নারকেল তেলে রয়েছে লরিক অ্যাসিড, যা চুলের গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে। চুলের কিউটিকলগুলোকে মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে নারকেল তেল। ফলে চুল থাকে নরম ও কোমল। আর এমন বেশ কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলো নারকেল তেলে যোগ করলে এর গুণাবলি আরও বৃদ্ধি পায়।
চুলের যত্নে নারকেল তেলের কোনো জুড়ি নেই বললেই চলে। বছরের পর বছর ধরে চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়ে আসছে নারকেল তেল। নারকেল তেলে উপস্থিত ফ্যাটি অ্যাসিড ও ভিটামিন ই চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নারকেল তেলে রয়েছে লরিক অ্যাসিড, যা চুলের গভীর থেকে পুষ্টি জোগায় ও চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে। চুলের কিউটিকলগুলোকে মসৃণ রাখতেও সাহায্য করে নারকেল তেল। ফলে চুল থাকে নরম ও কোমল। সেই সঙ্গে নারকেল তেল মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করে, যা চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করে এবং নতুন চুল গজাতেও সাহায্য করে। আর এমন বেশ কিছু উপাদান রয়েছে, যেগুলো নারকেল তেলে যোগ করলে এর গুণাবলি আরও বৃদ্ধি পায়। ফলে চুল পড়া রোধ হয়, পাশাপাশি নতুন চুল গজায়। বিশেষ ভাবে, যাঁদের চুল ঝরতে ঝরতে প্রায় টাকের মতো অবস্থা, তাঁদের জন্য নারকেল তেলের সঙ্গে এই উপাদানগুলো খুবই উপকারী। চলুন জেনে নেওয়া যাক, নতুন চুল গজাতে নারকেল তেলের সঙ্গে ব্যবহার করবেন কোন ৫ উপাদান।
১. পেঁয়াজের রস
নারকেল তেলের সঙ্গে পেঁয়াজের রস মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয় এবং দ্রুত নতুন চুল গজায়। কারণ, পেঁয়াজে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সালফার, যা কোলাজেনের উৎপাদন বাড়িয়ে চুলের ফলিকলগুলোকে সক্রিয় করে। এটি মাথার ত্বকে রক্তসঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং এতে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদান থাকায় খুশকি ও সংক্রমণ প্রতিরোধেও সহায়ক। ফলে চুলের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ২ টেবিল চামচ পেঁয়াজের রসের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ দিন নারকেল তেলের সঙ্গে এটি ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
২. ক্যাস্টর ওয়েল
ক্যাস্টর ওয়েল চুলের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। এতে উপস্থিত রিসিনোলিক অ্যাসিড অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল গুণসম্পন্ন, যা চুলের গোড়া মজবুত করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। সমপরিমাণ ক্যাস্টর ওয়েল ও নারকেল তেল মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন, তারপর মাথার ত্বকে ভালোভাবে ম্যাসাজ করুন। এটি অন্তত এক ঘণ্টা রেখে দিন বা সারা রাত রেখে সকালে ধুয়ে ফেলুন। নারকেল তেল ও ক্যাস্টর ওয়েল সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করলে চুল ঘন, সুন্দর ও ঝলমলে হবে।
৩. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা জেল মাথার ত্বকের মৃত কোষগুলোকে দূর করে এবং চুলের ফলিকলকে পুনরুজ্জীবিত করে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। এতে উপস্থিত প্রোটিওলাইটিক এনজাইম চুলের গঠন মজবুত করে চুল পড়া কমায়। ২ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেলের সঙ্গে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালো ভাবে ম্যাসাজ করে নিন। ৪৫ মিনিট পর হালকা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে অন্তত ২ বার ব্যবহার করলে সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
৪. মেথি
মেথি চুলের বৃদ্ধিতে একটি শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এতে রয়েছে প্রোটিন, আয়রন এবং নিকোটিনিক অ্যাসিড; যা চুলের গোড়া শক্ত করে ও খুশকি দূর করে। ২ টেবিল চামচ মেথি সারা রাত পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে এটি ব্লেন্ড করে পেস্ট তৈরি করে নিন। এর সঙ্গে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেল মিশিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে এক ঘণ্টা পর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে চুলের ঘনত্ব বাড়বে এবং নতুন চুল গজাবে।
৫. কারিপাতা
কারিপাতা চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে বেশ কার্যকরী একটি উপাদান। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, প্রোটিন ও বিটা ক্যারোটিন, যা চুলের ফলিকলগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করে। প্রয়োজনমতো কারিপাতা পেস্ট করে ২ টেবিল চামচ নারকেল তেলের সঙ্গে তাপ দিয়ে নিন। কয়েক মিনিট পর এটি ঠান্ডা করে ছেঁকে নিন এবং মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে নিন। এক ঘণ্টা পর শ্যাম্পু দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে চুল পড়া কমবে এবং নতুন চুল গজানোর হার বৃদ্ধি পাবে।
নারকেল তেল একাই চুলের যত্নে দারুণ কার্যকর। তবে এর সঙ্গে পেঁয়াজের রস, ক্যাস্টর ওয়েল, অ্যালোভেরা, মেথি ও কারিপাতা মিশিয়ে ব্যবহার করলে, এটি আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে, যা দ্রুত নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম