যেখানে অন্য শরণার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিতাড়িত করা হচ্ছে অথবা প্রবেশে বাধা দেওয়া হচ্ছে, সেখানে দেশটির কর্মকর্তারা দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের আশ্রয় প্রার্থনার আবেদন যাচাই–বাছাই করার জন্য তাঁদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। শ্বেতাঙ্গদের দাবি, তাঁরা দক্ষিণ আফ্রিকায় ভূমি নিয়ে বিরোধ, অপরাধ ও বর্ণবাদের শিকার হচ্ছেন।
এ কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার এসব শ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন। এমন কয়েকজন আবেদনকারী প্রিটোরিয়ায় প্রথম দফা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওই সাক্ষাৎকার তাঁদের কাছে ইতিবাচক মনে হয়েছে। কর্মকর্তারা তাঁদের এবং তাঁদের নিপীড়নের বর্ণনার প্রতি সহানুভূতিশীল মনোভাব দেখিয়েছেন।
এ বিষয়ে জানা আছে এমন এক ব্যক্তি বলেছেন, ৩০ জনের বেশি আবেদনকারী এরই মধ্যে অনুমোদন পেয়েছেন।
মার্ক নামে দক্ষিণ আফ্রিকার একজন কৃষক বলেছেন, ‘দূতাবাসের কর্মীরা অসাধারণ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন। আমি তাঁদের মধ্যে থাকা সহানুভূতি অনুভব করতে পারছিলাম।’
যেহেতু প্রক্রিয়াটি গোপনীয়, তাই মার্ক চাননি তাঁর পুরো নাম প্রকাশ করা হোক।
ট্রাম্প প্রশাসন ও প্রিটোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে বা কতজনের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে এবং কতজনকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে রাজি হয়নি।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশ জারি করেন। ওই আদেশে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার শরণার্থীদের পুনর্বাসনের আহ্বান জানানো হয়। ওই আদেশে বলা হয়, দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানাররা অন্যায্য জাতিগত বৈষম্যের শিকার।
দক্ষিণ আফ্রিকার যেসব নাগরিকের আদিপুরুষ ইউরোপ, বিশেষ করে নেদারল্যান্ডস থেকে এসে দেশটিতে বসতি স্থাপন করছেন, তাঁদের আফ্রিকানার বলা হয়। দেশটিতে বাণিজ্যিকভাবে কৃষি উৎপাদনের অনেকটাই আফ্রিকানারদের নিয়ন্ত্রণে।
দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানারদের নিয়ে ওই আদেশ জারির আগে নিরাপত্তা ও ব্যয় কমানোর কথা বলে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার সব আবেদনপ্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন। এতে আবেদন যাচাই করা হয়েছে এবং অনুমোদন দেওয়া হয়েছে—এমন অনেক আফগান ও গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোর নাগরিকসহ অন্যান্যের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ আটকে যায়। এসব আশ্রয়প্রার্থী নিজ দেশের লড়াই-সংঘাত থেকে প্রাণে বাঁচতে শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেছিলেন।
তাঁদের আবেদনপ্রক্রিয়া স্থগিত করে কেন দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় পাওয়ার আবেদনের দিকে ট্রাম্প প্রশাসন অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।
ট্রাম্পের প্রভাবশালী উপদেষ্টাদের একজন ইলন মাস্ক। মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ বংশোদ্ভূত। মাস্কের জন্ম দক্ষিণ আফ্রিকায়, শৈশবও সেখানেই কাটিয়েছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার অনেক শ্বেতাঙ্গের মতো মাস্কও দাবি করেন, দেশটিতে শ্বেতাঙ্গদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এমনকি তাঁরা ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যার’ শিকার। কয়েক বছর ধরে দক্ষিণ আফ্রিকায় উগ্র ডানপন্থীদের মধ্যে এই দাবি ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণ আফ্রিকায় ‘দীর্ঘ দিন ধরে যাঁরা কৃষিকাজ করছেন, তাঁদের সঙ্গে ভয়ংকর আচরণ করা হচ্ছে’—এমন অভিযোগ তুলে ট্রাম্প দেশটির জন্য ত্রাণসহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন। এখানে দীর্ঘদিনের চাষি বলতে ট্রাম্প শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানার কৃষকদের কথা বলেছেন।
দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার বলছে, দেশটির শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যে ৬০ শতাংশ আফ্রিকানার। তাঁরা দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ৭ দশমিক ২ শতাংশ।
আন্তর্জাতিক একাডেমিক জার্নাল দ্য রিভিউ অব পলিটিক্যাল ইকোনমির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় গড়ে একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবার একটি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবার থেকে ২০ গুণ বেশি সম্পদের মালিক। শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে বেকারত্বের হারও কয়েক গুণ বেশি।
দক্ষিণ আফ্রিকার তিন-চতুর্থাংশ ব্যক্তিমালিকানার ভূমি এখনো শ্বেতাঙ্গদের মালিকানায় এবং তাদের উচ্ছেদের চেষ্টার কোনো লক্ষণও নেই।
সূত্র: প্রথম আলো