যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য গ্রীষ্মকালীন ছুটি মানেই সাধারণত ভ্রমণের সুযোগ। কেউ ফিরে যান নিজ দেশে, কেউ ঘুরে বেড়ান যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে। কিন্তু সাম্প্রতিক ভিসা সংকট ও অভিবাসন সংক্রান্ত কড়াকড়ির কারণে অনেক শিক্ষার্থী এখন ভ্রমণের ব্যাপারে দ্বিতীয়বার ভাবছেন, এমনকি দেশেই অবস্থান করেও ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, সান দিয়েগোর পিএইচডি প্রোগ্রামের এক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে হাওয়াই যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অনেক আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীর বৈধ অভিবাসন মর্যাদা হঠাৎ করেই বাতিল হওয়ায় সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সম্ভবত আমি এই ভ্রমণ বাদই দেব। যতটা সম্ভব সরকারের সঙ্গে কম সংস্পর্শে থাকা ভালো,’—নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান ওই শিক্ষার্থী।
নতুন নির্দেশনায় উদ্বেগ বাড়ছে
সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালত কিছু শিক্ষার্থীর অভিবাসন মর্যাদা বাতিলের ঘটনায় যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করলে, সরকার কিছু সিদ্ধান্ত ফিরিয়ে নেয়। কিন্তু এরপরই অভিবাসন কর্তৃপক্ষ একটি নতুন নীতিমালা জারি করে, যেখানে শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিলের ভিত্তিতে বৈধ অবস্থান হারানোর সুযোগ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে, যদি কোনও শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল হতো, তবু তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারতেন। তবে নতুন নিয়মে সেই সুযোগ কমে গেছে।
ভ্রমণের ঝুঁকি নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা
উত্তর ক্যারোলিনায় অবস্থিত অভিবাসন আইনজীবী ঋষি ওজা জানান, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে প্রতিদিনই আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন অভিবাসন মর্যাদার মানুষজন ভ্রমণের ঝুঁকি নিয়ে তার অফিসে যোগাযোগ করছেন।
তিনি বলেন, ‘ভাবতে কষ্ট হয়, আমরা কীভাবে এমন জায়গায় এসে পৌঁছালাম? এটাই কি আমেরিকার স্বভাব?’
প্রভাব পড়ছে শিক্ষাক্ষেত্রে
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। তবে অভিবাসন সংক্রান্ত এই কড়াকড়ি এবং অনিশ্চয়তা অনেক শিক্ষার্থীর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে পড়াশোনার গন্তব্য হিসেবে অনাকর্ষণীয় করে তুলছে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের অনেকেই গ্রীষ্মকালীন ছুটি উপভোগের পরিবর্তে নিরাপত্তার কথা ভেবে ঘরে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। এর ফলে শুধু শিক্ষার্থীরাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কিন শিক্ষা ব্যবস্থা এবং দেশের ভাবমূর্তিও।
সূত্র- টাইমস অব ইন্ডিয়া