সর্বশেষ
পলাশবাড়ীতে চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারালো ৩ বছরের শিশু
সাঘাটা সমাজসেবা কর্মকর্তার অনিনয়ম-দুর্নীতির শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও  স্বারক লিপি প্রদান
চীনা হাসপাতাল নির্মাণ দাবি সাদুল্লাপুরবাসীর
বান্ধবীকে বিয়ে করলেন নায়িকা
দ্বিতীয় দিন শেষে ২৫ রানে পিছিয়ে বাংলাদেশ
চীনের ক্ষতি করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি করলে তার বিরোধিতা করব, হুঁশিয়ারি চীনের 
শেরপুরে দুই’শ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক
গরমে চোখ-মুখ ফোলাভাব কমাতে যা করতে পারেন
সিনিয়র এক্সিকিউটিভ পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে বসুন্ধরা গ্রুপ
পারভেজ হত্যায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি ঢাবি ছাত্রদলের
‘আমার বাবার কোনো কবর নেই, চার বছর ধরে লাশের খোঁজে আছি’
আল্লামা ইকবাল, মুসলিম জাতীয়তাবাদ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা একসূত্রে গাঁথা
ফ্রান্সিস, যিনি বদলে দিয়েছিলেন ক্যাথলিক চার্চকে
৩৩ বছরে কতজনকে ক্ষমা করেছেন রাষ্ট্রপতি, জানতে চান হাইকোর্ট
গোপন সামরিক তথ্য শেয়ার, ফের বিতর্কের মুখে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী

ফ্রান্সিস, যিনি বদলে দিয়েছিলেন ক্যাথলিক চার্চকে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস ৮৮ বছর বয়সে মারা গেছেন। দক্ষিণ আমেরিকার কোনো দেশ থেকে আসা প্রথম পোপ ছিলেন তিনি।

ক্যাথলিক চার্চের পোপ হওয়ার পর অনেক কিছুই প্রথমবার করলেও ফ্রান্সিস কখনো চার্চের সংস্কার কার্যক্রম বন্ধ করেননি। এরপরও পুরোনোকে আঁকড়ে ধরা ঐতিহ্যবাদীদের মধ্যেও তিনি সমানভাবে জনপ্রিয় ছিলেন। খবর বিবিসি বাংলার।

সিরিয়ায় জন্ম নেওয়া তৃতীয় গ্রেগরি ৭৪১ খ্রিস্টাব্দে মারা যাওয়ার পর থেকে রোমে আর কোনো অ-ইউরোপিয় বিশপ ছিলনা। সেন্ট পিটারের সিংহাসনে নির্বাচিত প্রথম জেসুইটও ছিলেন তিনি।

ঐতিহাসিকভাবেই জেসুইটদের রোম সন্দেহের চোখে দেখতো। (জেসুইট বলতে এখানে যিশু খ্রিস্টের সোসাইটির সদস্যকে বুঝায়। যারা অন্যদের সাহায্য করার জন্য, ন্যায়বিচার ও সবকিছুতে বিধাতাকে খুঁজে পাওয়ার জন্য নিবেদিত।)

ফ্রান্সিসের পূর্বসূরি ষোড়শ বেনেডিক্ট ছিলেন ছয়শ বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণকারী প্রথম পোপ। ফলে প্রায় এক দশক সময়ের মধ্যে ভ্যাটিকান গার্ডেন দুইজন পোপের দেখা পেয়েছে। আর্জেন্টিনার কার্ডিনাল বারগোগ্লিও ২০১৩ সালে পোপ হওয়ার সময় ৭০ বছর বয়সী ছিলেন। অনেক ক্যাথলিকরাই ধারণা করেছিলেন নতুন প্রধান যাজক বা পোপ বয়সে তরুণ হবেন।

বারগোগ্লিও নিজেকে একজন কম্প্রোমাইজ ক্যান্ডিডেট হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। যিনি একইসঙ্গে যৌন বিষয়ে কট্টর দৃষ্টিভঙ্গিসহ রক্ষণশীলদের এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের বিষয়ে উদার অবস্থানের কারণে সংস্কারপন্থিদের আকৃষ্ট করতে চেয়েছিলেন।

এটা আশা করা হয়েছিল যে, তার অরক্ষণশীল (আন -অর্থোডক্স) ব্যাকগ্রাউন্ড ভ্যাটিকানকে এবং এর মিশনকে পুনরুজ্জীবিত করতে সাহায্য করবে। কিন্তু ভ্যাটিকান আমলাতন্ত্রের কারণে ফ্রান্সিসের কিছু সংস্কার প্রচেষ্টা প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়েছিল। সেই সঙ্গে ২০২২ সালে মারা যাওয়া তার পূর্বসূরি তখনো রক্ষণশীলদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন।

আলাদা হতে দৃঢ়বদ্ধ

নির্বাচনের মুহূর্ত থেকে ফ্রান্সিস ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি সবকিছু ভিন্নভাবে করবেন। পোপের সিংহাসনে বসার পরিবর্তে দাঁড়িয়ে তিনি অনানুষ্ঠানিকভাবে কার্ডিনালদের গ্রহণ করেছিলেন।

২০১৩ সালের ১৩ মার্চ সেন্ট পিটার্স স্কয়ারের দিকে তাকিয়ে বারান্দায় আবির্ভূত হন পোপ ফ্রান্সিস। সাদা পোশাক পরে একটি নতুন নাম ধারণ করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস, যার মাধ্যমে ১৩ শতকের ধর্মপ্রচারক ও প্রাণী প্রেমিক অ্যাসিসির সেন্ট ফ্রান্সিসকে শ্রদ্ধা জানান।

আড়ম্বর ও জাঁকজমকের চেয়ে নম্রতার প্রতি জোর দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। পোপের লিমুজিন গাড়ি পরিত্যাগ করে বরং অন্যান্য কার্ডিনালদের সঙ্গে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার বাসে করে যাতায়াতের ওপর জোর দিয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।

বিশ্বজুড়ে ১.২ বিলিয়ন ডলারের চার্চগুলোর জন্য নতুন একটি নীতি তৈরি করেছিলেন নতুন পোপ। দরিদ্রদের জন্য আমি একটা দরিদ্র চার্চই দেখতে চাই বলেছিলেন তিনি।

হোর্হে মারিও বারগোগ্লিও ১৯৩৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্সে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। ফ্যাসিবাদ থেকে বাঁচতে তার বাবা-মা তাদের জন্মস্থান ইতালি থেকে পালিয়ে সেখানে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে নিউমোনিয়ায় ভয়াবহভাবে আক্রান্ত হওয়ার পর এক অপারেশনের মাধ্যমে ফুসফুসের একটি অংশ অপসারণ করতে হয়েছিল তার। পরবর্তীতে এটি তাকে সারা জীবন সংক্রমণের জন্য সংবেদনশীল করে তুলেছিল।

একজন বয়স্ক মানুষ হিসেবে ডান হাটুঁতে ব্যথায়ও ভুগছিলেন তিনি। এটিকে শারীরিক অবমাননা হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন তিনি। একজন রসায়নবিদ হিসেবে স্নাতক হওয়ার আগে তরুণ বারগোগ্লিও একটি নাইটক্লাবে বাউন্সার এবং ফ্লোর সুইপার হিসেবে কাজ করেছিলেন।

স্থানীয় একটি কারখানায় তিনি এস্থার ব্যালেস্ট্রিনোর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতেন। যিনি আর্জেন্টিনায় সামরিক স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিলেন।

ফ্রান্সিস দর্শনে পড়াশোনা করেছিলেন এবং সাহিত্য ও মনোবিজ্ঞানও পড়েছিলেন। তিনি জেসুইট হয়েছিলেন। প্রায় এক দশক পরে দ্রুত পদোন্নতি পান তিনি। ১৯৭৩ সালে আর্জেন্টিনার প্রাদেশিক সুপিরিয়র পদে পদোন্নতি পান তিনি।

অভিযোগ

কেউ কেউ মনে করেন পোপ ফ্রান্সিস আর্জেন্টিনার নৃশংস সামরিক শাসনের জেনারেলদের বিরোধিতা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আর্জেন্টিনার ডার্টি ওয়ারের সময় দুই যাজকের সামরিক অপহরণে জড়িত থাকার অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল।

এটি এমন একটি সময় যখন ১৯৭৬ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত হাজার হাজার লোককে নির্যাতন করা হয়েছিল বা হত্যা করা হয়েছিল অথবা তারা নিখোঁজ হযেছিল।

দুইজন যাজককে নির্যাতন করা হয়েছিলো। যদিও ঘুমের ওষুধ দেওয়া ও অর্ধ-উলঙ্গ অবস্থায় তাদের শেষ পর্যন্ত জীবিত পাওয়া গিয়েছিল। ওই দুই যাজক দরিদ্র এলাকায় যে কাজ করছিলেন, সেটার জন্য চার্চের অনুমোদন রয়েছে, এমন তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানাতে বারগোগ্লিও জানাতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল। এটা সত্য হলে তাদেরকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার সমান ছিল।

এই অভিযোগ তিনি স্পষ্টভাবেই অস্বীকার করেছিলেন। জোর দিয়ে বলেছিলেন তিনি তাদের মুক্ত করার জন্য পর্দার আড়ালে কাজ করেছিলেন। কেন তিনি কথা বলেননি জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, এটি খুব কঠিন ছিল।

এটা সত্যি ৩৬ বছর বয়সে তিনি তখন নিজেকে এমন একটি বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে পড়েছিলেন, যে রকম পরিস্থিতি সামলানো অনেক দক্ষ নেতার পক্ষেও কঠিন। অবশ্য অনেককে তিনি সাহায্য করেছিলেন যারা দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেছিল।

তার সহকর্মী জেসুইটদের সঙ্গেও তার মত পার্থক্য ছিল যারা বিশ্বাস করতেন বারগোগ্লিও মুক্তির ধর্মতত্ত্বের প্রতি আগ্রহের অভাব রয়েছে- যে ধর্মতত্ত্বে খ্রিস্টীয় চিন্তাভাবনা এবং মার্কসীয় সমাজবিজ্ঞানের সংমিশ্রণের কথা বলা হয়, যা অন্যায়কে উৎখাতের কথা বলে। বরং তিনি যাজকীয় সমর্থনের একটি মৃদু রূপ পছন্দ করতেন। অনেক সময় তাদের সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব তৈরি করতো।

২০০৫ সালে যখন তিনি প্রাথমিকভাবে পোপ হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন তখন কিছু জেসুইট স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল।

সরল রুচির মানুষ

১৯৯২ সালে তিনি বুয়েনোস আয়ার্সের অক্সিলিয়ারি বিশপ নামে দায়িত্ব পান এবং পরবর্তীতে আর্চবিশপ হন। দ্বিতীয় পোপ জন পল ২০০১ সালে তাকে কার্ডিনাল ঘোষণা করেন। তিনি চার্চের প্রশাসনিক দায়িত্ব- কুরিয়া পদ গ্রহণ করেন।

একজন প্রবীণ ধর্মগুরুর অনেক ফাঁদ এড়িয়ে সরল রুচির মানুষ হিসেবে খ্যাতি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। তার নতুন পদের জন্য নির্ধারিত লাল এবং বেগুনি রঙের গাউনের পরিবর্তে তিনি যাজকদের কালো গাউন পরতে পছন্দ করতেন তিনি। বিমান যাত্রায় তিনি ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করতেন।

তার ধর্মোপদেশে সামাজিক অন্তর্ভুক্তির আহ্বান জানান পোপ ফ্রান্সিস। একইসঙ্গে সমাজের সবচেয়ে দরিদ্র মানুষের প্রতি মনোযোগ দিতে সরকারগুলোর ব্যর্থতার সমালোচনা করেন তিনি।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের সবচেয়ে অসম অংশে বাস করি। যা সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, এখনো দুঃখ একেবারেই নগণ্য কমিয়েছে।

পোপ হিসেবে তিনি ইস্টার্ন অর্থোডক্স চার্চের সঙ্গে হাজার বছরের ফাঁটল দূর চেষ্টা করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে ১০৫৪ সালের গ্রেট স্কিজমের পর প্রথমবারের মতো কনস্টান্টিনোপলের প্যাট্রিয়াক রোমের নতুন বিশপের প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন।

ফ্রান্সিস অ্যাঙ্গিকানস, লুথারানস এবং ম্যাথোডিস্টদের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ইসরাইলি এবং ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্টদের তার সঙ্গে শান্তি প্রার্থনায় যোগ দিতে রাজি করিয়েছিলেন।

ইসলামপন্থি সশস্ত্র গোষ্ঠীদের হামলার পর তিনি বলেন, সহিংসতা দিয়ে ইসলামকে চিহ্নিত করা ঠিক নয়।

তিনি ঘোষণা করেন, আমি যদি ইসলামিক সহিংসতার কথা বলি তাহলে আমাকে ক্যাথলিক সহিংসতার কথাও বলতে হবে।

রাজনৈতিকভাবে ফকল্যান্ডের ওপর আর্জেন্টিনা সরকারের দাবির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন তিনি। তিনি বলেছিলেন, আমরা তাদের জন্য প্রার্থনা করতে এসেছি যারা এই স্বদেশের সন্তান। যারা তাদের মা, তাদের স্বদেশকে রক্ষা করার জন্য এবং নিজের দেশের দাবির জন্য লড়ছে।

একজন স্প্যানিশ ভাষার ল্যাটিন আমেরিকান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের সরকার যখন কিউবার সঙ্গে ঐতিহাসিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে এগুচ্ছিল তখন তিনি মধ্যস্থতাকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। একজন ইউরোপীয়ান পোপ এমন সমালোচনামূলক কূটনৈতিক ভূমিকা পালন করবেন তা কল্পনা করা কঠিন।

প্রাচীনপন্থি

পোপ ফ্রান্সিস একজন প্রাচীনপন্থি (ট্রাডিশনাল) ছিলেন। তার সঙ্গে সেমিনারিতে থাকা মনসিগনর অসভালদো মুস্তোর মতে, তিনি ছিলেন পোপ জন পল-২ এর মতো আপোষহীন। মৃত্যুদণ্ড, গর্ভপাত, জীবনের অধিকার, মানবাধিকার এবং পুরোহিতদের ব্রহ্মাচর্যের বিষয়ে আপোষহীন ছিলেন তিনি।

তিনি বলেছিলেন, লিঙ্গভেদ বা যৌন পরিচয় বিবেচনা করে চার্চের উচিত সব মানুষকে স্বাগত জানানো। কিন্তু জোর দিয়ে বলেন যে সমকামী দম্পতিদের শিশু দত্তক নেওয়া শিশুদের প্রতি এক ধরনের বৈষম্য।

সমকামীদের পক্ষে তিনি কখনো কখনো কিছু ভালো কথা বলেছেন, কিন্তু পোপ ফ্রান্সিস কখনো সমকামী বিয়ের পক্ষে ছিলেন না। তিনি বলেন, এটি হবে বিধাতার পরিকল্পনা ধ্বংস করার একটি প্রচেষ্টা।

২০১৩ সালে পোপ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি রোমে গর্ভপাতবিরোধী একটি মিছিলে অংশ নিয়েছিলেন। গর্ভধারণের মুহূর্ত জন্ম না নেওয়া শিশুদের অধিকারের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি গাইনোকোলোজিস্টদের বিবেককে জাগ্রত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন।

সেই সঙ্গে আয়ারল্যান্ডবাসীদের উদ্দেশ্য বার্তা দিয়েছিলেন যেন তারা দুর্বলদের রক্ষা করে। সেই সময় আয়ারল্যান্ডে এই বিষয়ে একটি গণভোটের আয়োজন চলছিল।

তিনি নারীদের ধর্মপ্রচারের বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে পোপ দ্বিতীয় জন পল দ্বি একবার এবং সর্বদা এই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

প্রথমে ধারণা করা হয়েছিল যে, রোগ প্রতিরোধে গর্ভনিরোধক সামগ্রী ব্যবহার করা যেতে পারে বলে তিনি অনুমোদন দিয়েছেন। কিন্তু এই বিষয়ে তিনি ষষ্ঠ পল এর বাণীর প্রশংসা করেছিলেন যাতে সতর্ক করা হয়েছিল এটি নারীদেরকে পুরুষের সন্তুষ্টির উপকরণে পরিণত করতে পারে।

২০১৫ সালে, পোপ ফ্রান্সিস ফিলিপাইনে এক অনুষ্ঠানে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন যে গর্ভনিরোধক শিশুদের অভাবের মাধ্যমে পরিবারকে ধ্বংস করতে পারে।

শিশু না থাকাকে তিনি যতটা না ক্ষতিকারক বলে মনে করেছেন, তার চেয়ে বেশি ক্ষতিকর মনে করেছেন শিশুদের এড়িয়ে চলার ইচ্ছাকৃত সিদ্ধান্তকে।

শিশু নির্যাতন মোকাবিলা

পোপ হিসেবে তার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ দুই দিক থেকে এসেছিল। একদিকে যারা শিশু নির্যাতন মোকাবিলায় ব্যর্থ হওয়ার জন্য তাকে অভিযুক্ত করেছিল, আরেকদিকে রক্ষণশীল সমালোচক যারা মনে করছিলো তিনি বিশ্বাসকে নড়বড়ে করছেন।

বিশেষ করে ডিভোর্স হওয়া এবং পুনরায় বিয়ে দেওয়ার জন্য ক্যাথলিকদের কমিউনিয়ন গ্রহণের অনুমতি দেওয়ার জন্য তার নেওয়া পদক্ষেপগুলোর জন্য তাদের বেশি অভিযোগ ছিল। রক্ষণশীলরাও তাদের দীর্ঘদিনের প্রচারণায় শিশু নির্যাতনের বিষয়টিকে অস্ত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিল।

২০১৮ সালের আগস্টে আর্চবিশপ কার্লো মারিয়া ভিগানো, যুক্তরাষ্ট্রের একজন সাবেক অ্যাপোস্টলিক নানসিও (একজন ধর্মীয় কূটনীতিক) ১১ পৃষ্ঠার যুদ্ধ ঘোষণা করেন।

তিনি সাবেক একজন কার্ডিনাল টমাস ম্যাকক্যারিকের আচরণ সম্পর্কে ভ্যাটিকানকে দেওয়া একাধিক সতর্কতার বর্ণনা দিয়ে একটি চিঠি প্রকাশ করেছিলেন।

এতে অভিযোগ করা হয়েছিল ম্যাককারিক একজন সিরিয়াল নিপীড়নকারী ছিলেন, যিনি প্রাপ্তবয়স্ক এবং নাবালক উয়কেই আক্রমণ করেছিলেন।

পোপ আর্চবিশপ ভিগানো বলেছেন, গভীরভাবে দুর্নীতিতে জড়িত থাকা সত্ত্বেও তাকে বিশ্বস্ত কাউন্সিলর বানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে পরিষ্কার সমাধান দিয়ে তিনি বলেছিলেন, পোপ ফ্রান্সিসের পদত্যাগ করা উচিত।

আর্চবিশপ ভিগানো দাবি করেছিলেন, এই সমকামী নেটওয়ার্কগুলো গোপনীয়তার আড়ালে কাজ করে, মিথ্যা বলে এবং পুরো চার্চকে শ্বাসরোধ করছে।

ভ্যাটিকানের তদন্তের পর অবশেষে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যাককারিককে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।

কোভিড মহামারীর সময়ে এ ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া রোধ করতে পোপ ফ্রান্সিস সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে তার নিয়মিত উপস্থিতি বাতিল করেছিলেন। নৈতিক নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে তিনি ঘোষণা করেছিলেন টিকা দেওয়া একটি সার্বজনীন বাধ্যবাধকতা।

২০২২ সালে, এক শতাব্দীরও বেশি সময় পরে প্রথম পোপ হিসেবে তিনি তার পূর্বসূরিকে সমাহিত করেন – ৯৫ বছর বয়সে বেনেডিক্টের মৃত্যুর পর। কিন্তু পরে তার নিজেরই স্বাস্থ্যগত সমস্যা তৈরি হয়েছে ও বেশ কয়েকবার হাসপাতালেও যেতে হয়েছে। কিন্তু ফ্রান্সিস বিশ্ব শান্তি ও আন্তঃধর্মীয় সংলাপের প্রচারে তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন।

দক্ষিণ সুদানের সংঘাত অবসানের জন্য সে দেশের নেতাদের আহ্বান জানাতে ২০২৩ সালে তিনি সেখানে তীর্থযাত্রা করেছিলেন। ইউক্রেনের অযৌক্তিক এবং নিষ্ঠুর যুদ্ধ অবসানের আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।

এক বছর পরে, তিনি চার দেশ, দুই মহাদেশের একটি দীর্ঘ এবং ঘটনাবহুল দুঃসাহসিক যাত্রা শুরু করেছিলেন। ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি এবং সিঙ্গাপুরে যাত্রাবিরতি দিয়েছিলেন।

জর্জ মারিও বারগোগ্লিও সেন্ট পিটারের সিংহাসনে বসে সেটি পরিবর্তন করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন। নন-ইউরোপিয়ান দেশ থেকে তিনি ১৪০ জন কার্ডিনালকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। তিনি তার উত্তরাধিকারীর জন্য এমন একটি চার্চ রেখে গেছেন যা অনেক বেশি বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গিমূলক।

ফ্রান্সিস পরিচিত ছিলেন নো-ফ্রিলস (নম্র ভূমিকা) পোপ হিসেবে। যিনি ভ্যাটিকানের সিস্টিন চ্যাপেলের সঙ্গে যুক্ত অ্যাপোস্টোলিক প্রাসাদে না থেকে বরং পাশের আধুনিক ভবনে থাকতেন, যেটি পোপ ষষ্ঠ জন পল অতিথিশালা হিসাবে তৈরি করেছিলেন।

তিনি বিশ্বাস করতেন, অন্য যেকোনো কিছু অহংকারের সামিল। তিনি বলতেন, ময়ূরের দিকে তাকান, সামনে থেকে দেখলে এটা সুন্দর। কিন্তু আপনি যদি পেছন থেকে দেখেন তবে সত্যটি আবিষ্কার করবেন।

তিনি আশা করেছিলেন এই প্রতিষ্ঠানটিতে একটা পরিবর্তন আনতে পারবেন। অভ্যন্তরীণ বিবাদ এড়িয়ে দরিদ্রদের দিকে মনোনিবেশ করে এবং চার্চকে জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে চার্চের ঐতিহাসিক মিশনকে উন্নত করতে পারবেন বলে আশা করেছিলেন ফ্রান্সিস।

নির্বাচনের পরপরই তিনি বলেছিলেন, আমাদেরকে চার্চের নিজের জগতে জড়িয়ে থাকা আধ্যাত্মিক অসুস্থতা (স্পিরিচুয়াল সিকনেস) এড়াতে হবে।

তিনি বলেছিলেন, যদি আমাকে পথে (প্রকাশ্যে) নেমে আসা আহত চার্চ আর অসুস্থ কিন্তু আত্মত্যাগী চার্চের মধ্যে একটিকে বেছে নিতে হয়, তাহলে আমি প্রথমটিকে বেছে নেবো।

 

সূত্র: যুগান্তর

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ