সর্বশেষ
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাতের
এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: নাহিদ ইসলাম
দেরি করে পৌঁছানোয় স্বপ্নভঙ্গ ওদের
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
নির্বাচনের জন্য এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি
বিলাসবহুল অফিস ও বন্দর কমিটি নিয়ে যা বললেন হান্নান মাসউদ
শাহজাদপুরে যুবদল কর্মীকে হত্যার অভিযোগ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া প্রমাণ করে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়: দুদু
‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠিত
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছুদের পাশে বসুন্ধরা শুভসংঘ
নির্বাচন যথা সময়ে না দিলে অন্তর্বর্তী সরকারকেও পালাতে হবে: কর্নেল অলি

সদকাতুল ফিতরে ঈদের খুশি ভাগাভাগি

অনলাইন ডেস্ক

রমজানের শেষে আসে ঈদুল ফিতর। ফিতর অর্থ রোজা ভাঙা। ঈদ মানে খুশি। ঈদুল ফিতর মানে রোজা ভাঙার খুশি। এক মাস পর রোজা ভাঙার অনুমতি প্রাপ্তির খুশিতে অনুষ্ঠিত হয় এই ঈদ। এই ঈদের সূত্র ধরে আসে সদকাতুল ফিতর প্রসঙ্গ। রমজানের শেষ দিনের সূর্য ডুবে যাওয়ার পরই ওয়াজিব হয় এই সদকা। সে হিসেবেই একে সদকাতুল ফিতর বলা হয়। এটি নামাজে সাহু সেজদার মতো। নামাজে যেমন কোনো অনিচ্ছাকৃত ভুল হলে তার প্রতিকার হয় সাহু সেজদার মাধ্যমে, ঠিক তেমন রোজার অসম্পূর্ণতা দূর হয় সদকাতুল ফিতরের মাধ্যমে। কেননা মাসব্যাপী রোজা রাখতে গিয়ে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় ছোটখাটো ভুল আমাদের হয়েই যায়। সেগুলোর কাফফারা হচ্ছে এই সদকাতুল ফিতর। অপরদিকে ঈদ উপলক্ষে ধনীদের ঘরে ঘরে বয়ে যায় আনন্দের হিল্লোল।

আর্থিক সচ্ছলতার কারণে হরেক রকমের বাজার হয় তাদের পরিবারে। পোশাক পরিচ্ছদ থেকে শুরু করে মজার মজার সব খাবার রান্না হয় তাদের ঘরে। ঠিক সেই মুহূর্তে দরিদ্রদের ঘরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটাও আসে না আর্থিক সংকটের কারণে। এই সংকটের সমাধানকল্পে ইসলাম দিয়েছে ফিতরাব্যবস্থা। এর মাধ্যমে ধনীর পাশাপাশি দরিদ্ররাও উপভোগ করতে পারে ঈদের আনন্দ-আমেজ। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) রোজাদারের বেহুদা কথাবার্তা ও অশ্লীলতার কাফফারা হিসেবে এবং মিসকিনদের আহারের ব্যবস্থার জন্য সদকাতুল ফিতর নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের আগে ফিতরা আদায় করে আল্লাহর কাছে তা গ্রহণযোগ্য সদকা হিসেবে পরিগণিত হয়। আর যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পর আদায় করে তা সাধারণ সদকা হিসেবে গণ্য হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৮২৭)

সদকাতুল ফিতর যারা দেবেন

মুসলিম নারী-পুরুষ, স্বাধীন-সুস্থ, সামর্থ্যবান ব্যক্তির কাছে ঈদের দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অতিরিক্ত যে সম্পদ থাকবে, তার ওপর সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব। পরিবারের ভরণপোষণের দায়িত্ব যার, সদকাতুল ফিতর আদায় করার দায়িত্বও তার। তাই স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ও অধীনস্থদের সদকাতুল ফিতর আদায় করবে পরিবারের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তি। যদি তাদের সবাই নিজ নিজ ফিতরা দিতে সামর্থ্য না রাখে। তবে নিজেরাই নিজেদের ফিতরা আদায় করা উত্তম। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) গোলাম, স্বাধীন, পুরুষ, নারী, ছোট, বড় সব মুসলিমের ওপর এক ‘সা’ খেজুর, অথবা এক ‘সা’ গম সদকাতুল ফিতর হিসেবে নির্ধারণ করেছেন এবং বলেছেন, তা ঈদের নামাজের আগে আদায় করে দিতে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯৮৪)

কী দিয়ে আদায় করবেন
সদকাতুল ফিতর সম্পর্কিত হাদিসগুলো পর্যালোচনা করলে এ বিষয়ে মোট পাঁচ ধরনের খাদ্যের বর্ণনা পাওয়া যায়Ñযব, খেজুর, পনির, কিশমিশ ও গম। হাদিসে এ পাঁচটি দ্রব্যের যেকোনোটি দ্বারা ফিতরা আদায়ের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, যেন মুসলমানরা নিজ নিজ সামর্থ্য ও সুবিধা অনুযায়ী এর যেকোনো একটি দ্বারা তা আদায় করতে পারে। এ পাঁচ ধরনের মধ্যে যব, খেজুর, পনির ও কিশমিশ দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতে চাইলে প্রত্যেকের জন্য এক ‘সা’ দিতে হবে। আর গম দ্বারা আদায় করতে চাইলে আধা ‘সা’ দিতে হবে (তিরমিজি, হাদিস : ১/৮৫)। তবে যেহেতু উপরোক্ত খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে সেগুলোর মূল্য আদায় করারও অবকাশ আছে, সেহেতু উল্লিখিত খাদ্যবস্তুগুলোর মধ্য থেকে কোনো একটিকে মাপকাঠি ধরে তার সমমূল্যও সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করা যাবে (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা : ৩/১৭৪)। অর্থাৎ গম, গমের আটা বা গমের ছাতু যদি হয়, তবে তা পৌনে দুই কেজি, সাবধানতাবশত পুরো দুই কেজি দিতে হবে। এর সমপরিমাণ মূল্যও দেওয়া যায়। আর যদি খেজুর, কিশমিশ, যব, যবের ছাতু এসবের কোনো একটি দ্বারা ফিতরা দেওয়া হয় তা হলে ৩ কেজি দেড়শ গ্রাম অথবা এর সমপরিমাণ মূল্য দিতে হবে। বর্ণিত যে বস্তুর হিসাবেই দেওয়া হোক কিছু বেশি দেওয়াই ভালো। কারণ সামান্য কম হলে ফিতরা আদায় হবে না। আর বেশি দিলে সওয়াব পাওয়া যায়। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি : ১/১৯৩)

সদকাতুল ফিতর কখন আদায় করবেন
সদকাতুল ফিতর ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে আদায় করা উত্তম। হাদিস শরিফে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) সদকাতুল ফিতরের বিধান দিয়েছেন—রোজাদারকে অনর্থক ও অশ্লীল কথা থেকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য। সুতরাং যে ব্যক্তি ঈদের নামাজের আগে তা আদায় করবে তার জন্য তা মাকবুল সদকা হবে। আর নামাজের পর আদায় করলে তা অন্যান্য সদকার মতো হবে (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৯)। অবশ্য কোনো কোনো সাহাবি থেকে ঈদের কয়েক দিন আগেও ফিতরা আদায়ের কথা প্রমাণিত আছে। যেমন নাফে (রহ.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ঈদের দুয়েক দিন আগেই ফিতরা আদায় করে দিতেন (আবু দাউদ, হাদিস : ১৬০৬)। সুতরাং আগে আদায়ের সুযোগ থাকলেও সদকাতুল ফিতর রমজানের শেষ দিকেই আদায় করা উচিত। এতে করে গরিব লোকদের জন্য ঈদের প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানো সহজ হয়। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সদকাতুল ফিতর আদায় না করলে পরবর্তীতে তা আদায় করে দেওয়া আবশ্যক।

সদকাতুল ফিতর যাদের দেওয়া যাবে
যারা জাকাত পাওয়ার অধিকার রাখে তারাই সদকাতুল ফিতরের হকদার। যেসব খাত ও ব্যক্তি জাকাতের হকদার নয়, তাদের ফিতরা দেওয়া যাবে না (ফাতাওয়া শামী : ৩/৩২৫)। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘দান-সদকা হলো কেবল ফকির, মিসকিন, জাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে জেহাদকারী ও মুসাফিরদের জন্য। এই হলো আল্লাহর নির্ধারিত বিধান। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ (সুরা তওবা, আয়াত : ৬০)। সদকাতুল ফিতরের এই বিধান সমাজে যথার্থরূপে বাস্তবায়িত হলে দারিদ্র্য দূর হবে। ক্ষুধার্তরা খাবার পাবে, বস্ত্রহীনরা বস্ত্র পাবে। নিত্যপণ্যের অভাবে ভোগা পরিবারের মুখে হাসি ফুটবে। সমাজে ফিরে আসবে অর্থনৈতিক ভারসাম্য। ঈদের আনন্দ হবে সর্বময় এবং সর্বজনীন।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ