ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলায় লন্ডভন্ড হয়ে গেছে ঘরবাড়ি। মাথা গোঁজার মতো জায়গা নেই আশ্রয়কেন্দ্রে। তা ছাড়া গাজার কোনো স্থানই ঝুঁকিমুক্ত নয়। এ অবস্থায় যাওয়ার জায়গা না পেয়ে হাজারো ফিলিস্তিনি পরিত্যক্ত একটি কারাগারকে বেছে নিয়েছেন। চোর, খুনিসহ কুখ্যাত অপরাধীদের বন্দি রাখার কক্ষগুলোই এখন শেষ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে বাস্তুচ্যুত এসব অসহায় মানুষের।
গাজা উপত্যকার দক্ষিণের শহর খান ইউনিসের কেন্দ্রীয় সংশোধন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পরিত্যক্ত) আশ্রয় নিয়েছেন ইয়াসমিন আল দারদাসি ও তাঁর পরিবার। ইসরায়েলি হামলায় ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তারা। ইয়াসমিন বলেন, ঘর ছেড়ে পালানোর পর তারা এক দিন গাছের নিচে কাটান। পরে পরিত্যক্ত কারাগারটিতে আশ্রয় নেন। এখন সেখানকার প্রার্থনাকক্ষে বাস করছেন। এখানে সূর্যের তাপ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, এর চেয়ে বেশি কিছু না।
তবে এই কারাগারে আশ্রয় নেওয়া সবারই ভয়, সেখান থেকেও যে কোনো দিন উচ্ছেদ হতে পারেন তারা। ওই কারাগারে আশ্রয় নেওয়া হানা আল–সাইয়েদ আবু মুস্তাফা নামের আরেক ব্যক্তি জানিয়েছেন, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় তাঁকে গত ৯ মাসে ছয়বার আশ্রয়হারা হতে হয়েছে।
এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৪ জায়গায় গণহত্যা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ৪১ জন নিহত এবং ১০৩ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে দখলদার দেশটির নির্বিচার হামলায় অন্তত ৩৯ হাজার ২৫৮ জন নিহত এবং ৯০ হাজার ৫৮৯ জন আহত হয়েছেন। এর বাইরে কেন্দ্রীয় গাজার দেইর এল–বালাহে আহত ও বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয় নেওয়া খাদিজা স্কুলে গতকাল শনিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া খান ইউনিসে নিহত হয়েছেন ২৩ ফিলিস্তিনি।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা বলেছে, শত শত ফিলিস্তিনি খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলের তীব্র হামলার মধ্যে আটকা পড়েছেন। সেখানে উদ্ধারকারী দলকেও ঢুকতে দেয়নি ইসরায়েলি বাহিনী।
এবার খান ইউনিসের দক্ষিণাংশের এলাকাগুলো থেকে ফিলিস্তিনিদের সাময়িকভাবে সরে আল মাওয়াসি মানবিক এলাকায় যেতে বলেছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। শনিবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি বাহিনী বলেছে, বেসামরিক ফিলিস্তিনিরা সরে গেলে সেখানে ‘জোরালো অভিযান’ চালাতে পারবে তারা।