মুমিনের চূড়ান্ত সফলতা হলো, আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি। একজন মুসলমানের জীবনের একমাত্র লক্ষ্যও হলো, মহান আল্লাহকে খুশি করা। জাহান্নাম থেকে নাজাত পেয়ে জান্নাতে প্রবেশের উপযুক্ত হওয়া। তাইতো প্রতিটি সচেতন মুমিন সর্বদা মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকার চেষ্টা করে। তাকওয়া অবলম্বন করে। কিভাবে আল্লাহকে পাওয়া যায়, জাহান্নামের ভয়াবহ আগুন থেকে মুক্তি পাওয়া যায়-তা নিয়ে চিন্তা করে।
সাহাবায়ে কেরামের মাঝে এই চিন্তা প্রকট ছিল, তাইতো তাঁরা সুযোগ পেলেই নবীজি (সা.)-কে এসব বিষয়ে প্রশ্ন করতেন। তেমনি একজন সাহাবি হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.)। তিনিও একদিন নবীজি (সা.)-কে এমন একটি প্রশ্ন করেন, যার উত্তরে নবীজি (সা.) উম্মাহকে মুক্তির গুরুত্বপূর্ণ পথগুলো একসঙ্গে বাতলে দিয়েছেন।
মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) বলেন, আমি কোনো এক ভ্রমণে নবী (সা.)-এর সঙ্গে ছিলাম। একদিন যেতে যেতে আমি তার নিকটবর্তী হলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! এমন একটি কাজ সম্পর্কে আমাকে জানিয়ে দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে এবং জাহান্নাম থেকে দূরে রাখবে। তিনি বলেন, তুমি তো আমাকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন করেছো। তবে সেই ব্যক্তির জন্য এ ব্যাপারটা অতি সহজ যে ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা তা সহজ করে দেন। তুমি আল্লাহ তাআলার ইবাদত করবে, কোনো কিছুকে তাঁর সাথে শরিক করবে না, নামাজ প্রতিষ্ঠা করবে, জাকাত দিবে, রমজানের রোজা রাখবে এবং বাইতুল্লাহর হজ করবে।
তিনি আরো বলেন, আমি কি তোমাকে কল্যাণের দরজাসমূহ সম্পর্কে বলে দিব না? রোযা হলো ঢালস্বরূপ, দান-খয়রাত গুনাহসমূহ বিলীন করে দেয়, যেমনিভাবে পানি আগুনকে নিভিয়ে দেয় এবং কোনো ব্যক্তির মধ্যরাতের নামাজ আদায় করা। তারপর তিনি এই আয়াতটি তিলাওয়াত করেন ‘তাদের দেহ পাশ বিছানা থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং তারা তাদের প্রভুকে ডাকে আশায় ও ভয়ে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দান করেছি তা থেকে তারা ব্যয় করে। কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কি লুকিয়ে রাখা হয়েছে তাদের কৃতকর্মের পুরস্কারস্বরূপ।’ (সুরা সিজদা, আয়াত : ১৬- ১৭)
তিনি আবার বলেন, আমি কি সমস্ত কাজের মূল, স্তম্ভ ও সর্বোচ্চ শিখর সম্পর্কে তোমাকে অবহিত করবো না? আমি বললাম, হ্যাঁ, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি বলেন, সমস্ত কাজের মূল হলো ইসলাম, স্তম্ভ হলো নামাজ এবং সর্বোচ্চ শিখর হলো জিহাদ। তিনি আরো বলেন, আমি কি এসব কিছুর সার সম্পর্কে তোমাকে বলব না? আমি বললাম, হ্যাঁ, হে আল্লাহর রাসুল! তিনি তাঁর জিহ্বা ধরে বলেন, এটা সংযত রাখ। আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর নবী! আমরা যে কথাবার্তা বলি এগুলো সম্পর্কেও কি পাকড়াও করা (জবাবদিহি) হবে? তিনি বলেন, হে মুয়াজ! তোমার মা তোমাকে হারিয়ে ফেলুক! মানুষকে শুধুমাত্র জিহ্বার উপার্জনের কারণেই অধোমুখে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ২৬১৬)
মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে উক্ত কাজগুলো বেশি বেশি করার তাওফিক দান করুন। পরিপূর্ণ ইখলাস দান করুন। আমিন।