হৃদরোগ গুরুতর কিনা তা সনাক্ত করার জন্য অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করা হয়। হৃদপিণ্ডের ধমনী এবং শিরাগুলিতে বাধার সম্ভাবনা হলে রোগীকে এটি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি কারও শ্বাসকষ্ট হয় এবং বেশ কয়েকদিন ধরে বুকে ব্যথা হয়, তাহলে প্রথমে একটি ইসিজি পরীক্ষা করা হয়।
কোনও ব্যক্তির হার্ট অ্যাটাক হলে, অনেক ক্ষেত্রে ৩টি জিনিসের পরামর্শ দেন। একটি হল অ্যাঞ্জিওগ্রাফি, দ্বিতীয়টি হল অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এবং তৃতীয়টি হল বাইপাস সার্জারি। এই তিনটিই চিকিৎসাবিদ্যার পরিভাষা। এই তিনটি কী? কখন এগুলোর প্রয়োজন হয়?
অ্যাঞ্জিওগ্রাফি কী?
হৃদরোগ গুরুতর কিনা তা সনাক্ত করার জন্য অ্যাঞ্জিওগ্রাফি করা হয়। হৃদপিণ্ডের ধমনী এবং শিরাগুলিতে বাধার সম্ভাবনা হলে রোগীকে এটি করার পরামর্শ দেওয়া হয়। যদি কারও শ্বাসকষ্ট হয় এবং বেশ কয়েকদিন ধরে বুকে ব্যথা হয়, তাহলে প্রথমে একটি ইসিজি পরীক্ষা করা হয়। এতে কোন সমস্যা হলে রোগীর এনজিওগ্রাফি করা হয়। এর মাধ্যমে হৃদপিণ্ডে কোথায় এবং কতটা ব্লকেজ আছে তা জানা সহজ হয়ে যায়।
মনে রাখবেন অ্যাঞ্জিওগ্রাফি কোনও চিকিৎসা নয় বরং একটি ইমেজিং পদ্ধতির মাধ্যমে একটি পরীক্ষা।
অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি কী?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি এক ধরণের অস্ত্রোপচার। এতে হৃদপিণ্ডের শিরা থেকে বাধা দূর হয়। এতে, একটি ছোট বেলুনের মতো যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। এই সময়, শিরায় একটি পাতলা নল (ক্যাথেটার) ঢোকানো হয়। সাধারণত তা কব্জি বা উরুর মাধ্যমে শরীরে ঢোকানো হয়। এতে, ক্যাথেটারের ডগায় একটি ছোট বেলুন থাকে যা ব্লকেজের জায়গায় পৌঁছানোর পর ফুলে ওঠে, যার ফলে হৃৎপিণ্ডের শিরা থেকে ব্লকেজ দূর হয়।
এই পদ্ধতিতে, বেলুনের সঙ্গে একটি স্টেন্ট (একটি ছোট ধাতব জাল)ও স্থাপন করা হয়। স্টেন্ট ব্লকেজ দূর করে। একজন ব্যক্তির শরীরে স্টেন্ট লাগানো যেতে পারে। এটা নির্ভর করে হৃদপিণ্ডের কতগুলি শিরায় ব্লকেজ আছে তার উপর। তবে, ব্লকেজ দূর করার জন্য সব ক্ষেত্রেই অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করা হয় না। ডাক্তাররা অনেক সময় বাইপাস সার্জারি করার পরামর্শও দেন।
কখন বাইপাস সার্জারি প্রয়োজন হয়?
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ডাক্তাররা যখন বোঝেন রোগীর শরীরে স্টেন্ট ঢোকানো যাবে না বা একাধিক ব্লকেজ রয়েছে, তখন বাইপাস সার্জারি করা হয়। এটি ব্যক্তির বয়স এবং তার স্বাস্থ্যের অবস্থার উপরেও নির্ভর করে। সাধারণত, ভবিষ্যতে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে এই অস্ত্রোপচার করা হয়।
এই অস্ত্রোপচারে প্রথমে গ্রাফটিং করা হয়। এতে, শল্য চিকিৎসক শরীরের অন্য অংশ থেকে একটি সুস্থ শিরা নিয়ে ব্লক হওয়া শিরার চারপাশে স্থাপন করেন, যা হৃৎপিণ্ডে রক্ত প্রবাহের জন্য একটি নতুন পথ তৈরি করে। এটি সাধারণত হার্ট-ফুসফুস মেশিন দিয়ে করা হয় যাতে রোগীর কোনও ঝুঁকি না থাকে। এই অস্ত্রোপচারের পর, হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহ উন্নত হয়।
কত শতাংশ ব্লকেজ হলে আপনার কী করা উচিত?
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, হার্ট ব্লকেজের রোগীর চিকিৎসা তিনটি উপায়ে করা হয়। ওষুধ, অ্যাঞ্জিওগ্রাফি অথবা বাইপাস সার্জারি। এটা নির্ভর করে কতটা ব্লকেজ আছে তার উপর। যদি ব্লকেজ ২০-৩০ শতাংশ হয় এবং মূল ধমনীতে না থাকে, তাহলে ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যেতে পারে। যদি এটি ৪০-৫০ শতাংশের বেশি হয়, কিন্তু দুই জায়গায় বেশি না হয়, তাহলে একটি স্টেন্ট ঢোকানো যেতে পারে।
যদি ব্লকেজ ৭০-৮০ শতাংশের বেশি হয় এবং সমস্ত শিরা ব্লক হয়ে যায়, তাহলে বাইপাস সার্জারি করা যেতে পারে। রোগীর বয়স এবং তার স্বাস্থ্যের ইতিহাস দেখে এই সমস্ত বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিছু ক্ষেত্রে, কম ব্লকেজ থাকলেও স্টেন্ট ঢোকানো যেতে পারে। রোগীর মতামত অনুযায়ী চিকিৎসকদের দল এই সিদ্ধান্ত নেয়। এমন পরিস্থিতিতে, যদি আপনার হৃদরোগ থাকে তবে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করেই চিকিৎসা করুন।