দাগছোপহীন ত্বক সবারই কাম্য। কিন্তু অযত্ন, দূষণসহ নানা কারণে কমে যায় ত্বকের উজ্জ্বলতা, সেই সঙ্গে দেখা দেয় অপ্রত্যাশিত দাগছোপ। এমন সমস্যার সমাধান ও প্রতিরোধে ত্বকের যত্নে এই চারটি উপাদানের যেকোনো একটি যোগ করলেই দূর হবে ত্বকের দাগছোপ।
দূষণের প্রভাব, হরমোন পরিবর্তন, মেছতা, ব্রণ, কাটাছেঁড়া বা ত্বকের প্রদাহের কারণে। বর্তমানে হাইপারপিগমেন্টেশন বা দাগছোপ ত্বকের অন্যতম বড় সমস্যা। এছাড়াও নানা কারণে ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন হতে পারে। আবার ত্বকের বয়স বাড়তে থাকলেও কারও কারও হাইপারপিগমেন্টেশন সমস্যা দেখা দেয়। যাঁরা এ সমস্যায় ভুগছেন, তাঁদের ত্বকের যত্নের রুটিনে টাইরোসিনেজ প্রতিরোধকযুক্ত পণ্য রাখা উচিত। টাইরোসিনেজ হলো মেলানিন তৈরির প্রয়োজনীয় এনজাইম। হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে চাইলে আরবিউটিন, ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি–জাতীয় টাইরোসিনেজ প্রতিরোধক ব্যবহার করলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যাবে।
আরবিউটিন
সময়ের জনপ্রিয় স্কিনকেয়ার উপাদান আরবিউটিন। ত্বকের দাগছোপ বা হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করতে এটি ডার্মাটোলজিস্টদের বেশ পছন্দের একটি উপাদান। আরবিউটিন দিয়ে এখন অনেক ক্রিম, সিরাম ও লোশন তৈরি হচ্ছে। এটি সংগ্রহ করা হয় বিয়ারবেরি, ব্লুবেরি ও নাশপাতিগাছ থেকে। ত্বকের দাগছোপ কমানোর পাশাপাশি ব্রণ ও বয়সের ছাপ দূর করার মতো ক্ষমতা আছে এই উপাদানের। ত্বকে হাইপারপিগমেন্টেশন বেশি থাকলে দিন ও রাতে ত্বকের যত্নের রুটিনে আরবিউটিন সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। ধৈর্য সহকারে টানা দুই মাস ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে। আরবিউটিনের কার্যক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যায় কোজিক অ্যাসিড, ভিটামিন সি ও নায়াসিনামাইডের সঙ্গে ব্যবহার করলে।
ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড
দুই বছর আগেও এই উপাদানের নাম বেশি মানুষ জানত না। ত্বকের হাইপারপিগমেন্টেশন কমানোর জন্য বেশ কার্যকর ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড। সূর্যের আলোর জন্য ও ব্রণ সেরে যাওয়ার পর ত্বকে যে কালো দাগ দেখা দেয়, তা কমাতে ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড সিরাম ব্যবহার করতে পারেন। এটি মেছতাও কমাতে পারে। এ ছাড়া ত্বক উজ্জ্বল ও ত্বকের ব্যারিয়ার মজবুতের জন্য ট্রানেক্সামিক অ্যাসিড ব্যবহার করলে ভালো উপকার পাওয়া যাবে।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
টিকটকের সবচেয়ে হাইপড স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট হলো দ্য অর্ডিনারি ব্র্যান্ডের গ্লাইকোলিক অ্যাসিড এক্সফোলিয়েটিং টোনার। একে নিয়ে মাতামাতি হবে নাই–বা কেন! এই আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড একই সঙ্গে ত্বক ও চুলের অনেক সমস্যা দূর করতে পারে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড খুব কোমলভাবে ত্বকের মৃত কোষ সরাতে পারে। এভাবেই হাইপারপিগমেন্টেশন কমাতে সাহায্য করে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। সপ্তাহে তিনবার রাতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড টোনার ব্যবহার করলেই চলবে।
ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড
ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড একটি শক্তিশালী অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট। ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভিটামিন সি ইউভি রশ্মি, দূষণ ও অন্যান্য পরিবেশগত চাপের কারণে ত্বকে যে ক্ষতি হয়, তা প্রতিরোধ করতে পারে। এটি কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতেও সাহায্য করে ত্বকে বয়সের ছাপ দূর করে। সানস্পট, মেছতা বা ব্রণের দাগের মতো হাইপারপিগমেন্টেশন দূর করার জন্য বেশ কার্যকর ভিটামিন সি। বেশি উপকার পেতে চাইলে সকালে ভিটামিন সি সিরাম ও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন। রাতেও এই সিরাম ব্যবহার করা যায়। ভিটামিন সি–যুক্ত ময়েশ্চারাইজারও ত্বকের দাগছোপের সমস্যা দূর করতে পারে। তবে ভিটামিন সি আছে, এমন ত্বকের যত্নের পণ্য ব্যবহারের আগে অবশ্যই প্যাচ টেস্ট করা জরুরি। কারণ, অনেকের এই উপাদানে অ্যালার্জি থাকে। এ ছাড়া ভিটামিন সির ঘনত্ব কোনোভাবে ১০ থেকে ২০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না।
ত্বকের দাগছোপ কমাতে শুধু এ চারটি উপাদান ব্যবহার করলেই চলবে না, সঙ্গে অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে সানস্ক্রিন ব্যবহার করে যেতে হবে। নইলে সব কষ্ট মাঠে মারা যাবে।
ছবি: পেকজেলসডটকম