জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অক্ষরে অক্ষরে বাস্তবায়নের পর সংসদ নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মনোনয়নপত্র সশরীরে জমা দেওয়া, দল নিবন্ধন নবায়ন ও নিবন্ধনের সময় বাড়ানো, ঋণখেলাপি ও হলফনামায় ভুল তথ্য দিলে সদস্যপদ বাতিলসহ ৯টি দাবি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) কাছে তুলে ধরেছে দলটি। পাশাপাশি এনসিপি নেতারা মনে করছেন, প্রধান উপদেষ্টা ঘোষিত সময়সীমার মধ্যেই সংস্কার বাস্তবায়ন করে নির্বাচন সম্ভব। গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে দলটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
দুই ঘণ্টার এ বৈঠকে নির্বাচন কমিশন, আইন সংস্কার, নিবন্ধনের সময়সীমা ও নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। বৈঠকে অংশ নেয় এনসিপির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দল। এতে নাসীরুদ্দীন ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অনিক রায়, খালেদ সাইফুল্লাহ, মুজাহিদুল ইসলাম শাহিন ও তাজনূভা জাবীন।
বৈঠক শেষে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে অনেক কথা আমরা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো প্রধান উপদেষ্টার কাছ থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, এটা ইসি থেকে এসেছে। আমরা বলব, কথা বলার ক্ষেত্রে ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন; সে বিষয়ে কাজ শুরু করতে পারেন। তবে রোডম্যাপ বা সরকার থেকে দিকনির্দেশনা আসার আগেই যখন ইসি নিজ থেকে কথা বলে, তখন আমাদের সন্দেহ জাগে।’
এদিকে, শেষ তিন সংসদ নির্বাচনে জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছে এনসিপি। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী জানান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এই বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘দেশ ও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে ফ্যাসিস্ট কাঠামোতে নিয়ে গিয়েছিল আওয়ামী লীগ। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল। এর দায় নির্বাচন কমিশনেরও। বিগত তিন নির্বাচনে যারা প্রার্থী হয়েছেন, নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারী যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাদের সঠিক প্রক্রিয়ায় তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে কোনো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি কোনো দলের পক্ষে না যেতে পারে।’
নাসীরুদ্দীন বলেন, ‘১৭ এপ্রিলের চিঠিতে সংস্কারের বিষয়গুলো ফোকাস করা হয়েছে। সংস্কারের মাধ্যমে যেন নতুন নির্বাচন আসে, ইসি যেন সেদিকে ধাবিত হয়– জনদাবির মুখে সেটা যেন হয়, তা জানিয়েছি।’ বৈঠকে ভোটের সময়কাল নিয়ে সুনির্দিষ্ট আলোচনা হয়নি বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা আগে জানিয়েছিলাম, সিইসি ও ইসি নিয়োগ ২০২২-এর আইনটি অবৈধ। অন্যান্য দলও অবৈধ বলেছে। সে আইনের অধীনেই হয়েছে বর্তমান ইসি। আমরা এ আইনের বিরোধিতা করি। কিন্তু এখন যারা আছেন, তাদের সংস্কার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিতে হবে। ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন আসার পর উনারা থাকতে পারলে থাকবে; না থাকতে পারলে থাকবে না। কারও প্রতি কোনো আপত্তি নেই, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী হোক।’
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জোর দিয়েছে এনসিপি। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ঐকমত্য কমিশনের প্রতিবেদন যখন চূড়ান্ত হয়ে আসবে, তখন সরকার সাংবিধানিক কমিশনে পাঠাবে। ওই সিদ্ধান্ত যেন বাস্তবায়ন হয়। আমরা ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বসেছিলাম, নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়েও বলেছি। প্রতিবেদন চূড়ান্ত হলে তা যেন বাস্তবায়ন হয়।’
এনসিপির এই নেতা জানান, মনোনয়নপত্র জমা দিতে সশরীরে আসার বিধান, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ইসি থেকে নির্বাচনের সার্টিফিকেশন দেওয়া, প্রার্থীর হলফনামা তদন্ত করে সত্যতা নিরূপণ করা, নির্বাচনী সহিংসতা বন্ধে আচরণবিধি ও ব্যয়ের বিধিতে পরিবর্তন আনা, ঋণখেলাপিকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখা, হলফনামায় ভুল তথ্য থাকলে প্রার্থিতা বাতিল ও নির্বাচিত হলেও যেন তারা সংসদে থাকতে না পারে সেই ব্যবস্থা করা, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়ানো, রাজনৈতিক দলগুলো যেন অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চা করে, তা তদারকি করার কথা তারা তুলে ধরা হয়েছে। নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, এগুলো বাস্তবায়ন না হলে নির্বাচনে যাওয়া ও ভোটাধিকার প্রয়োগ সম্ভব হবে না। এ ছাড়া প্রতিটি দলের নিবন্ধন নতুন করে নবায়ন করতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, এনসিপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর নির্বাচন কমিশন কার্যালয় আনুষ্ঠানিক কোনো ব্রিফিং করেনি। কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বৈঠকে ছিলাম না, এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
সূত্র: সমকাল