ভোর ৬টা। আকাশে রক্তিম সূর্য রঙ ছড়িয়েছে। আর তার আগে পাহাড়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা নদীর পাড়ে হাজির। এক টুকরো কলাপতা আর হরেক রকম শুভ্র ফুল। নদীর গঙ্গাদেবীকে পূজা পর হ্রদের ফুল ভাসিয়ে করা হয় প্রার্থনা। আগামীর সুন্দর মঙ্গল দিন কামনায়।
শনিবার এভাবে পালিত হয়েছে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের ফুল বিজুর উৎসব। চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা কিংবা তঞ্চঙ্গ্যা সব সম্প্রদায় ফুল বিজুর উৎসব একই ভাবে পালন করে। তবে ডাকে ভিন্ন ভিন্ন নামে।
রাঙামাটি ত্রিপুরা কল্যাণ সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ শংকড় ত্রিপুরা বলেন, ত্রিপুরা পল্লীতে ফুল হারি বৈসু পালন করা হয় গঙ্গা পুজা করে। পূজার ফুল নদীতে ভাসিয়ে উৎসবে মেতে ওঠে ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী। ত্রিপুরাদের একটি বিশেষ নৃত্য হচ্ছে গড়ায় নৃত্য। গড়ায় নৃত করে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয় ত্রিপুরা। পুরনো বছরের সমস্ত গ্লানি মুছে নতুন বছরে নতুন করে শুরু করে সবাই।
অন্যদিকে রাঙামাটির শহরের বিভিন্নস্থানে ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীদের বিজু ফুল পালন করা হয়েছে। শহরের গর্জন তলী এলাকায় সকাল ১০টায় ফুল বিজুর উৎসব সূচনা করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কৃষিবিদ কাজল তালুকদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. হাবিব উল্লাহ, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা খন্দকার মো. রেজাউল করিম ।
এছাড়া রাঙামাটি শহরের রাজবাড়ি গাটে ফুল বিজু উৎসব সূচনা করেন, রাঙামাটি চাকমা চার্কেল চীফ ব্যারিষ্টার রাজা দেবাশীষ রায়।
স্থানীয় স্নেহা চাকমা বলেন, ফুল বিজুর মধ্যে দিয়ে আমাদের মুলত তিন দিনের বৈসাবি উৎসব শুরু হয়। ফুল বিজু, মুলবিজু ও গজ্জ্যাপজ্জ্যা। বছরের ঠিক শেষ ও শুরুর মুহুর্তে¦ আমরা এ উৎসব পালন করে থাকি।
অন্যদিকে, আবারও তিনদিনের বৈসাবি ঘিরে উৎসবের জোয়ারে ভাসছে রাঙামাটি। নানা উৎসবে মেতে উঠেছে পার্বত্যাঞ্চলের ১০ভাষাভাষি ১১টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী। উৎসবে প্রাণ দিতে নাচে গানে মেতে উঠেছেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর তরুণ-তরুণীরা। চাকমাদের বিজু, ত্রিপুরাদের বৈসুক আর তঞ্চঙ্গ্যাদের বিষু উৎসবের পর্ব শেষ হলে শুরু হবে মারমাদের-সাংগ্রাইং। অর্থাৎ জলোৎসোব। জেলখেলীর মধ্যদিয়ে মারমা ও রাখাইয়ণ জনগোষ্ঠীরা নতুন বছরকে বরণ ও পুরনো বছরকে বিদায় জানায়।