সর্বশেষ
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাতের
এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: নাহিদ ইসলাম
দেরি করে পৌঁছানোয় স্বপ্নভঙ্গ ওদের
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
নির্বাচনের জন্য এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি
বিলাসবহুল অফিস ও বন্দর কমিটি নিয়ে যা বললেন হান্নান মাসউদ
শাহজাদপুরে যুবদল কর্মীকে হত্যার অভিযোগ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া প্রমাণ করে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়: দুদু
‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠিত

ইসলামে যেভাবে রোজার প্রবর্তন হয়

অনলাইন ডেস্ক

আরবি সাওম ও সিয়াম শব্দের অনুবাদ হিসেবে রোজা ব্যবহার হয়ে থাকে। রোজা ফারসি থেকে বাংলায় এসেছে। পবিত্র কোরআনে সাওম শব্দটি এক জায়গায় (সুরা মারইয়াম : ২৬)

আর সিয়াম শব্দটি  ৯ জায়গায় [সুরা বাকারা : ১৮৩, ১৮৭ (২বার), ১৯৬ (২ বার); সুরা নিসা : ৯২; সুরা মায়েদা : ৮৯, ৯৫; সুরা মুজাদালা : ৪] ব্যবহার হয়েছে। বিভিন্ন হাদিসে শব্দ দুটির প্রচুর ব্যবহার রয়েছে। সাওম ও সিয়ামের মূল অক্ষর একই।

ইসলামী পরিভাষায় সাওম বা সিয়াম হলো, সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকা। যুগে যুগে রোজার বিধান ছিল এবং ইসলামেও এ বিধান প্রবর্তন হয়েছে।

ইসলাম পূর্ব যুগে রোজা : ইসলামপূর্ব সবযুগেই রোজার বিধান ছিল। আলী (রা.) ও হাসান বসরি (রহ.) থেকে বর্ণিত আছে যে আদম (আ.)- এর যুগ থেকে শুরু করে সব উম্মতের উপরই রোজা ফরজ ছিল। (ইজুহুল মিশকাত , ২য় খণ্ড,  পৃ. ৬৫৬)
মুুসা (আ.)-এর রোজা প্রসঙ্গ কোরআন মজিদে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘স্মরণ করো, মুসার জন্য আমি ত্রিশ রাত নির্ধারিত করি এবং আরো ১০ দ্বারা তা পূর্ণ করি, এভাবে তার প্রতিপালকের  নির্ধারিত সময় ৪০ রাতে পূর্ণ হয়।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৪২)

মুুসা (আ.) তাওরাত প্রাপ্তির জন্য প্রথমে ৩০ দিন, পরে আরো ১০ দিন বাড়িয়ে মোট ৪০ দিন রোজাসহ ইতিকাফ অবস্থায় ধ্যানমগ্ন থেকেছিলেন। ইহুদিদের আশুরার রোজা প্রসঙ্গ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। ইব্ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় আগমন করে দেখলেন যে ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করে। তিনি তাদেরকে এদিনের রোজার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তারা বললো, এদিনে মুসা (আ.) ফিরআউনের উপর বিজয় লাভ করেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা (মুসলমানরা) মুসা (আ.)-এর অধিক নিকটবর্তী। কাজেই তোমরাও রোজা পালন করো। (সুনান আদ-দারিমি, হাদিস : ১৭৫৯)

দাউদ (আ.)-এর রোজা সম্পর্কে হাদিস বর্ণিত হয়েছে। আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবন আল-আস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)  আমাকে বলেন, তুমি কি সব সময় রোজা রাখো আর রাতভর নামায আদায় করে থাকো? আমি বললাম, হঁ্যা। তিনি বলেন, এরূপ করলে তোমার চোখ বসে যাবে এবং শরীর দুর্বল হয়ে যাবে। যে বছর জুড়ে রোজা রাখলো সে যেন রোজাই রাখলো না। আর তুমি প্রতি মাসে তিন দিন করে রোজা রাখো তাই বছর জুড়ে রোজা রাখা বা বছর জুড়ে রোজা রাখার মতো। তিনি বলেন, আমি এর চেয়ে বেশি সামর্থ রাখি। রাসুলুল্লাহ (সা.)  বলেন, তাহলে তুমি দাউদ (আ.)-এর রোজা রাখো। তিনি একদিন রোজা রাখতেন আর একদিন রোজা ছেড়ে দিতেন। তিনি শত্রুর সম্মুখীন হলে পালায়ন করতেন না। (বুখারি, হাদিস : ১৮৭৮)

ইসলামপূর্ব যুগের সামগ্রিক রোজা বিষয়ে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)

ইসলামে রোজার প্রবর্তন : ইসলামপূর্ব সব যুগে রোজার বিধান থাকলেও সেসব শর্ত, প্রকৃতি ও ধারাবাহিকতায় ইসলামে রোজা ফরজ হয়নি। বরং ইসলামে রোজা স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। আত্মিক, নৈতিক ও চারিত্রিক কল্যাণের আধার। রহমত, বরকত ও মাগফিরাত দ্বারা সমৃদ্ধ। স্বাতন্ত্র্য বৈশিষ্ট্যে ভরপুর মাসব্যাপী এই রোজা দ্বিতীয় হিজরিতে ফরজ করা হয়। রাসুল (সা.) মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করার দ্বিতীয় বছরে শাবান মাসের শেষ দশকে রমজানের রোজা আদায়ের নির্দেশনা সম্বলিত সুরা বাকারার ১৮৩- ১৮৫ আয়াত অবতীর্ণ হয়। অবশ্য রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার আগে আশুরার রোজা (১০ মুহাররম) এবং আইয়ামে বিজ তথা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা ফরজ ছিল। রমজানের রোজা ফরজ হওয়ার পর সেসব রোজার বিধান নফলে পরিণত হয়েছে। মুয়াজ ইবন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নামাজ তিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে এবং রোজাও তিন ধাপে পরিবর্তিত হয়েছে। রোজার তিন ধাপের তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

প্রথম ধাপ : রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি মাসে তিন দিন (আইয়ামে বিজ তথা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের রোজা) এবং আশুরার রোজা (১০ মুহাররম) পালন করতেন।

দ্বিতীয় ধাপ : এরপর অবতীর্ণ হয় : (হে মুমিনরা! তোমাদের জন্য রোজার বিধান দেওয়া হলো যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীগণকে দেয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো। রোজা নির্দষ্টি কয়েক দিনের। তোমাদের মধ্যে কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করে নিতে হবে। তা যাদের অতিশয় কষ্ট দেয় তাদের কর্তব্য এর পরিবর্তে ফিদয়া-একজন অভাবগ্রস্তকে খাদ্য দান করা। যদি কেউ স্বতঃস্ফূর্তভাবে সত্ কাজ করে তবে তা তার পক্ষে অধিক কল্যাণকর। আর রোজা পালন করাই তোমাদের জন্য অধিকতর কল্যাণপ্রসূ যদি তোমরা জানতে।) (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৩-১৮৪)

তখন যে চায় রোজা রাখে আর যে চায় রোজা না রেখে এর পরিবর্তে ফিদ&য়া- একজন অভাবগ্রস্থকে খাদ্য দান করে। এভাবে এক বছর যায়।

তৃতীয় ধাপ : এর পর অবতীর্ণ হয়, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সত্পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী রূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এই মাস পাবে তারা যেন এই মাসে রোজা পালন করে। আর কেউ অসুস্থ হলে বা সফরে থাকলে অন্য সময় এই সংখ্যা পুরো করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য ক্লেশকর তা চান না। এজন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সত্পথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করবে এবং যাতে তোমারা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারো।’  (সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৫)

তারপর থেকে রমজান মাস উপস্থিত হলে রোজার অবশ্যকতা প্রমাণিত হয়। আর মুসাফিরদের জন্য কাজা আদায় এবং রোজা আদায়ের সামর্থ নেই-এমন বৃদ্ধদের জন্য ফিদ&য়া প্রদানের সুযোগ অব্যাহত থাকে। (আবু দাউদ,  হাদিস : ৫০৭)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ