পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী সারাদেশে আজ (শনিবার) বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কর্মসূচিতে যোগ দিতে দলে দলে শিক্ষার্থীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জড়ো হতে থাকেন। এরপর ব্যস্ততম সড়কগুলোতে নেমে আসেন তারা।
- · প্রগতি সরণি
এদিন বেলা বাড়ার সাথে সাথে প্রগতি সরণি এলাকার যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে হুট করে তারা প্রধান সড়কে নেমে আসেন। তাদের উপস্থিতিতে বন্ধ হয়ে যায় প্রগতি সরণির যানচলাচল।
শনিবার দুপুর সোয়া ১টার দিকে এমন ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীরা এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অন্যদিকে, বসুন্ধরা গেটের পাশে সতর্ক অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে।
শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসার পর যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে থেকে নতুন বাজার মোড় পর্যন্ত সড়কে যানচলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কুড়িল বিশ্বরোডের দিক থেকে কোনো যানবাহন নদ্দা ও নতুন বাজারের দিকে যেতে পারছে না।
জড়ো হওয়া শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, গতকাল শুক্রবার সারাদেশে পালিত ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলায় ব্যাপক হতাহত হয়। ওই সব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং ৯ দফা দাবিতে সারাদেশে আমরা আজ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। এখানে আমরা শুধু শিক্ষার্থীরাই উপস্থিত আছি।
- · শনির আখড়া
৯ দফা দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের শনির আখড়ায় অবস্থান নিয়েছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে অনেক সাধারণ জনতাকেও যোগ দিতে দেখা গেছে। এ সময় তাদের মিছিল-স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠে ওই এলাকা। শনিবার দুপুরে তারা বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন স্লোগান দিতে শুরু করেন৷
সারাদেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও নয় দফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তারা বিক্ষোভ মিছিল করছেন।
এ সময় আন্দোলনকারীরা ‘আমার ভাই কবরে, খুনিরা কেন বাইরে’, ‘আমার ভাই জেলে কেন’, ‘গুলি করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না’ বলে স্লোগান দেন।
- · সায়েন্স ল্যাব
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেছেন আন্দোলনকারীরা। আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন।
‘সারা দেশে ছাত্র-নাগরিকদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা করে খুনের প্রতিবাদ ও নয় দফা’ দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করছেন।
আন্দোলনকারীদের মধ্যে একজন ঘোষণা দেন, ‘আমরা এখানে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে এসেছি। আমরা বিশ্বাস করি, পুলিশ আমাদের ওপর আক্রমণ করবে না।’
‘আমার ভাই কবরে, খুনি কেন বাহিরে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’- সহ সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
সায়েন্স ল্যাব মোড়ে সকাল থেকে অনেক পুলিশ সদস্যকে অবস্থান করতে দেখা গেছে।
- আফতাব নগর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে রাজধানীর আফতাব নগরে বিক্ষোভ করছেন ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীসহ আশপাশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন অভিভাবকরাও। সকাল থেকে চলা এ বিক্ষোভ বিকাল ৩টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩ আগস্ট) কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ছাত্র ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার বিচারসহ শিক্ষার্থীদের দেওয়া ৯ দফা দাবি আদায়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ করছেন তারা।
এদিকে চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে দেশব্যাপী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, হত্যা, নির্যাতনে জোরদার হয়েছে আন্দোলন। ফলে বর্ধিত ১৫৮ সদস্য বিশিষ্ট নতুন সমন্বয়ক টিম ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
এছাড়া রোববার (৪ আগস্ট) থেকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তারা। এই অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে মুক্তিকামী ছাত্র-জনতার প্রতি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
- মাওনা
এদিকে, গাজীপুরের শ্রীপুরের ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় উত্তেজিত ছাত্ররা পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের একটি গাড়িতে। এ ঘটনায় ঢাকা-গাজীপুর রোডেও যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানা গেছে।
শিক্ষার্থীদের এ কর্মসূচি ঘিরে রাজধানীর প্রগতি সরণি, যমুনা ফিউচার পার্ক, বসুন্ধরা গেট এলাকায় পুলিশ সদস্যদের সতর্ক অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সেখানে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য বলেন, সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের সদস্যরা এখানে অবস্থান নিয়েছেন। আমাদের বেশ কয়েকটি টিম এখানে কাজ করছে। নিরাপত্তা নিশ্চিতের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি।
আন্দোলন প্রসঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ বলেন, খুনি সরকারের সঙ্গে কোনোপ্রকার সংলাপে বসতে আমরা রাজি নই, সেখানে রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই ওঠে না। গুলি আর সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনও সংলাপ হয় না।