বিবাহ একটি মধুর সম্পর্ক গড়ার অন্যতম উপায়। এটি মানসিকতার প্রশান্তি দেয়। বিবাহের পর অনেকের জীবনেই অর্জিত হয় অনাবিল সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি। আসে একটি কোমল-স্বচ্ছ জীবন।
কিন্তু কখনও কারও জীবনে নিয়ে আসে হতাশা ও অস্থিরতা। স্বামী-স্ত্রীর যে মধুর সম্পর্ক হওয়ার কথা ছিল, সেটি আর বহাল থাকে না। কখনও তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে যায় তার সোনালী দিনের সম্পর্ক। জীবনের সেই সোনাঝরা দিনগুলো স্মৃতি হয়ে যায়।
ইসলাম ধর্মে তালাকের মাধ্যমে ইতি ঘটে স্বামী-স্ত্রীর সেতুবন্ধন। কিন্তু ইসলামি শরিয়ত নির্দেশ দেয়, প্রাথমিকভাবে তালাক না দিতে, ধৈর্যের শিক্ষা গ্রহণ করতে। এজন্য হাদিসে বলা হয়েছে, বৈধ বিষয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে মন্দ বিষয় হলো–তালাক প্রদান করা। (আবু দাউদ: ২১৭৮)
এভাবে ধৈর্যধারণ করার পরও যদি স্ত্রী অবাধ্য-ই থেকে যায়, তখন স্ত্রীকে তালাক প্রদানের অনুমতি দিয়েছে। তবে তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলাম একটি সুন্দর পরামর্শ দিয়েছে–যা সর্বজনীন হিসেবে বিবেচিত।
এজন্য ইসলাম তিনটি পদ্ধতি নির্বাচন করেছে। প্রতিটির আলাদা আলাদা বিধানও নির্ধারণ করেছে। তালাক প্রদানের তিনটি পদ্ধতি হলো–তালাকে আহসান, তালাকে হাসান, তালাকে বিদয়ি। প্রথম দুটিকে আবার ‘তালাকে সুন্নি’ও বলা হয়ে থাকে।
‘তালাকে আহসান’ হলো–মহিলাদের ঋতুস্রাব-এর পরবর্তী তুহর তথা পবিত্রতার সময় কেবল এক তালাক প্রদান করা। তবে পবিত্রতার সময় সহবাসকৃতা না হতে হবে। এবং তিনটি ঋতুস্রাব পর্যন্ত এভাবেই রেখে দেওয়া। এটি তিন প্রকারের মধ্যে সর্বোত্তম পদ্ধতি। রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সাহাবিরা এটাকে পছন্দ করতেন।
এটাকে উত্তম বলার কিছু কারণও পাওয়া যায়, তন্মধ্যে একটি হলো–কখনও স্বামী-স্ত্রীর দীর্ঘদিনের সম্পর্কে ভাঁটা পড়ে স্রেফ তুচ্ছ বিষয় নিয়ে। একপর্যায়ে রাগের বশবর্তী হয়ে তালাক প্রদান করতে সিদ্ধান্ত নেয় স্বামী। তাড়াহুড়ো করে স্ত্রীকে তালাক দিয়ে দেয়। কিন্তু পরবর্তীতে আক্ষেপের কোনো সীমা থাকে না।
এজন্য ইসলামের বিধান বলছে–এক তালাক দিতে, যাতে কখনও ফিরিয়ে আনার ইচ্ছে থাকলে আবার আনা সম্ভব হয়।
তালাকে হাসান হলো–পূর্ব সহবাসকৃতা স্ত্রীকে ঋতুস্রাব পরবর্তী তিনটি তুহুর বা পবিত্রতায় একটি করে তিনটি তালাক প্রদান করা। বৃদ্ধা বা বয়সের স্বল্পতার দরুন ঋতুস্রাব না হলে প্রতি একমাস পরে একটি করে মোট তিনটা তালাক দেওয়া; তবে এ ক্ষেত্রেও তিনটি তুহুরে-ই তথা পবিত্রতায় সহবাস না পাওয়া যেতে হবে। এ প্রকারের হুকুম হলো–এটা জায়েয তথা বৈধ।
তালাকে বিদয়ি হলো–স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন তালাক দেওয়া। যেমন বলা, ‘যা তোরে তিন তালাক দিয়ে দিলাম।’এভাবেও হতে পারে,পূর্ব সহবাসকৃতা স্ত্রীকে একই তুহুরে দুই বা তিন তালাক প্রদান করা। অথবা স্ত্রীর ঋতুস্রাবের সময় এক তালাক প্রদান করা।
এভাবে তালাক প্রদান করা শরিয়তে বৈধ নয়। কিন্তু অবৈধ হলেও তালাক পতিত হয়ে যাবে। তবে ঋতুস্রাব অবস্থায় এক তালাক দিলে ফিরিয়ে আনা উত্তম।
হাদিসে এসেছে,ইবনে ওমর রা. তার স্ত্রীকে ঋতুস্রাব অবস্থায় তালাক দেন। তখন নবীজি সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে ফিরিয়ে আনতে নির্দেশ দেন। (বাদায়েউস-সানায়ে: ৩/১৪০,১৪১,১৪৯; হিদায়া: ২/ ২৫৪,২৫৬,২৫৭)
লেখক: শিক্ষার্থী, শাইখ জাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার ঢাকা
সূত্র: যুগান্তর