হজ দীর্ঘ ও শ্রমসাধ্য ইবাদত। হজ করতে মানুষ নিজের পরিবার, পরিজন ও স্বদেশ ছেড়ে ভিন্ন দেশে, ভিন্ন পরিবেশে যায়। তাই হজে যাওয়ার আগে হজযাত্রীর শারীরিক, মানসিক ও জ্ঞানগত প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে। প্রাজ্ঞ আলেমরা হজে যাওয়ার আগে ১০ কাজের মাধ্যমে প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দেন। তারা কোরআন, হাদিস, পূর্বসূরী আলেমদের উপদেশমালা ও অভিজ্ঞতার আলোকে বলে থাকেন। নিম্নে হজের প্রস্তুতিমূলক ১০ কাজের বর্ণনা তুলে ধরা হলো,
১. আর্থিক দায়মুক্তি অর্জন : ব্যক্তির কাছে কারো আমানত থাকলে তা পৌঁছে দেওয়া, ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা এবং অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ আত্মসাৎ করলে তা ক্ষমা চেয়ে ফিরিয়ে দেওয়া। যদি অন্যায়ভাগে আত্মসাৎ করা সম্পদের মালিক খুঁজে পাওয়া না যায় তবে দরিদ্র ব্যক্তিকে দান করে দেবে। যদি কারো ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হয়, তবে ঋণদাতার অনুমতি নিয়েই হজে যাওয়া প্রয়োজন।
২. আল্লাহর অনাদায়ী হক আদায় করা : ইবাদত মানুষের ওপর আল্লাহ তাআলার হক। তাই কোনো ইবাদত কাজা ও অনাদায়ী থাকলে তা আদায় করা। তা এভাবে যে, নামাজ-রোজার কাজা আদায় করা এবং জাকাত-ফেতরা পরিশোধ করা। পাশাপাশি কাজা ও বিলম্ব করার জন্য অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে তাওবা করাও আবশ্যক। হজযাত্রী ভবিষ্যতে কোনো গুনাহ না করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবে।
৩. শরয়ি অভিভাবকরে অনুমতি নেওয়া : ইসলামী শরিয়ত যাদেরকে অভিভাবক বানিয়েছে এবং যাদের অনুমতি ছাড়া সফর মাকরুহ বলেছে হজের সফরে যাওয়ার আগে তাদের অনুমতি নেওয়া। যেমন মা, বাবা ও স্বামী। যাদের কাছে অনুমতি চাওয়া হবে তাদেরও নৈতিক দায়িত্ব সানন্দে অনুমতি দেওয়া।
৪. নিয়ত পরিশুদ্ধ করা : হজযাত্রী হজের মাধ্যমে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরই নিয়ত করবে। সুখ্যাতি ও অহমিকার আকাঙ্ক্ষা অন্তর থেকে দূর করে দেবে।
৫. মাহরাম প্রস্তুত করা : শরিয়ত মাহরাম পুরুষ (এমন নিকটাত্মীয় যাদের সঙ্গে বিয়ে স্থায়ীভাবে নিষদ্ধি) নারীদের হজযাত্রার অনুমতি দেয় না। তাই নারী হজযাত্রীর জন্য স্বামী বা আস্থা রাখা যায় এমন সাবলক পুরুষ মাহরাম প্রস্তুত করা আবশ্যক।
৬. হালাল অর্থ সংগ্রহ করা : হজের যাবতীয় খরচ সংশয়মুক্ত হালাল অর্থ থেকে ব্যয় করা আবশ্যক। নতুবা হজ কবুলের আশা করা যায় না। হজযাত্রীর সংগৃহীত অর্থে কোনো সংশয় থাকলে তা পরিহার করবে। প্রয়োজনে ঋণ করে যাবে।
৭. সাথীদের সেবার নিয়ত করা : হজযাত্রার সময় সহযাত্রীদের সেবা করা হজ কবুলে সহায়ক হয়। তাই সম্ভব হলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু অর্থ ও রসদ নেবে যা সহযাত্রীদের সেবায় ব্যয় করবে। এছাড়াও কাফেলার দুর্বল, বৃদ্ধ ও অসহায় ব্যক্তিদের যে কোনো প্রকার সেবার নিয়ত করবে।
৮. জ্ঞানগত প্রস্তুতি গ্রহণ : হজে যাওয়ার আগে হজযাত্রীরা হজের বিধি-বিধানগুলো খুব ভালোভাবে জেনে নেবে এবং আত্মস্থ করবে। অভিজ্ঞ হাজিদের কাছ থেকে বিধানগুলোর প্রায়োগিক রূপ জেনে নেবে। হজের বিধি-বিধান বিষয়ক নির্ভরযোগ্য বই-পুস্তক সাথে রাখবে।
৯. সুন্নতি উপকরণগুলো সঙ্গে রাখা : ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত সুন্নতের ওপর আমল করা। তাই হজের সফরে যাওয়ার আগে সুন্নতি উপকরণগুলো সঙ্গে রাখা উত্তম। যেমন মিসওয়াক, টিসু্য পেপার, সুরমা, জায়নামাজ ইত্যাদি।
১০. কাফেলাবদ্ধ হওয়া : হাদিসে দূরের সফর একা একা করতে নিষেধ করা হয়েছে। তাই হজের সফর একাকী করবে না, বরং কাফেলাবদ্ধ হবে। এ ক্ষেত্রে আলেম, আল্লাহভীরু, দ্বিনদার ও পরিচিত ব্যক্তিদের প্রাধান্য দেওয়া। ফাসেক, দ্বিনবিমুখ ও ইবাদতে উদাসীন ব্যক্তিদের উপেক্ষা করা। তবে এমন ব্যক্তি কাফেলায় থাকলে সে অপমানিত হয় বা মনে কষ্ট পায় এমন রূঢ় আচরণ পরিহার করাও জরুরি।
উর্দু পুস্তিকা ‘আদাবে সফর ওয়া মুকাদ্দাতে হজ’ অবলম্বনে