বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারের রাখাইনের জন্য মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, করিডোর দেওয়া না দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে। কারণ, এ ধরনের সিদ্ধান্ত স্পর্শকাতর।
আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার নয়াপল্টনে মহান মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেন। এই সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।
তারেক রহমান বলেন, বিদেশি স্বার্থ নয়, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ভারত, পাকিস্তান কিংবা মিয়ানমার নয়, সবার আগে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, ১৮ কোটি মানুষের দেশে প্রায় আট কোটি মানুষই শ্রমজীবী। এসব শ্রমজীবীরাই এ দেশের প্রাণ। উন্নয়ন ও অর্থনীতির প্রাণ তারাই। মেহনতি মানুষকে বঞ্চিত রেখে মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়। ফ্যাসিবাদের পতন ঘটলেও আজ পর্যন্ত জনগণের রাজনৈতিক অধিকার পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা না হওয়ায় শ্রমজীবী মানুষ তাদের ন্যায্য অধিকার নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। কিন্তু কোনো নেতাকর্মীকে বিদেশে পালিয়ে যেতে হয়নি। কারণ, আমরা জনগণের রাজনীতিতে বিশ্বাস করি। জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, শিল্প-কারখানা থেকে শুরু করে সর্বত্র শ্রমিকরা এখনো নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি দেখা গেলেও সাধারণ মানুষের আয় বাড়ছে না।
সংস্কারের প্রসঙ্গ টেনে তারেক বলেন, দেশে সংস্কার নিয়ে শোরগোল চলছে। কিন্তু সেই কর্মযজ্ঞে শ্রমজীবী মানুষের কণ্ঠস্বর কোথায়? রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে জনগণের কথা পৌঁছাতে নির্বাচিত সংসদ ও সরকার প্রয়োজন। কারণ, প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিতরা জনগণের কথা শুনতে বাধ্য।
তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনের জন্য যেমন প্রয়োজনীয় সংস্কার দরকার, তেমনি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন অপরিহার্য।’
অভিযোগ করে তারেক রহমান বলেন, ‘সরকারের একটা অংশ সংস্কার ও নির্বাচন মুখোমুখি দাঁড় করাতে চায়। এটা সঠিক পথ নয়। প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করে অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে।’
এর আগে বেলা ২টার দিকে রাজধানীর নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমাবেশ শুরু হয়।
সমাবেশ ঘিরে বেলা ১২টা থেকে রাজধানী এবং এর আশপাশের জেলা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শ্রমিক নেতারা নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনে জড়ো হন। এতে নয়াপল্টন এলাকায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নেতাকর্মী-সমর্থকদের জমায়েত ফকিরাপুল থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। হাজারো শ্রমিকের উপস্থিতি সমাবেশটি রূপ নিয়েছে জনসমুদ্রে।
সমাবেশ ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়। রঙিন টুপি, টি-শার্ট, ব্যানার ও ঢোল নিয়ে উপস্থিত হন শ্রমিক নেতারা। তাদের কন্ঠে স্লোগান ওঠে-‘দুনিয়া মজদুর এক হও, লড়াই করো’। শ্রমিকদের এ সার্বজনীন স্লোগানের পাশাপাশি ‘অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন চাই, নির্বাচন দিতে হবে, দিতে হবে’ এ স্লোগানও উচ্চারিত হয়।
এর আগে গতকাল বুধবার শ্রমিকদলের সমাবেশে সংগঠনের ১২ দফা দাবি তুলে ধরার কথা বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভী। সমাবেশের প্রস্তুতি তুলে ধরার জন্য আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, শ্রমিক দলের ১২ দফা দাবির মধ্যে আছে, অবিলম্বে সংসদ নির্বাচন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার, সকল প্রতিষ্ঠানে ডে-কেয়ার সেন্টার, বন্ধ শিল্প চালু, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা, আউট সোর্সিং বন্ধ করে স্থায়ী পদ সৃষ্টি, অবাধ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার, শ্রমিক হত্যার বিচার, শ্রমিক নির্যাতন বন্ধ, নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন সুরক্ষা নিশ্চিত করা, জাতীয় নুন্যতম মজুরি ৩০ হাজার টাকা, বৈষ্যমহীন জাতীয় পে-স্কেল ও মজুরি হার ঘোষণা, জরুরি পরিষেবা আইনসহ সকল কালাকানুন বাতিল এবং খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম কমানো।
সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা। শ্রমিকদলের সভাপতি আনোয়ার হোসেইনের সভাপতিত্বে সমাবেশে শ্রমিক দলের প্রধান সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমূল বিশ্বাস, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, মজিবুর রহমান সারওয়ার, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আবদুস সালাম আজাদ বক্তব্য দেন।