রিফাইন্ড হোক, কিংবা অন্য যেকোনোভাবেই হোক না কেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের কোনো রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপির) মুখ্য সংগঠক নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী।
রোববার রাজধানীর বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে দলটির শ্রমিক শাখা গঠনের লক্ষ্যে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এমন কথা বলেন।
এনসিপির মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্টের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন দলটির আরেক মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম। এ নিয়ে সামাজিকমাধ্যমে নেতিবাচক মন্তব্য পড়ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নাসিরউদ্দিন পাটওয়ারী বলেন, ‘এনসিপি নেতাদের মধ্যে কোনো দূরত্ব কিংবা বোঝাপড়ার জায়গায় কোনো ঘাটতি নেই। তবে একটি বড় অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। আন্দোলন ও রাজনৈতিক জায়গা—দুটোই আলাদা। সেই জায়গা থেকে এই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্ররা নিজেদের রাজনৈতিক জায়গায় রূপান্তর করছেন। সেখান থেকে যদি কোনো ভুলত্রুটি হয়ে থাকে, দেশবাসীকে ক্ষমাসুন্দর দেখার অনুরোধ করছি। ফেসবুকে যেসব মন্তব্য পড়েছে, সেগুলো মূল্যায়ন করে আমরা দেখেছি, আমাদের ওপর মানুষের প্রত্যাশা অনেক উঁচু। সে ক্ষেত্র থেকে তারা আমাদের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। আমরা সেই পরামর্শ নেই।’
শুরুতেই এমন হোঁচট খেলে আপনাদের দলের ভবিষ্যৎ কী—প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘হাসনাত আবদুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট রাজনৈতিক ও সেনা অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তবে আমরা বলতে চাই, বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বৈঠক হয়ে থাকে। যে বিষয়গুলো জনগণের কাছে স্পষ্ট না, সেগুলো আমরা পরিষ্কার করার চেষ্টা করি। কিন্তু যখন দল গঠন হয়েছে সেক্ষেত্রে আমি বলেছি, মিটিং নিয়ে জনগণের কাছে যখন বলা হবে, তখন অপরপক্ষের সম্মতির একটি বিষয় আছে। সেই জায়গা থেকে আমি বিষয়টি ‘শিষ্টাচারবহির্ভূত’ বলেছি।’
ক্যান্টনমেন্টের বৈঠকটি হাসনাত ও সার্জিসের বৈঠক ছিল, নাকি এনসিপির বৈঠক ছিল? যদি ব্যক্তিগত বৈঠক হয়, তাহলে আপনারা কী অবগত ছিলেন? জানতে চাইলে এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘তারা বৈঠক সম্পর্কে আমাদের অবগত করেছিলেন। তবে বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো আলোচনা হয়নি। এ নিয়ে একটি বৈঠক হওয়ার কথা আছে, তারপরে সবাইকে বিষয়টি স্পষ্ট করব।’
‘তবে দলীয় কিছু মানুষ এই বৈঠক সম্পর্কে জানতেন। কিন্তু ওখানে যে কথা হয়েছিল, সবগুলো সবার কাছে প্রকাশ করা হয়নি। কেন বৈঠক হয়েছিল, সে বিষয়ে হাসনাত আবদুল্লাহ স্পষ্ট করে দিয়েছেন।’
হাসনাত যে কথাগুলো লিখেছেন, সেগুলো সেনাসদর থেকে ‘অবান্তর’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে— এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, ‘যে আলোচনা হয়েছে, সেটার কোনো সমাধান আসেনি। আবার বিভিন্নজন বিভিন্নভাবে কথা বলে যাচ্ছেন। আবার সেনাসদর থেকে যে বক্তব্য এসেছে, সেটা কোনো মুখপাত্রের মাধ্যমে আসেনি। আইএসপিআর থেকে এমন কোনো বক্তব্য আসেনি।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে এই ছাত্রনেতা বলেন, ‘এখানে প্রশ্নটি এসেছিল আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ নিয়ে। সেই প্রশ্নে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নিয়ে কথা হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন বক্তব্য এসেছে। আপনারা বিএনপির একটি বক্তব্য দেখেছেন, তাদের সালাহউদ্দিন সাহেব আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে বলেছেন।’
‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ নিয়ে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। আমরা গত ছয় মাস পর্যন্ত বলে এসেছি, আওয়ামী লীগের যে মানুষগুলো, যারা খুনি ছিল, যারা সরাসরি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ছিল, যারা বিভিন্ন জায়গায় ও ক্যান্টনমেন্টে আশ্রয় নিয়েছিলেন—আমরা এই বিষয়ে বক্তব্য স্পষ্ট করতে বলেছিলাম। আমরা সে বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না। খুন করে যারা বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছিল, তাদের বিষয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য আসা ছাড়া বাংলাদেশে বর্তমানে যে সংকট রয়েছে, তা থেকে উত্তরণ করা সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘ঘটনাগুলো চলমান। আওয়ামী লীগের বিষয়টি এখন অনেক বেশি মানুষের সামনে এসেছে। এ নিয়ে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। আমাদের দেশে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা বিভিন্ন জায়গায় কথা বলে যাচ্ছেন। আমরা স্পষ্ট করে বলেছি, রিফাইন্ড হোক, কোনো মূল্যেই বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হোক বা যেকোনো প্রতিষ্ঠান, কেউ যদি আমাদের সামনে দাঁড়ায়, আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাব।’
নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, সেই দিক থেকে সেনাবাহিনীকেও বলব, আপনারা দায়িত্বশীল আচরণ করুন। রাজনৈতিক বিষয়াদি রাজনীতিবিদদের হাতে ছেড়ে দিন। এখন বিভিন্ন জায়গা থেকে যদি কোনো গোষ্ঠী বিভাজনের চেষ্টা চালায়, তা মোকাবিলায় এনসিপি ঐক্যবদ্ধ ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে।