৫৪, চিচিঙ্গার ২৭, গাজরের ২১, পোটলের ২২, লাউয়ের ৩৬ শতাংশ দর বেড়েছে। সপ্তাহখানেক আগে কাঁচামরিচের কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন দর কমতির দিকে। গতকাল ঝালজাতীয় পণ্যটির কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
গতকাল কয়েকটি বাজার ঘুরে অন্য সময়ের তুলনায় সবজির সরবরাহ কিছুটা কম দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচামাল মজুত করে রাখার কোনো সুযোগ নেই। দাম নির্ভর করে পুরোপুরি সরবরাহ বা জোগানের ওপর। কারওয়ান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মিলন মিয়া সমকালকে বলেন, দুই দিন ধরে বাজারে সবজির ট্রাক আসছে কম। এক ট্রাক মাল এলে অনেক ব্যবসায়ী ভিড় করেন। এ জন্য দর বাড়িয়ে দেন ব্যাপারীরা (পাইকার)। ফলে খুচরা বাজারেও দাম বেড়ে যায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার সমকালকে বলেন, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় জমির ফসল তলিয়ে গেছে। তাতে মরে গেছে অনেক সবজি গাছ। এ কারণে কয়েকদিন ধরে বাজারে সবজির সরবরাহ কম।
শিগগিরই বাজার স্বাভাবিক হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এ ব্যবসায়ী বলেন, এতদিন কিছু সবজি এলেও এখন বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে রাস্তা বন্ধ আছে। দুই-তিন দিন ধরে এ পরিস্থিতি থাকায় সরবরাহ আরও কমেছে। এতে সবজির বাজার আরও বাড়ল।
এভাবে লাগামহীন হওয়ায় বেশ বিপদে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজার থেকে ৮০ টাকায় এক কেজি ঢ্যাঁড়স কেনার পর বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুল হাসান সমকালকে বলেন, মগবাজারে দর বেশি থাকায় কারওয়ান বাজারে এলাম বাজার করতে। এখানেও দেখি চড়া দাম।