সর্বশেষ
বিমানবন্দর থেকে নিষিদ্ধ আ. লীগ নেতা গ্রেপ্তার
চুয়াডাঙ্গায় শিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা
‘অর্থের অভাবে যেন থেমে না যায় স্বপ্ন’ শিক্ষার্থীদের পাশে ছাত্রদল নেতা রবিউল
আওয়ামী লীগ নেতাদের নাম দিয়ে শাহবাগে গরু-ছাগল জবাই
বিদেশে চিকিৎসার জন্য যে পরিমাণ ডলার নেওয়া যাবে
রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি জানালেন লুৎফে সিদ্দিকী
হাসিনার দুঃস্বপ্নই কাল হলো আওয়ামী লীগের
১৭ ও ২৪ মে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ চলবে
বাবার ৪ বিয়ে দেখে বলিউড অভিনেত্রীর ৬ বার প্রেম
নিজেদের বিলুপ্তির ঘোষণা দিল পিকেকে
‘কোহলির অবসর’ নিয়ে যা বললেন লিটন দাস
‘আবদুল হামিদের জন্য আমার পরিবারকে বিবেচনা করা ভুল সিদ্ধান্ত’
আ. লীগ-জাপাসহ ১৪ দলের নিবন্ধন বাতিল চায় গণঅধিকার পরিষদ
কী বলা আছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপনে?
বিলাসবহুল উড়োজাহাজে যেসব সুবিধা পাবেন ট্রাম্প

হাসিনার দুঃস্বপ্নই কাল হলো আওয়ামী লীগের

অনলাইন ডেস্ক

চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরে আসার যেটুকু সম্ভাবনা ছিল, তা শেখ হাসিনা নিজেই শেষ করে দিয়েছেন। তার চরম দাম্ভিকতা এবং প্রতিবিপ্লব ঘটানোর দুঃস্বপ্ন পুরো দলকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়েছে। যার ফলে ছাত্র-জনতার দাবির মুখে শনিবার উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগের সব কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এখন দলের নিবন্ধন বাতিল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুগান্তরকে এমনটি জানিয়েছেন কয়েকজন জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

তারা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট জীবন নিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেলেও দেশে রেখে যাওয়া দল এবং দলের নেতাকর্মীদের বাঁচাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি শেখ হাসিনা। জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধসহ ক্ষমতায় থাকার সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসন ও লুটপাটের জন্য তার উচিত ছিল জাতির কাছে ভুল স্বীকার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু সেটি না করে উল্টো ভারতে বসে অন্তর্বর্তী সরকারকে উৎখাত করার জন্য অব্যাহতভাবে দলের নেতাকর্মীদের উসকানি দিয়েছেন। প্রতিবিপ্লব ঘটিয়ে দলের সবাইকে রাস্তায় নেমে আসার নির্দেশও দেন। যদিও তার এমন উসকানিতে সাড়া দিতে গিয়ে অনেকে এখন কারাগারে। বাকিরা নতুন করে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর ফলে ‘আওয়ামী লীগ’ নামে দলটির নেতাকর্মীরা বাংলাদেশে আর রাজনীতি করতে পারবেন না। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনে দলটির বিচার হবে। এ বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকবে। ওইদিন একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এতে কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গ-সংগঠন বা সমর্থকগোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবেন ট্রাইব্যুনাল। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধন প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।

গণফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এ প্রসঙ্গে রোববার যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি দলের ভেতরে এবং দেশ চালাতে গিয়ে ক্রমেই একনায়ক হয়ে উঠেছিলেন। যে কারণে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে তাকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে। প্রবীণ এই আইনজীবী আরও বলেন, এত বড় একটি ঘটনার পরও শেখ হাসিনার মধ্যে কোনো অনুশোচনা নেই। বরং তিনি নিরাপদে থেকে দেশের ভেতরে থাকা সাধারণ নেতাকর্মীদের অব্যাহতভাবে উসকে দিচ্ছেন। দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির অপচেষ্টা করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনার এসব অপরাধের দায়ভার এখন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হচ্ছে, যা সত্যিই দুঃখজনক।

জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বর্ষীয়ান রাজনীতিক ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব যুগান্তরকে বলেন, গণহত্যার বিচার সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারিত হবে।

এ প্রসঙ্গে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী রোববার যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনার অপকর্মের দায়ভার এখন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হচ্ছে। তিনি ভারতে পালিয়ে গেছেন। সেখানে আরাম-আয়েশে জীবনযাপন করছেন। আর দেশের ভেতরে থাকা দলটির নেতাকর্মীদের নানা দিকনির্দেশনা দিয়ে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছেন। শেখ হাসিনার উচিত ছিল নিজের অপকর্মের জন্য, বিশেষ করে ক্ষমতায় থেকে যে অন্যায়-অবিচার করেছেন, এর জন্য প্রকাশ্যে দেশবাসীর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা। কিন্তু তা না করে উল্টো তিনি প্রতিবিপ্লব করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে উচ্ছেদের পণ করেছেন। তার কারণেই আজ আওয়ামী লীগের এই পরিণতি। অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, শেখ হাসিনা তার শাসনামলেই আওয়ামী লীগের মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এখন তার কারণেই দলটির দাফন-কাফনের কাজটিও সম্পন্ন হলো।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি রোববার যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনা যে অন্যায় ও অপকর্ম করেছেন, এর জন্য অনুতপ্ত না হয়ে উল্টো ভারতে বসে নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। যে কারণে সাধারণ মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন চরম ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এই ক্ষোভের ফলই হচ্ছে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া। তিনি আরও বলেন, এ পরিস্থিতির জন্য শেখ হাসিনাই এককভাবে দায়ী।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য ডা. জাহেদ-উর রহমান যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনার ভুল রাজনীতির খেসারত দিচ্ছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ।

তবে সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত হচ্ছে, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালাতে পারবে না। কিন্তু আমার প্রশ্ন—গত নয় মাসে আওয়ামী লীগ এমন কী কী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়েছে যে ঘটা করে এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো।

এদিকে আওয়ামী লীগের অনেক পলাতক নেতা মনে করেন, শেখ হাসিনার অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত, অজ্ঞতা, অতিকথন ও অপরিপক্বতার খেসারত দিতে হচ্ছে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে। বর্তমানে কলকাতায় আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতা রোববার যুগান্তরকে বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। ১৫ আগস্ট-পরবর্তী দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনীতি সম্পর্কেও তার তেমন একটা ধারণা ছিল না। কিন্তু ৫ আগস্টের আগে-পরে কী হয়েছে—সব ঘটনাই তার জানা। ওই নেতা আরও বলেন, রাজনীতির উত্থান-পতন মেনে নিতে হয়, বাস্তবতাও মানতে হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা সেটা উপলব্ধি করতে পারেননি বা উপলব্ধি করার চেষ্টাও করেননি। যে কারণে ভারতে বসে একের পর এক আত্মঘাতী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। বাস্তবতা মেনে নিয়ে পরিকল্পনা সাজানোর পরিবর্তে ইতোমধ্যে এমন কিছু কাজ করেছেন, যার খেসারত এখন দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে দিতে হচ্ছে।

বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আছেন আওয়ামী লীগের এমন একজন নেতা যুগান্তরকে বলেন, শেখ হাসিনা কী করবেন, তা তিনি নিজেই হয়তো বুঝতে পারছেন না। তার বড় দোষ, তিনি কাউকে বিশ্বাস করেন না—এমনকি নিজের ছায়াকেও না। ক্ষমতার নেশা পেয়ে বসেছিল তাকে। ক্ষমতা, আরও ক্ষমতা, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা। টানা সাড়ে ১৫ বছর শাসন করেও তিনি ক্লান্ত নন। যে করেই হোক ক্ষমতায় থাকতেই হবে। ৫ আগস্টের পরও শেখ হাসিনা মনে করেন, তিনি এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। বাস্তবতা যে পুরোটাই ভিন্ন, এটা তিনি বুঝতে চান না। যে কারণে তিনি নিজেই আওয়ামী লীগের এমন সর্বনাশ ডেকে এনেছেন।

এদিকে গত ১৬ বছরে আওয়ামী লীগ অবৈধভাবে জনগণের যে সম্পদ লুটপাট করেছে, তা বাজেয়াপ্ত করে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। রোববার পুরানা পল্টনে গণঅধিকার পরিষদের কার্যালয়ে আয়োজিত এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান। এ সময় আওয়ামী লীগকে ‘ফ্যাসিবাদী ও সীমান্তপারের ষড়যন্ত্রকারী’ বলে আখ্যা দিয়ে দলটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করলে দেশের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়বে।

উল্লেখ্য, ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ নামে দলটির যাত্রা শুরু হয়। এ দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মজলুম জননেতা মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ও সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক। শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ১৯৫৫ সালে দলটির নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেওয়া হয়। দীর্ঘ রাজনৈতিক পরিক্রমায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধেও দলটির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। সে সময়কার কর্মকাণ্ডের জন্য ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেন। স্বাধীনতা-পরবর্তী নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হয় দলটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাকশাল কায়েমের মাধ্যমে সব রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন সরকার। এর ফলে ওই সময়ও আওয়ামী লীগকে বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হয়।

 

সূত্র: যুগান্তর

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ