সর্বশেষ
হাইব্রিডের ফাঁদে কৃষকের ৩২ একর জমির ধান নষ্ট
টালবাহানা না করে দ্রুত জুলাই ঘোষণা দিতে হবে: ফরহাদ মজহার
আওয়ামী স্টাইলে আর কোনো নির্বাচন হবে না: রফিকুল ইসলাম
বছরে রোনালদো পান সাড়ে তিন হাজার কোটি, উপার্জন কমেছে মেসির
কোন কানে ফোনে কথা বলা উচিত, যা বলছেন গবেষকরা
ট্রাম্পকে কটুক্তি করে কটাক্ষের মুখে কঙ্গনা
কফিলদের শিকারের তালিকায় সান্ডা ছাড়াও রয়েছে ‘হুবারা বাস্টার্ড’
রায়ে খুশি হতে পারেননি শিশুটির মা
দূষণ কমেছে ঢাকার বাতাসে, বৈশ্বিক তালিকায় ১৭তম
রায় পর্যালোচনা করে খালাস পাওয়াদের বিরুদ্ধে আপিল: বিশেষ প্রসিকিউটর
নগর ভবনের সামনে আজও বিক্ষোভ
সমালোচনা থেকেই সবচেয়ে বেশি শিখেছি: তামান্না
সন্ধ্যার মধ্যে যেসব অঞ্চলে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস ও সতর্কবার্তা
ভারতে আশ্রয় নেওয়া নিষিদ্ধ আ. লীগ নেতাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাজ

শহীদ পরিবারের প্রতি নবীজি (সা.)-এর সদয় আচরণ

অনলাইন ডেস্ক

মদিনার বিখ্যাত খাজরাজ গোত্রের বনু সালামা শাখার সন্তান হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.)। তাই তাঁকে আস-সালামি বলা হয়। তিনি ছিলেন শহীদ পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা হজরত আব্দুল্লাহ (রা.) উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছিলেন। তাই রাসুল (সা.) হজরত জাবির (রা.)-কে খুব ভালোবাসতেন। তাঁর ও পরিবারের প্রতি খেয়াল রাখতেন। এখানে এ-সংক্রান্ত কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো।

(ক) শাহাদত বরণের সময় জাবির (রা.)-এর বাবা হজরত আবদুল্লাহ (রা.) অনেক ঋণ রেখে যান। অন্যদিকে খেজুরের দুটি বাগান ছাড়া অতিরিক্ত কোনো সম্পদ ছিল না তাদের। বাগানের ফলও ঋণ পরিশোধের জন্য যথেষ্ট ছিল না। পাওনাদাররা ভিড় জমাতে থাকেন হজরত জাবির (রা.)-এর কাছে। কোথা থেকে এই ঋণ শোধ করবেন—এ চিন্তায় তিনি যান রাসুল (সা.)-এর কাছে। তিনি যেন পাওনাদারদের কিছু ঋণ মাফ করার জন্য অনুরোধ করেন। রাসুল (সা.) সুপারিশ করেন, কিন্তু পাওনাদাররা (যারা ইহুদি ছিল) রাজি হয়নি। পরে কিছু অবকাশ চাওয়া হলে তাতেও তারা রাজি হয়নি। তখন রাসুল (সা.) হজরত জাবির (রা.)-কে বলেন, ‘এখন যাও, আমি আগামীকাল তোমার বাড়িতে আসব।’

জাবির (রা.) বলেন, ‘পরদিন সকালে রাসুল (সা.) এসে বাগানে ঘুরে দেখেন এবং বরকতের দোয়া করেন। এরপর আমি বাগানের সব খেজুর পেড়ে একত্র করি এবং সব পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করি। এরপরও কিছু খেজুর বাকি থাকে। পরে আমি রাসুল (সা.)-এর কাছে গিয়ে এ বিষয়ে অবহিত করি।’ (সহিহ বুখারি: ১/৩৫৪)

অন্য এক বর্ণনায় আছে, খেজুরগুলো পেড়ে স্তূপ করার পর রাসুল (সা.) আবু বকর (রা.) ও উমর (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁর বাড়িতে আসেন এবং খেজুরের পাশে বসে দোয়া করেন। এরপর বলেন, ‘তোমার পাওনাদারদের ডাকো এবং যার যা পাওনা আছে, দিয়ে দাও।’ তিনি তা-ই করলেন। জাবির (রা.) বলেন, ‘সবার পাওনা পরিশোধের পরেও আমার কাছে ৭ ওয়াসাক আজওয়া (উন্নতমানের) খেজুর এবং ৬ ওয়াসাক লাওন (নিম্নমানের) খেজুর-সর্বমোট ১৩ ওয়াসাক খেজুর উদ্বৃত্ত রয়ে গেল। এরপর মাগরিবের নামাজের পর বিষয়টি রাসুল (সা.)-কে জানালে তিনি হাসলেন ও আনন্দ প্রকাশ করলেন এবং বললেন, ‘আবু বকর ও উমরের কাছে গিয়ে বিষয়টি বলো।’ তাঁদের বললে তাঁরা বলেন, ‘আমরা আগেই জানতাম, এমনই হবে।’ (সহিহ বুখারি: ১/৩৭৪)

(খ) এক যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে জাবির (রা.)-এর উটটি দুর্বল হয়ে পড়ে। রাসুল (সা.) জিজ্ঞেস করলেন, ‘জাবির, কী হয়েছে?’ তিনি বললেন, ‘উট দুর্বল হয়ে গেছে, চলছে না।’

রাসুল (সা.) তাঁর চাবুক দিয়ে উটটিকে খোঁচা দেন। সঙ্গে সঙ্গে উটটি দ্রুত চলতে শুরু করে। তখন রাসুল (সা.) জাবির (রা.)-কে বলেন, ‘জাবির, উটটি কি আমাকে বিক্রি করবে?’ তিনি রাজি হয়ে যান। মূল্য নির্ধারণ হয় এক উকিয়া। রাসুল (সা.) বলেন, ‘মদিনা পৌঁছা পর্যন্ত উটটি তোমার কাছেই থাকুক।’ অন্য বর্ণনায় আছে, হজরত জাবির (রা.) মদিনা পৌঁছা পর্যন্ত আরোহণের শর্ত রাখেন।

মদিনায় পৌঁছে রাসুল (সা.) তাঁকে মূল্য দিয়ে বলেন, ‘এই নাও তোমার উটের দাম, আর উটটিও রেখে দাও তোমার জন্য।’ জাবির (রা.) খুশি মনে উট ও দাম নিয়ে বাড়ি ফেরেন। (সহিহ বুখারি: ১/২৮২, ৩০৯-৩১০, ৪০১, ৪১৬)

হাদিসবিশারদরা বলেন, এই ঘটনায় রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জাবিরের ক্রয়-বিক্রয়ের কথা হলেও মূলত নবীজি (সা.) তাকে সম্মানজনক পদ্ধতিতে আর্থিক সহযোগিতা করতে চেয়েছেন।
(গ) খন্দকের যুদ্ধে রাসুল (সা.) পেটের সঙ্গে পাথর বেঁধে সাহাবিদের সঙ্গে পরিখা খননে ব্যস্ত ছিলেন। সে সময় জাবির (রা.) ঘরে গিয়ে স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘ঘরে কিছু খাবারের ব্যবস্থা আছে?’ স্ত্রী বললেন, ‘তেমন কিছু নেই, একটি ছাগলের বাচ্চা আছে; তা দিয়ে অল্প কিছু রান্না করা যেতে পারে।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তা-ই করো, আমি রাসুল (সা.)-কে ডাকছি।’

তিনি গিয়ে রাসুল (সা.)-কে চুপিচুপি বললেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, ঘরে সামান্য খাবারের ব্যবস্থা করেছি।’ রাসুল (সা.) দাওয়াত গ্রহণ করলেন এবং খন্দকে কর্মরত সবাইকে ডেকে বললেন, ‘চলো, জাবির তোমাদের দাওয়াত করছে।’

জাবির (রা.) কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যান, খাবার তো দুই-চারজনের জন্য, আর রাসুল (সা.) সবাইকে ডাকছেন! তিনি এসে দোয়া করেন। এক হাজার সাহাবি খাবার খেলেন এবং তৃপ্ত হলেন, কিন্তু খাবার শেষ হয়নি! (সহিহ বুখারি: ২/৫৮৮-৫৮৯)

এভাবেই নবীজি  (সা.) ভালোবাসা, দোয়া ও আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে আব্দুল্লাহ (রা.)-এর শহীদ পরিবারকে বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেন।

 

সূত্র: নিউজ টোয়েন্টিফোর

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ