সর্বশেষ
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাতের
এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: নাহিদ ইসলাম
দেরি করে পৌঁছানোয় স্বপ্নভঙ্গ ওদের
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
নির্বাচনের জন্য এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি
বিলাসবহুল অফিস ও বন্দর কমিটি নিয়ে যা বললেন হান্নান মাসউদ
শাহজাদপুরে যুবদল কর্মীকে হত্যার অভিযোগ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া প্রমাণ করে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়: দুদু
‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠিত

মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল

অনলাইন ডেস্ক

রমজান শুধু একটি মাস নয়, এটি আত্মশুদ্ধি, সংযম ও রহমতের এক অপার সুযোগ। এ মাসের প্রতিটি দিন যেন এক অনন্য প্রতিশ্রুতি, সংযমের শৃঙ্খলে অভ্যস্ত হয়ে আত্মার পরিশুদ্ধি অর্জনের। রমজানের প্রতিটি রাত, তারার স্নিগ্ধ আলোয় মাখা, মনে করিয়ে দেয় লাইলাতুল কদরের রহমতপূর্ণ মাহাত্ম্য। তাই মুমিনের উচিত রমজানকে স্বাগত জানানো পরিশুদ্ধ হৃদয়ে, পরম নিষ্ঠায়, দয়া ও উদারতার আলোকচ্ছটায়।

যেভাবে রমজান কাটাব
কিভাবে আমরা রমজান কাটাব, তা হাদিসের আলোকে তুলে ধরা হলো,

১. রোজা রাখা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেন, আল্লাহ বলেছেন: আদম সন্তানের প্রতিটি কাজ তাঁর নিজের জন্যেই- রোজা ব্যতীত। তা আমার জন্য, আমি নিজেই তার পুরস্কার দেব। আর রোজা পালনকারীদের মুখের গন্ধ আল্লাহর নিকট মিসকের ঘ্রাণের চেয়ে অধিক সুগন্ধযুক্ত। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৫৯২৭)

২. তারাবির নামাজ পড়া : আবদুল্লাহ ইবনে আবি কাইস (রা.) বলেন, উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেছেন, তুমি রাতের নামাজ (তারাবি) ছেড়ে দিবে না। কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো একে পরিত্যাগ করতেন না। তিনি (সা.)  অসুস্থ হলে কিংবা অলসতা বোধ করলে বসে নামাজ আদায় করতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ১৩০৭)

৩. দান-সদকা করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাঁদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১৪৪২)

৪. তিলাওয়াত করা : আবু উমামা (রা.) তিনি বলেন, আমি রাসূল (সা.)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, তোমরা কোরআন মাজিদ পাঠ কর। কেননা, কিয়ামতের দিন কোরআন, তার পাঠকের জন্য সুপারিশকারী হিসাবে আগমন করবে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮০৪)

৫. আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখা : আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন: প্রতিদানকারী আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী নয়। বরং আত্মীয়তার হক সংরক্ষণকারী সে ব্যক্তি, যে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন হবার পরও তা বজায় রাখে। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৫৯৯১)

৬. জামাতে নামাজ আদায় করা : আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, একদিন রাসুলুল্লাহ (সা.) নামাজ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বললেন: যে ব্যক্তি নামাজের প্রতি যত্নবান হবে, কিয়ামতের দিনে তা হবে তার জন্য নূর ও সাক্ষী এবং কিয়ামতের দিন নাজাতের মাধ্যম। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ১৪৬৭)

৭. উত্তম আচার-ব্যবহার করা  : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি; নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভাল চরিত্রের মাধ্যমে (দিনের) রোজা পালনকারী ও (রাতের) তাহাজ্জুদ আদায়কারীর সমান মর্যাদা লাভ করতে পারে। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ৪৭৯৮)

৮. নিয়ত বিশুদ্ধ করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা করে অথচ সম্পাদন করেনি, তার জন্য একটি সওয়াব লেখা হয়। আর যে ইচ্ছা করার পর কার্যত সম্পাদন করে অনন্তর তার ক্ষেত্রে সাতশ গুণ পর্যন্ত সওয়াব লেখা হয়। পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করে আর তা না করে, তার কোন গুনাহ লেখা হয় না; আর তা করলে (একটি) গুনাহ লেখা হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪৯১)

৯. আত্মশুদ্ধি করা : নোমান ইবনে বশির (রা.) বলেন: আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি; জেনে রাখ, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল কলব (অন্তর)। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৫২)

১০. খাঁটি তাওবা করা : আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, রাতে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজ দয়ার হাত প্রসারিত করেন যেন দিবসের অপরাধী তার নিকট তাওবা করে; এমনিভাবে দিনে তিনি তাঁর নিজ হাত প্রশস্ত করেন যেন রাতের অপরাধী তার নিকট তাওবাহ করে। এমনিভাবে দৈনন্দিন চলতে থাকবে পশ্চিম দিগন্ত থেকে সূর্য উদিত হওয়া পর্যন্ত। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৫৯)

১১. পরিবারের প্রতি সদয় হওয়া : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) বলেন,  রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন আল্লাহ তাআলা কোনো পরিবারে কল্যাণ দিতে চান, তখন তাদের মাঝে কোমলতা ও সৌজন্য দান করেন। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস: ২৪৪৭১)

১২. অন্যকে সহায়তা করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে লোক কোন মুমিনদের দুনিয়া থেকে কোন মুসিবত দূর করে দিবে, আল্লাহ তাআলা বিচার দিবসে তার থেকে মুসিবত সরিয়ে দিবেন। যে লোক কোন দুঃস্থ লোকের অভাব দূর করবে, আল্লাহ তাআলা দুনিয়াও আখিরাতে তার দুরবস্থা দূর করবেন। যে লোক কোন মুসলিমের দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াও আখিরাতে তার দোষ-ত্রুটি লুকিয়ে রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার ভাইয়ের সহযোগিতায় আত্মনিয়োগ করে আল্লাহ ততক্ষণ তার সহযোগিতা করতে থাকেন। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২৬৯৯)

১৩. হিংসা-বিদ্বেষ পরিত্যাগ করা : মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন : শাবান মাসের মধ্যরাতে আল্লাহ তাআলা সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন এবং সমগ্র সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন, তবে তিনি মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যক্তিকে ক্ষমা করেন না। (সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদিস: ৫৬৬৫)

১৪. অধিক নফল ইবাদত করা : আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোন ওলীর সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার উপর ফরয করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদাত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৫০২)

১৫. সময়ের প্রতি লক্ষ্য রাখা : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: এমন দু’টি নিয়ামত আছে, যে দুটোতে অধিকাংশ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। তা হচ্ছে, সুস্থতা আর অবসর। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ৬৪১২)

১৬. ক্রয়-বিক্রয়ে সহনশীল হওয়া : জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, আল্লাহ এমন ব্যক্তির প্রতি রহমত বর্ষণ করেন যে নম্রতার সাথে ক্রয়-বিক্রয় করে ও পাওনা ফিরিয়ে দেয়। (সহিহ বুখারী, হাদিস: ২০৭৬)

১৭. ভালো কাজের প্রতিযোগিতা করা : উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন : নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাদের ভালোবাসেন, যখন তোমাদের কেউ কোনো কাজ করে, আর তা সুচারুভাবে সম্পন্ন করে। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৩৮৬)

আল্লাহ তাআলা সবাইকে উল্লিখিত বিষয়গুলো মান্য করে রমজান মাস কাটানোর তাওফিক দান করুন। আমিন।

তথ্যসূত্র : মাজমাউল বুহুসিল ইসলামিয়্যাহ, জামিয়াতুল আযহার

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ