ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৃহস্পতিবার বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী কমলা হ্যারিস বলেছেন, তিনি ‘আর চুপ থাকবেন না’। গাজায় ফিলিস্তিনিদের দুর্দশা নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। বৃহৎ অর্থে এটা অনেকটা স্বাধীনতা ঘোষণার মতো। তবে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমলাকে স্পষ্ট করতে হবে বিজয়ী হলে তিনি আসলে কী পদক্ষেপ নেবেন; পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে কিনা।
শনিবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রায় চার বছর ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কাজ করেছেন কমলা। অনেকটা হঠাৎই তিনি নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এ অবস্থায় বাইডেনের ছায়ার বাইরে এসে নির্বাচনী প্রচারণায় কমলাকে তাঁর নিজের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরতে হবে। তিনি যেসব কথা বলবেন, তার সবই পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হবে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ফিলিস্তিনের অধিকারকর্মীরা জানতে চান, কমলা হ্যারিসের ‘চুপ থাকবেন না’ বক্তব্য আসলে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির জন্য কী বার্তা বহন করছে। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর তিনি তো ইসরায়েলকে অব্যাহতভাবে সমর্থন দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইসরায়েলের প্রতি নিঃশর্ত সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দেওয়ার যে মার্কিন নীতি, তা থেকে সরে না এসে শুধু ফিলিস্তিনিদের প্রতি সহমর্মিতা দেখালেই মার্কিন ভোটারদের আকৃষ্ট করা যাবে না। ডেমোক্রেটিক পার্টির ভোটাররা ইসরায়েলের প্রতি বাইডেন প্রশাসনের অব্যাহত সমর্থনের কারণে সরে গিয়েছেন।
শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী ইমান আব্দেলহাদি বলেন, গাজায় শিশুহত্যা বন্ধের প্রকৃত অঙ্গীকার ছাড়া কেবল সহানুভূতি প্রকাশে কিছু হবে না। ফিলিস্তিনিদের ওপর চালানো নির্মমতার দায় যুক্তরাষ্ট্রেরও আছে। তিনি বলেন, ‘যার মাথায় আপনি গুলি করছেন, তার জন্য আবার সহানুভূতি জানাচ্ছেন! এসব সহানুভূতি আমাদের প্রয়োজন নেই। আমরা চাই অস্ত্র ও অর্থ সরবরাহ যেন বন্ধ হয়, যার মাধ্যমে লোকজন হত্যার শিকার হচ্ছে। এমনটা হলে তা হবে প্রকৃত সহানুভূতির বহিঃপ্রকাশ।’
গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করেন কমলা। পরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি ইসরায়েলের ‘আত্মরক্ষার অধিকার’ সব সময় নিশ্চিত করার বিষয়েও জানান। এর পরই তিনি গাজার মানবিক দুর্দশার প্রসঙ্গে কথা বলেন।
এরই মধ্যে কমলাকে ‘ইহুদিবিদ্বেষী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্প। দক্ষিণ ফ্লোরিডায় শুক্রবার এক সমাবেশে তিনি বলেন, কমলা ইহুদিদের পছন্দ করেন না; ইসরায়েলকে পছন্দ করেন না। ট্রাম্প কমলাকে ইহুদিবিদ্বেষী বলে আক্রমণ করলেও তাঁর স্বামী ডগলাস এমহফ একজন ইহুদি।
বক্তব্যে কমলার ব্যাপক সমালোচনা করেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে কমলার নির্বাচনী উপদেষ্টা পেট বুটেজেজ বলেন, ট্রাম্পের কথাবার্তায় বোঝা যাচ্ছে তিনি কমলাকে ভয় পেয়েছেন। এর আগে কমলার সঙ্গে ১০ সেপ্টেম্বর নির্ধারিত একটি বিতর্ক থেকে সরে গেছেন ট্রাম্প। প্রথম বিতর্কটি গত ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাইডেন স্পষ্টত ট্রাম্পের কাছে ধরাশায়ী হন। এর পরই বাইডেনের প্রার্থিতা থেকে সরে দাঁড়ানোর দাবি জোরালো হয়।
আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে দিন দিন জনসমর্থন বাড়ছে কমলার। আগস্টে ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে কমলাকে দলের মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে।