গরমের প্রকোপ বেড়েই চলছে। তবে মৌসুমি বাতাসের উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মাঝে কালবৈশাখীর ঝড় এবং শিলা বৃষ্টি শহুরে জীবনকেও যেন প্রভাবিত করেছে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, তাপমাত্রা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন ধরনের পরিযায়ী পাখিরা ডানা মেলেছে দূর পথ ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। পুকুরগুলোতে পাখিদের সংখ্যা কমা শুরু হয়েছে, এরই মাঝে হঠাৎ দেখা মেলে ছোট্ট বালিহাঁসের। মার্চ মাসে এদের আগমন হয়। শুরুতে একটি মাত্র বালি হাস দেখা গেলেও। এখন দল ধরে ঘুরে বেড়াতে দেখা যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে।
ধবধবে সাদা, মাথার ওপর কালো দাগ, আকারে সরালি পাখির চেয়েও ছোট। সাদা বালিহাঁস যখন পাখা ঝাপটায়, নীল, সবুজ, আসমানি, বেগুনি, কমলাটে ইত্যাদি রংবেরং এর পালক চোখে পড়ে। আকারে খুব ছোট হওয়ায় তাকে দেখতে পাওয়াটা বেশ কষ্টসাধ্য। বালিহাঁস জলাশয়ের সবুজ উদ্ভিদ যেমন টুপাপানা, খুদি পানা ও হাইড্রিলা জাতীয় খাবার বেশি খায়। তাই জলজ উদ্ভিদের মাঝে লুকিয়ে লুকিয়ে খাবার সংগ্রহ করে দিন কাটে তাদের।
বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, প্রচলিত ধারণা অনুসারে অনেকেই ভাবতে পারেন যে পরিযায়ী পাখি শুধুমাত্র শীতের মৌসুমে আসে, তবে বিষয়টি পুরোপুরি সঠিক নয়। বালিহাঁস জাতীয় কিছু পরিযায়ী পাখি রয়েছে যারা শীতের পরিবর্তে, চৈত্র কিংবা বৈশাখের প্রখর গরমে ক্যাম্পাসে বিচরণ করতে দেখা যায়। তাপমাত্রা বেড়ে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠে যাওয়ার পরে বিভিন্ন ধরনের ভাসমান উদ্ভিদ যখন সংখ্যায় কমে আসে, নিমজ্জিত উদ্ভিদ যেমন হাইড্রিলা এর ওপর নির্ভরশীল হয়ে টিকে থাকতে পারে এখানকার সাদা বালি হাঁস গুলো।
একটা সময় বিপুলসংখ্যক সাদা বালি হাঁস এই সময়গুলোতে এলেও, বর্তমানে পরিবেশ দূষণ, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি কারণে খুব কমসংখ্যক হাঁস এই সময় এই অঞ্চলগুলোতে দেখা যায়। অন্যান্য লেকগুলোতে আসা বন্ধ করলেও মাত্র একটি লেকে এই হাসিটিকে গত কয়েক বছর আসতে দেখা গিয়েছে।
বর্তমানে পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল সংরক্ষণের কথা ভেবে, ক্যাম্পাসের লেকগুলো পরিষ্কার ও পরিযায়ী পাখিদের জন্য প্রয়োজনীয় জলজ উদ্ভিদের বৃদ্ধি নিশ্চিত করার পর আবার বেশ কয়েকটি লেকে দেখা যাচ্ছে এই ধরনের পাখি। তার মধ্যে ট্রান্সপোর্ট লেক, আলবেরুনী হল লেক এবং আল বিরুনী হল এক্সটেনশন লেক ইত্যাদি।
এবছর, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে মনিটরিং এবং বিভিন্ন ধরনের দেশীয় জলজ উদ্ভিদ এর বৃদ্ধি করায় ছোট সরালি, জরিয়া হাঁস, মরচে রঙা ভূতি হাঁস ইত্যাদির উপস্থিতি অনেকটা বেড়েছে। শীতের পর চৈত্র-বৈশাখে এই ধরনের বালিহাঁসের উপস্থিতি ক্যাম্পাসের প্রকৃতির প্রতি মানুষের আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে। আগামী সময়গুলোতে এই ধরনের পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি ও তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতকরণে নিয়মিত পুকুর গুলির চর্চা, অতিরিক্ত কচুরিপানা অপসারণ, দেশীয় জলজ উদ্ভিদ এর প্রসার এবং পানি দূষণ রোধে কাজ করে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীবৃন্দ।