ত্বকের যত্ন নেয়ার প্রথম ধাপেই আসে ভালোভাবে ত্বক পরিষ্কার করার কথা। আর এই ত্বক পরিষ্কারের জন্য আমরা ব্যবহার করি নানা ব্র্যান্ডের তরল বা ক্রিমজাতীয় ক্লিনজার। আপনি কি জানেন চাইলে এসব ক্লিনজার অনেক টাকা দিয়ে না কিনে ঘরেই প্রাকৃতিকভাবে নানা উপাদান দিয়ে ফেসওয়াশ পাউডার বানিয়ে ফেলতে পারেন? এই শুকনো পাউডার ফর্মুলা দিয়ে বানানো ক্লিনজার ব্যবহার একদম সহজ, মুখ ধোয়ার আগে শুধু পানি মিশিয়ে হালকা একটা পেস্ট বানিয়ে নিতে হয়। ত্বককে এটি জেন্টলি এক্সফোলিয়েট করে, দূর করে ধুলোময়লা, ত্বক রাখে সুস্থ। এই প্রাকৃতিক ফেস ওয়াশ পাউডার কীভাবে ঘরে বানাবেন এবং এর কী কী উপকার রয়েছে চলুন জেনে নেয়া যাক।
এই পাউডার মূলত প্রাকৃতিক কিছু উপাদান, শস্য ও উদ্ভিজ্জ উপাদানের গুঁড়ো একত্রিত করে বানানো হয়। পানি দিয়ে মেশানোর পর খুব সুন্দর একটি মিশ্রণ তৈরি হয়, যেটি মুখে ক্লিনজারের মতো করেই ব্যবহার করা যায়। এই গুঁড়োর সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এটি ত্বকের ধরন ও প্রয়োজন বুঝে তৈরি করা যায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে, ব্রণ সারাতে, বয়সের ছাপ কমাতে – যে উদ্দেশ্যেই বানান না কেন উপাদানের পরিমাণ কমবেশি করা যাবে। ক্ষতিকর কেমিক্যালযুক্ত ক্লিনজারের বদলে এটি ব্যবহারে ত্বকের শুষ্কতা ও সংবেদনশীলতা কমে যায়।
যেভাবে বানাবেন
খুবই অল্প খরচে ঘরে থাকা বিভিন্ন উপাদান দিয়েই বানিয়ে ফেলতে পারবেন এই প্রাকৃতিক ফেইস ওয়াশ ক্লিনজার পাউডার। যে যে উপাদান এটি বানাতে প্রয়োজন হবে-
২৫% ওটস – ওটসে আছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। এটি ত্বকের কোমলতা ধরে রাখতে, ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে খুব ভালো কাজ করে। ত্বকের বাড়তি তেল শোষণ করে বলে তৈলাক্ত ও ব্রণযুক্ত ত্বকে এটি ব্যবহার করা নিরাপদ।
২০% অ্যারারুট পাউডার – এই পাউডার একদম নিখুঁত হওয়ায় অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায় এবং ত্বককে জেন্টলি এক্সফোলিয়েট করে।
২০% কাঠবাদাম গুঁড়ো – কাঠবাদাম গুঁড়ো ভিটামিন ই এর খুব ভালো একটি উৎস। এটি ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে, ত্বক কোমল ও সুরক্ষিত রাখতে দারুণ কাজ করে। ত্বকের গঠনবিন্যাসের উন্নতি করে।
২০% গুঁড়ো দুধ – এতে আছে ল্যাকটিক অ্যাসিড, যা ত্বককে এক্সফোলিয়েট করে, কালো দাগ কমায়, ত্বকের গঠনবিন্যাসের উন্নতি করে। ত্বককে আর্দ্রতা দেয় ও কোমলতা ধরে রাখে।
১৫% চালের গুঁড়ো – এই উপাদানটি জনপ্রিয় ত্বকের প্রশান্তি ধরে রাখার জন্য। উজ্জ্বলতা বাড়াতে, দাগছোপ কমাতে, তেলের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণের জন্যও এটি ভালো কাজ করে।
নির্দিষ্ট পরিমাণ অনুযায়ী এই উপাদানগুলো একত্রে একটি পরিষ্কার বাটিতে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। একটি বাতাস নিরোধক বয়ামে মিশ্রণটি রেখে দিন। শুষ্ক স্থানে রেখে ৬ মাস পর্যন্ত এটি ব্যবহার করতে পারবেন। বয়ামে বাতাস বা পানি প্রবেশ করলে ফাঙ্গাস পড়ে যেতে পারে। তখন এটি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে না। ব্যবহারের সময় শুধু পানি মিশিয়ে নিলেই হবে।
উপকারিতা
ত্বকের জন্য এই ফেসওয়াশ পাউডারের রয়েছে বেশ কয়েকটি উপকারিতা। যেমন-
জেন্টলি এক্সফোলিয়েট করে
ত্বকের মৃত কোষ, ধুলোময়লা ও বাড়তি তেল দূর করার জন্য এই পাউডার খুব ভালো কাজ করে। এর নিয়মিত ব্যবহার শুধু ত্বককে মসৃণই করে না, সেই সঙ্গে ত্বকের গঠনবিন্যাসের উন্নতি করে এবং উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
আর্দ্রতা দেয়
এই পাউডারে ওটস ও কাঠবাদামের গুঁড়ো থাকায় ত্বক পায় পর্যাপ্ত আর্দ্রতা। ক্ষতিকর কেমিক্যাল যুক্ত পণ্য ব্যবহারে যেখানে ত্বকের প্রাকৃতিক তেল ধুয়ে যায়, সেখানে এই ফেইস ওয়াশ পাউডার ত্বকের আর্দ্রতার পরিমাণ ঠিক রাখে, ত্বক রাখে নরম ও কোমল।
সব ধরনের ত্বকে ব্যবহারযোগ্য
শুষ্ক, তৈলাক্ত, ব্রণযুক্ত বা সংবেদনশীল – আপনার ত্বকের ধরন যেমনই হোক না কেন, এই পাউডার ব্যবহার করা যাবে সব ত্বকেই। কারণ এতে কোনো ধরনের কেমিক্যাল নেই, তাই লালচে ভাব, সংবেদনশীলতা, ব্রণ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
ডিটক্সিফিকেশন
এতে থাকা প্রাকৃতিক উপাদানগুলো টক্সিন দূর করে ত্বককে করে তোলে বিশুদ্ধ। শস্য গুঁড়ো, ঔষধি ও উদ্ভিজ্জ উপাদানগুলোর কারণে পোরস ভালোভাবে পরিষ্কার হয়, ব্রণ কমে যায়।
অ্যান্টি অক্সিডেন্ট উপাদান
চালের গুঁড়া ও ওটস থাকার কারণে এই পাউডারে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, যা প্রাকৃতিক ক্ষতির হাত থেকে ত্বককে বাঁচায়। ফ্রি র্যাডিক্যাল দূর করতে ভালো কাজ করে বলে ত্বকে বয়সের ছাপ কম পড়ে এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও কম হয়।
ব্যবহারের পর মুখ ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। এরপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। নিয়মিত ব্যবহারে অল্প কিছুদিনেই পার্থক্য বুঝতে পারবেন।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম