সর্বশেষ
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাতের
এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: নাহিদ ইসলাম
দেরি করে পৌঁছানোয় স্বপ্নভঙ্গ ওদের
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
নির্বাচনের জন্য এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি
বিলাসবহুল অফিস ও বন্দর কমিটি নিয়ে যা বললেন হান্নান মাসউদ
শাহজাদপুরে যুবদল কর্মীকে হত্যার অভিযোগ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া প্রমাণ করে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়: দুদু
‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠিত

থ্যালাসেমিয়া কতটা উদ্বেগের?

অনলাইন ডেস্ক

রক্তের রোগ থ্যালাসেমিয়ার বাহকের হার যে বিশ্বের অধিকাংশ দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি তা হয়তো আমাদের অনেকেরই জানা নেই বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সম্প্রতি প্রকাশিত জাতীয় থ্যালাসেমিয়া জরিপ২০২৪এর হিসেব অনুযায়ী দেশটির জনসংখ্যার মধ্যে ১১ দশমিক ভাগ মানুষ থ্যালাসেমিয়ার বাহক

বিশ্বের অন্য অনেক দেশ বা অঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যে থ্যালাসেমিয়া বাহকের এই হার তুলনামূলকভাবে বেশি। ইউরোপিয়ান জার্নাল অব হেমাটোলজিতে প্রকাশিত ২০২০ সালের এক গবেষণাপত্রে উঠে আসে যে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে থ্যালাসেমিয়া বাহকের হার সবচেয়ে বেশি।

ওই গবেষণাপত্রের হিসেব অনুযায়ী দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় থ্যালাসেমিয়া বাহকের হার সবচেয়ে বেশি মালয়েশিয়ায়, ১২ দশমিক ভাগ। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে মিশরে এই হার সবচেয়ে বেশি, ১০ ভাগ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন অঞ্চলগত বা জাতিগত বিশেষত্বের কারণে বিশেষ এলাকার মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার হার বেশি হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গুলজার হোসেন বলেন, ‘থ্যালাসেমিয়া শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক শব্দথ্যালাসাথেকে, যার অর্থ সমুদ্র। একসময় ধারণা করা হতো শুধু সমুদ্র তীরবর্তী অঞ্চলের মানুষেরই থ্যালাসেমিয়া হয়। ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার দেশগুলোর মানুষের মধ্যে এই রোগের হার সবচেয়ে বেশি ছিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের জনসংখ্যার মধ্যে থ্যালাসেমিয়া বাহকের হার কী পরিমাণ, তা নির্ণয়ে জাতীয় পর্যায়ে কোনো জরিপ হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় হওয়া কয়েকটি জরিপের বরাত দিয়ে তিনি ধারণা প্রকাশ করেন যে বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া বাহকের হার প্রায় ১৪ ভাগ হয়ে থাকতে পারে।

তবে থ্যালাসেমিয়া বাহক মানেই কিন্তু থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগী নন। তাহলে থ্যালাসেমিয়া বাহক আসলে কারা? থ্যালাসেমিয়া রোগীর সাথে তাদের পার্থক্য কী? থ্যালাসেমিয়া রোগটি সম্পর্কেই বা কী জানা যায়?

থ্যালাসেমিয়া কী?

থ্যলাসেমিয়া রক্তের এক ধরনের রোগ। জিনগত পরিবর্তনের ফলে রক্তের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনে অস্বাভাবিকতা তৈরি হয়ে মানুষ থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ হলে রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন প্রয়োজনের চেয়ে কম পরিমাণে হয় বা একেবারেই হয় না। এই হিমোগ্লোবিন ব্যবহার করে লোহিত রক্ত কণিকা দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গে অক্সিজেন সরবরাহ করে। শরীরের ভেতরে অক্সিজেন চলাচল কম হওয়ায় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তরা শারীরিকভাবে দুর্বল বোধ করে, তাদের ত্বক ফ্যাকাসে দেখায় তাদের শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা হয়।

এছাড়া অরুচি, জন্ডিস, বারবার সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া, পেট ব্যথা, শারীরিক বৃদ্ধিতে ধীরগতির মতো উপসর্গও দেখা যায় থ্যালাসেমিয়া হলে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের হিসেব অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতি বছর সাত হাজার শিশু জন্ম নেয় থ্যালাসেমিয়া নিয়ে। এই শিশুদের মধ্যে থ্যালাসেমিয়ার উপসর্গ দেখা দেয় জন্মের এক থেকে তিন বছরের মধ্যে।

থ্যালাসেমিয়া কেন হয়?

থ্যালাসেমিয়া হওয়ার কারণ ত্রুটিপূর্ণ জিন, যা রক্তে হিমোগ্লোবিন উৎপাদনকে প্রভাবিত করে। এটি একটি জন্মগত রোগ। অর্থাৎ, একজন শিশু জন্মের সময়ই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকে।

হেমাটোলজি বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন বলেন, ‘দুই জন থ্যালাসেমিয়া বাহক যদি চারটি সন্তান জন্ম দেন, তাহলে তাদের মধ্যে একজনের থ্যালাসেমিয়া রোগী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ ২৫ ভাগ সম্ভাবনা থাকে যে একজন সন্তান থ্যালাসেমিয়া রোগী হিসেবে জন্ম নিবে।

অর্থাৎ, থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশু যেই ত্রুটিপূর্ণ জিন নিয়ে জন্মগ্রহণ করেছে, ওই শিশুর বাবা মা মধ্যে আগে থেকে সেই ত্রুটিপূর্ণ জিনের উপস্থিতি ছিল। রকম ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত শিশুর বাবামাকে থ্যালাসেমিয়া বাহক বলা হয়।

থ্যালাসেমিয়া বাহক কারা?

ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবাদানকারী সংস্থা ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী থ্যালাসেমিয়া বাহক যে কেউ হতে পারেন। থ্যালাসেমিয়া বাহকরা ত্রুটিপূর্ণ জিন বহন করলেও তারা নিজেরা কখনোই থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হন না। তবে এই বাহকরা কখনো কখনো স্বল্প মাত্রার অ্যানিমিয়ায় ভুগতে পারেন কারণ তাদের রক্তের লোহিত কণিকার আকৃতি স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট। আর এই ধরনের অ্যানিমিয়ার জন্য সাধারণত কোনো চিকিৎসাও নিতে হয় না।
ইতালি, গ্রীস, সাইপ্রাসসহ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, মধ্যপ্রাচ্য, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার মানুষের থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার শঙ্কা বেশি থাকে। এছাড়া দুইজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের সন্তানদেরও থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার শঙ্কা থাকে।

ডা. গুলজার হোসেন বলেন, দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের সন্তানের থ্যালাসেমিয়া বাহক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে ৫০ ভাগ। অর্থাৎ দুজন থ্যালাসেমিয়া বাহকের চারজন সন্তান হলে তার মধ্যে অন্তত দুই জনের থ্যালাসেমিয়া বাহক হয়ে জন্ম নেয়ার সম্ভাবনা থাকে।

সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই জানা যায় যে একজন ব্যক্তি থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না। থ্যালাসেমিয়া বাহকরা কখনো থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত না হলেও দুর্বলতা বোধ করতে পারেন তাদের ত্বকে ফ্যাকাসে ভাব আসতে পারে।

থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসা

নিয়মিতব্লাড ট্রান্সফিউশনবা রক্ত স্থানান্তর থ্যালাসেমিয়ার প্রধান চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে সাধারণত দুই থেকে চার সপ্তাহ পরপর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর দেহে রক্ত পরিবর্তন করা হয়। এই পদ্ধতিতেলিউকো রিডিউসডবা শ্বেত কণিকা বাদে লোহিত কণিকা দেয়া হয় রোগীর দেহে। এর পাশাপাশি ট্রান্সফিউশনের ফলে শরীরে তৈরি হওয়া অতিরিক্ত লৌহ কণিকার কারণে রোগীর হৃৎপিণ্ড, যকৃত আর অগ্নাশয়ে সমস্যা তৈরি হয়। পাশাপাশি ডায়বেটিস, লিভার সিরোসিসের মতো সমস্যাও তৈরি হতে পারে।

এসব শারীরিক সমস্যার সমাধানে ট্রান্সফিউশনের পাশাপাশি বিশেষ ওষুধও গ্রহণ করতে হয়। আর থ্যালাসেমিয়ার একমাত্র স্থায়ী চিকিৎসা বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন। কিন্তু নানাবিধ ঝুঁকি আর উচ্চ খরচের কারণে খুব কম ক্ষেত্রেই বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লানটেশন করা হয়ে থাকে।

থ্যালাসেমিয়া কি প্রতিরোধযোগ্য?

থ্যালাসেমিয়া আগে থেকে প্রতিরোধ করা সম্ভব। একজন শিশুর বাবামা যদি থ্যালাসেমিয়া বাহক না হয়ে থাকে, তাহলে ওই শিশুর থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক গুলজার হোসেন জানান, বিশ্বে বেশ কয়েকটি দেশ শুধুমাত্র পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করে থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা প্রায় শূন্যের কাছাকাছি নামিয়ে এনেছে। তিনি বলেন, ‘ইরান, সাইপ্রাস, গ্রীসে একসময় থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। এই দেশগুলো থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা কমিয়ে এনেছে।

তিনি বলেন, থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধের প্রধান পথ বিয়ের আগে পরীক্ষা করে দেখা যে স্বামী স্ত্রী থ্যালাসেমিয়া বাহক কি না। থ্যালাসেমিয়া বাহকদের মধ্যে বিয়ে না হলে এবং দুইজন থ্যালাসেমিয়া বাহক সন্তান জন্মদান না করলে পরবর্তী প্রজন্মে থ্যালাসেমিয়া রোগী জন্ম না নেয়ার সম্ভাবনা প্রায় থাকে না বলে জানান হেমাটোলজির চিকিৎসক ডা. হোসেন।

সূত্র: বিবিসি

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ