সর্বশেষ
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের শক্ত প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা
যে ৫ প্রাণঘাতী রোগের কারণ হাই কোলেস্টেরল
এক লুকের সঙ্গে আরেক লুকের কোনো মিল নেই টালিউড সুইটহার্ট শ্রীজলার
হজম ক্ষমতা বাড়াতে মেনে চলুন কিছু টিপস
গ্রীষ্মে রোদে পোড়া ও নিস্তেজ ত্বককে বিদায় জানাতে মেনে চলুন এই ৭টি হাইড্রেশন হ্যাকস
হাই ট্রাইগ্লিসারাইড : স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়
খালি পেটে পেঁপে পাতার রস খেলে মিলবে যেসব উপকার
৮৬ বছর বয়সে উইন্ডসার্ফিংয়ে বিশ্বরেকর্ড
সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণের মালিক হলেই কোরবানি ওয়াজিব
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত

ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বিশ্ব যেভাবে আরও বিভক্ত হচ্ছে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

বিশ্ব যে মুহূর্তে ক্রমে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে এবং ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে, ঠিক সে মুহূর্তে ইউক্রেন যুদ্ধ এই বিভাজনকে আরও গভীর করেছে। শুরু থেকেই দুটি পক্ষ স্পষ্ট ছিল—একদিকে ছিল রাশিয়া। অন্যদিকে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো।

এদিকে গ্লোবাল সাউথের (এশিয়া, আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকার উন্নয়নশীল দেশগুলো) বেশির ভাগ দেশ শুধু চেয়েছে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হোক। তবে এখন বিশ্বরাজনীতিতে পরিবর্তন আসছে। এই পরিবর্তন ইউক্রেন সংঘাতের সমাধানে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।

তিন বছর পার হলেও ইউরোপ, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য ও নরওয়ে এখনো ইউক্রেনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের সবচেয়ে বড় সামরিক সংঘাত হিসেবে এই যুদ্ধ ইউরোপের মনোজগতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এটি ইউরোপের নিরাপত্তা সম্পর্কে দীর্ঘদিনের বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করেছে এবং শীতল যুদ্ধের সময়কার পারমাণবিক ধ্বংসের ভীতিকে আবারও সামনে এনেছে।

পশ্চিমা দেশগুলোর সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গি হলো, ইউক্রেনের একটি অংশ দখল করে রেখে একটি শান্তিচুক্তি করার মতোও রাশিয়ার যেকোনো ‘জয়’ ইউরোপের জন্য অস্তিত্বের হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

যুক্তরাষ্ট্র এখন আর ইউক্রেন যুদ্ধে ‘বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঢালতে’ চায় না। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এই যুদ্ধকে ‘অচলাবস্থার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করেছেন। কারণ, এই যুদ্ধে দুই পক্ষই বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে। তাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি করতে চান। ইউক্রেন যাতে চুক্তির শর্ত মেনে নিতে বাধ্য হয়, সে জন্য ট্রাম্প প্রশাসন সামরিক সহায়তা ও গোয়েন্দা সহযোগিতা প্রথমে স্থগিত করে, পরে আবার চালু করে।

ট্রাম্পের দাবি, ‘বিশ্বের মঙ্গলের জন্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বন্ধ করতেই এই চুক্তি হবে।’ তবে ট্রাম্পের দাবি ঠিক নয়। ‘বিশ্বের মঙ্গল’ যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান লক্ষ্য নয়। ট্রাম্পের মূল পরিকল্পনা ছিল রাশিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তাদের অর্থনীতি ও সামরিক শক্তিকে দুর্বল করা, যাতে যুক্তরাষ্ট্র লাভবান হয়।

কিন্তু বাস্তবে এসব নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে দুর্বল তো করেইনি, তার বদলে এসব নিষেধাজ্ঞা চীন ও রাশিয়ার মধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। এটি পশ্চিমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রচুর সম্পদ ইউরোপের পেছনে ব্যয় করতে হচ্ছে।

এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে ট্রাম্প এখন ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করতে চান, যাতে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক ও কৌশলগত মনোযোগ প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে (ইন্দো-প্যাসিফিক) কেন্দ্রীভূত করতে পারে। কারণ তাঁর মতে, আমেরিকার আসল প্রতিপক্ষ হলো চীন।

ট্রাম্পের আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছিলেন, একমাত্র চীনই যুক্তরাষ্ট্রকে পেছনে ফেলে বিশ্বশক্তি হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এখনো এক লাখের বেশি মার্কিন সেনা ইউরোপে মোতায়েন রয়েছে। তাই মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ সম্প্রতি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আর ইউরোপের সঙ্গে একপক্ষীয় নিরাপত্তা সম্পর্ক বজায় রাখতে পারবে না। ইউরোপকে এখন নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। তিনি মনে করেন, ইউরোপ নিজেদের দায়িত্ব নিজেরা নিলে যুক্তরাষ্ট্র সর্বাত্মকভাবে চীনকে প্রতিহত করার দিকে মনোযোগ দিতে পারবে।

এখন প্রশ্ন উঠছে, ইউরোপ কি নিজের নিরাপত্তা রক্ষা করতে সক্ষম? পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্ক মনে করেন, ইউরোপের অর্থনৈতিক শক্তি যথেষ্ট, জনসংখ্যাও কম নয়। তাঁর ভাষায়, ‘৫০ কোটি ইউরোপীয় নাগরিক ৩০ কোটি আমেরিকানের কাছে ১৪ কোটি রাশিয়ানের বিরুদ্ধে সুরক্ষা চাচ্ছে।’

আসল সমস্যা হলো, ইউরোপ এখনো নিজেকে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে ভাবতে পারছে না। ফলে তারা সঠিক কৌশল নির্ধারণ করতে পারছে না।

ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও ইউরোপের বড় একটি দুর্বলতা রয়েছে।

ন্যাটোর মহাসচিব মার্ক রুট উল্লেখ করেছেন, ইউরোপের সামরিক শিল্প এই পর্যায়ের শক্তিশালী নয়, যা ইউক্রেনকে পর্যাপ্ত অস্ত্র সরবরাহ করতে পারে। এ জন্য রুটসহ ইউরোপের অনেকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি চুক্তি করতে চাইছেন, যাতে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যাবে, আর ইউরোপ তার খরচ বহন করবে।

যদি ট্রাম্প প্রশাসন এটি না মেনে নেয়, তাহলে যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের পরিকল্পিত ‘ইচ্ছুক দেশগুলোর জোট’ (কোয়ালিশন অব দ্য উইলিং) গঠন করা কঠিন হয়ে পড়বে। এটি ইউক্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।

এদিকে গ্লোবাল সাউথের (উন্নয়নশীল দেশগুলোর) জন্য ইউক্রেন যুদ্ধের অর্থনৈতিক প্রভাব মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। যুদ্ধের কারণে খাদ্য ও জ্বালানির দাম অনেক বেড়েছে। এটি ছোট ও দুর্বল দেশগুলোর জন্য মারাত্মক সমস্যা তৈরি করেছে। বিশেষ করে যেসব দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কম, সেসব দেশের জন্য সমস্যাটি বেশি তৈরি করেছে।

শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এর একটি ভালো উদাহরণ। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শেষ করে দেয়। ফলে দেশটিতে তেল, খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুতের তীব্র সংকট তৈরি হয়। এই অর্থনৈতিক ধাক্কা সাধারণ মানুষকে রাস্তায় নামতে বাধ্য করে, ফলে দেশটির দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়ে।

এ কারণেই বেশির ভাগ উন্নয়নশীল দেশ চায় যুদ্ধ যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার মাধ্যমে শেষ হোক, এমনকি এর জন্য যদি ইউক্রেনের কিছু এলাকা রাশিয়ার দখলে থাকে, তা–ও মেনে নিতে হবে।

২০২৩ সালের পর থেকে শান্তিচুক্তির দাবি আরও জোরালো হয়েছে। এমনকি ন্যাটোর সদস্য তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলও ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে তাদের নিজস্ব স্বাধীন অবস্থান নিচ্ছে।

তবে এখনো ইউক্রেন ও ইউরোপ বিশ্বাস করে, শক্তির মাধ্যমে শান্তি অর্জন করা সম্ভব। ইউক্রেনের প্রতিরোধ প্রশংসনীয় আর আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী রাশিয়ার অবৈধ দখলদারির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো জরুরি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যুদ্ধ এখন স্থবির অবস্থায় পৌঁছেছে। আর বিশ্বজুড়ে এর নেতিবাচক প্রভাব বাড়ছে।

১৯৫০-৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধের মতো একই ভুল যেন না হয়, যেখানে দুই বছরের সামরিক অচলাবস্থার পর অস্ত্রবিরতি হয়েছিল। তাই সব পক্ষের উচিত বাস্তবসম্মত চিন্তা করা এবং যুদ্ধ শেষ করার জন্য দ্রুত আলোচনায় বসা।

ব্রহ্ম চেলানি নয়াদিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ বিভাগের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বার্লিনের রবার্ট বোশ একাডেমির ফেলো

স্বত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট, অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ