প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়াবলির জন্য নিযুক্ত বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী সোমবার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আইএলওসহ শীর্ষ পশ্চিমা দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারদের সাথে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক করেছেন। বৈঠকে গত আট মাসে শ্রম সংস্কারের অগ্রগতি পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যতের রোডম্যাপ তুলে ধরেন।
বৈঠকে কারিগরি বিশেষজ্ঞ ও শ্রম অধিকার বিষয়ে দক্ষ ব্যক্তিরাও অংশ নেন।
লুৎফে গত জুলাই ২০২৪-এর পর প্রথমবারের মতো সরকারের সংস্কার কার্যক্রমের পূর্ণাঙ্গ সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন।
তিনি বলেন, গত আট মাসে আমরা নাটকীয় অগ্রগতি অর্জন করেছি। আইএলও রোডম্যাপ শুধু একটি নির্দেশিকা নয় — এটি আমাদের প্রতিশ্রুতি। আমরা এটি সঠিকভাবে সম্পন্ন করার জন্য সময়, শক্তি ও সদিচ্ছা বিনিয়োগ করছি, প্রক্রিয়া ও ফলাফলের দিক থেকে।
তিনি শ্রম উপদেষ্টা ড. সাখাওয়াত হোসেনের ব্যক্তিগত সম্পৃক্ততা ও নৈতিক নেতৃত্বের প্রশংসা করেন, যিনি ত্রিপক্ষীয় অংশীদারদের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করে তাদের একমত করাতে সক্ষম হন।
শ্রম সচিব এএইচএম শফিকুজ্জামান বলেন, ২০২৫ সালের জুলাইয়ের মধ্যে শ্রম আইন সংশোধনসহ উল্লেখযোগ্য মাইলফলক অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে আমরা এগোচ্ছি। প্রক্রিয়াটি দ্রুতগতিতে চলছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এই প্রক্রিয়াকে ‘অভূতপূর্ব’ আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করেছি যে ব্যাপক সামাজিক সংলাপ হয়েছে এবং আমরা এই প্রক্রিয়ার জরুরিতাকে সাধুবাদ জানাই। আমরা শিগগিরই খসড়া আইন দেখার অপেক্ষায় আছি এবং মাটির বাস্তবতায় এর প্রভাব দেখতে চাই। এই বিষয়ে অগ্রগতি ইইউ বাজারে প্রবেশাধিকারের ওপর প্রভাব ফেলবে।’
মার্কিন দায়িত্বপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে যে গতি দেখা যাচ্ছে তা আমরা স্বাগত জানাই এবং অতীতের লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা দেখতে চাই।’
কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং বলেন, ‘আমরা এখন পর্যন্ত সম্পন্ন হওয়া কাজের প্রশংসা করি এবং আইএলও রোডম্যাপকে সমর্থন করি। বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।’
ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক বলেন, ‘বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণকে শক্তিশালী শ্রম মানদণ্ড দিয়ে সমর্থন করতে হবে। আমি অন্যদের মতোই সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টার প্রশংসা করছি।’
আইএলও বাংলাদেশের পরিচালক টুওমো পাউটিয়াইনেন বলেন, “আমরা বাংলাদেশ শ্রম আইন হালনাগাদ করার খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি এমনভাবে করা যা দীর্ঘমেয়াদে টিকে থাকবে এবং শ্রমিকদের রক্ষা করবে।”
আইন সচিব ড. হাফিজ আহমেদ চৌধুরী জানান, “আমরা আইনি অগ্রগতিতে অনেক দূর এগিয়েছি এবং আমাদের দল অংশীজনদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে।”
লুৎফে রাষ্ট্রদূতদের জানিয়েছেন যে স্বরাষ্ট্র, শ্রম ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলাগুলোর সমাধান, আদালতের জট নিরসনে বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং পরিদর্শক পদের সক্ষমতা বাড়ানো নিয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে।
তিনি বলেন, “এটি শুধু একটি অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। শ্রম অধিকার এখন বাজার প্রবেশাধিকার, বৈশ্বিক বাণিজ্য সিদ্ধান্ত, এমনকি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক নীতির সাথেও জড়িত। আমাদের সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।”
রাষ্ট্রদূতরা সম্মত হন যে, শ্রম সংস্কার ও জবাবদিহিতা সব ধরনের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অগ্রাধিকার পাবে। অনেকেই বাংলাদেশকে এই রূপান্তরে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
শেষে লুৎফে বলেন, জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেওয়ার একটি অনন্য সুযোগ তৈরি করেছে। আইএলওর গভর্নিং বোর্ডে বিষয়টি নিষ্পত্তির শেষ পর্যায়ে আমরা যে সকলের সহযোগিতা পাচ্ছি, তার জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।
