ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরেরও কিছুটা পরিবর্তন হয়। নতুন মৌসুমে শরীরের জন্য নানা স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। যেমন— সর্দি-কাশি, অ্যালার্জি বৃদ্ধি পেতে পারে। তাই শীতকালে শরীর চাঙা রাখতে সিজনাল খাবার আমাদের সুস্থ ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক হতে পারে। সে কারণে সিজনাল খাবারগুলো এমন সব পুষ্টিকর উপাদানে পূর্ণ, যা মৌসুম পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শরীরের প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে থাকে। এমনকি আপনার ইমিউন সিস্টেমও শক্তিশালী রাখতে সাহায্য করে।
শীতকালীন শাকসবজি—
শীতকালীন ঋতুতে শাকসবজির অভাব হয় না। যেমন— মিষ্টি আলু, গাজর ও বিট। এসব ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেলে সমৃদ্ধ উৎস। বিশেষ করে ভিটামিন ‘এ’, যা ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই শাকসবজিগুলো অ্যান্টি-অক্সিডেন্টেও ভরপুর, যা আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস ও প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
এ ছাড়া শাকসবজি যেমন— পালংশাক, কলার্ড গ্রিনস খাওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ শাকসবজিগুলোতে আয়রন, ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘কে’র সমৃদ্ধ উৎস। এ ভিটামিনগুলো ত্বক, হাড় এবং শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম বজায় রাখতে সাহায্য করে। এগুলো স্যুপ, সালাদ হিসেবে খেলে আপনার শরীরকে শীতের পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে সহায়ক করবে।
এ ছাড়া শীতকালীন সবজি কুমড়া। এটি পুষ্টির সমৃদ্ধ উৎসও। কুমড়া ভিটামিন ‘এ’র সমৃদ্ধ উৎস, যা ত্বক ও দৃষ্টিশক্তি সুস্থ রাখতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। এটি পটাসিয়াম ও ফাইবার সমৃদ্ধ, যা রক্তচাপ ও পাচনতন্ত্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কুমড়ার অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো শীতকালে প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
সাইট্রাস ফল–
সাইট্রাস আপনার ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য। এই ফল যেমন— কমলা, আঙুর ও লেবু ভিটামিন ‘সি’র সমৃদ্ধ উৎস, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সহায়ক। এ ফলগুলো বায়োফ্ল্যাভোনয়েডসে সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমাতে ও সামগ্রিক ইমিউন প্রতিক্রিয়া উন্নত করতে সাহায্য করে। সাইট্রাস ফলগুলো প্রতিদিন খাওয়া অথবা গরম পানিতে মিশিয়ে খাওয়া মৌসুমের সর্দি ঠেকাতে কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে।
আবার আপেল হলো একটি সুস্বাদু ফল, যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। এটি প্রচুর ফাইবারে পূর্ণ, যা হজমে সহায়ক ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। আপেল খেলে আপনার গ্যাস্ট্রো-ইন্টেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট সঠিকভাবে কাজ করবে এবং চর্বি কমাতেও সহায়ক ভূমিকা রাখে। শীতকালে আপেল খাওয়া হজমের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এ ছাড়া শীতকালে শরীরকে শক্তি দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাট প্রয়োজন। বাদাম ও বীজ সুস্থ ফ্যাটের জন্য প্রয়োজন। আর বাদাম, আখরোট ও ফ্ল্যাক্সসিডস ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ, যা প্রদাহ কমাতে ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। এগুলো ফাইবার ও প্রোটিনে পূর্ণ, যা সারা দিন আপনাকে পূর্ণ রাখে এবং শক্তি দেয়।
আরও আছে হলুদ, আদা ও রসুন। সিজনাল পরিবর্তনের সময় স্বাস্থ্য বজায় রাখতে এর জুড়ি মেলা ভার। হলুদ, আদা ও রসুনের মতো মসলা শরীরের জন্য অপরিহার্য। এই উপাদানগুলো অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণে পরিপূর্ণ, যা সংক্রমণ ও রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে। আর আদা ও রসুন হজমে সহায়ক এবং হলুদের কিউরিকুমিন যৌগ শীতকালে গাঁটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
এ ছাড়া শীতকালে প্রায়শই শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায়। তাই পেয়ারা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। পেয়ারা পানীয় উপাদান সমৃদ্ধ এবং এটি শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। আর এটি ফাইবার ও ভিটামিন ‘সি’র ভালো উৎস, যা কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ এবং ইমিউন সিস্টেম বাড়াতে সাহায্য করে।
আমাদের স্মরণ রাখা উচিত— আবহাওয়ার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আপনার শরীরের স্বাস্থ্যকে সমর্থন দিতে সিজনাল খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। শীতকালে এ খাবারগুলো খাওয়া শুধু আপনার শরীরকে পুষ্টি দেয় না, বরং তা শীতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকেও আপনাকে রক্ষা করে। সুতরাং এই সিজনাল খাবারগুলো আপনার প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করুন এবং নিজেকে সুস্থ থাকুন!