পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে হরিয়ানার ট্র্যাভেল ভ্লগার জ্যোতি মালহোত্রাকে। একই অভিযোগে তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আরও পাঁচ জনকে। ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন জ্যোতি।
এই বছরের শুরুতে পাকিস্তানে তাঁর ভ্রমণের বেশ কয়েকটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেনন। পাকিস্তানি এজেন্টদের সঙ্গে সংবেদনশীল তথ্য ভাগ করে নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া জ্যোতির ‘ট্র্যাভেল উইথ জো’ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। সেখানে তাঁর প্রায় ৩,৭৭,০০০ অনুগামী রয়েছে।
ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলের নাম ‘ট্র্যাভেলউইথজো১’। সেখানেও প্রায় দেড় লক্ষ অনুগামী রয়েছে তাঁর। ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রামের নানা ভিডিও দেখে বোঝা যায়, তিনি ভারতের নানা জায়গায় ভ্রমণ করেছেন। এর পাশাপাশি ইন্দোনেশিয়া এবং চীনের মতো দেশেও ঘুরে এসেছেন। তবে, বিশেষ আকর্ষণের বিষয় হল পাকিস্তান ভ্রমণের অসংখ্য ভিডিও এবং রিল।
ভিডিওগুলি প্রায় দুই মাস আগে পোস্ট করা হয়েছিল। সেই ভিডিওগুলির মাধ্যমে জ্যোতি পাকিস্তানের ইতিবাচক দিক তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার হওয়ার কারণে পাকিস্তানের এজেন্টরা জ্যোতিকে দিয়ে প্রচারমূলক ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য এজেন্টরা এই সব ভিডিও রেকর্ড করত।
সেই সব ভিডিওতে রয়েছে আটারি-ওয়াঘা বর্ডার পেরনো, লাহোরের আনারকলি বাজার, বাসযাত্রা ইত্যাদি। এমনকি পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় হিন্দু মন্দির কাটাস রাজ মন্দিরের ভিডিও রয়েছে। ইনস্টাগ্রামের একটি ছবিতে ঊর্দুতে লেখা রয়েছে ‘ইশক লাহোর’। সে দেশের খাবার এবং দুই দেশের সংস্কৃতির পার্থক্যের ভিডিও শেয়ার করেছিলেন জ্যোতি।
তিনি গত বছরও কাশ্মীর সফর করেছিলেন। যেখানে তাঁকে ডাল লেকে শিকারা ভ্রমণ উপভোগ করতে দেখা গিয়েছে। তিনি শ্রীনগর থেকে বানিহাল যাওয়ার ট্রেনে ভ্রমণের একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, কমিশন এজেন্টদের মাধ্যমে ভিসা পাওয়ার পর ২০২৩ সালে জ্যোতি প্রথম পাকিস্তান সফর করেন। সফরের সময় তিনি নয়াদিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে (পিএইচসি) কর্মরত এক আধিকারিক এহসান-উর-রহিম ওরফে দানিশের সংস্পর্শে আসেন। শীঘ্রই তাঁদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে এবং এহসান তাঁকে পাকিস্তানের গোয়েন্দা কর্তাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। এই মাসের ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক হ্রাস করে। এবং এহসানকে বহিষ্কার করা হয়।
দেশে ফিরেও পাকিস্তানের এজেন্টদের সঙ্গে নানা এনক্রিপ্টেড অ্যাপ যেমন, হোয়াটস অ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং স্ন্যাপচ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখেছিলেন জ্যোতি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ছদ্মনামে এজেন্টদের নাম মোবাইলে রেখেছিলেন তিনি। তাঁদের অভিযোগ, ভারতের বিভিন্ন জায়গা সম্পর্কে সংবেদনশীল তথ্য পাকিস্তানে পাচার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, জ্যোতি তিন বার পাকিস্তানে গিয়েছিলেন। একজন গুপ্তচরের সঙ্গে সম্পর্করও গড়ে ওঠে তাঁর। সেই গুপ্তচরের সঙ্গেই বালি এবং ইন্দোনেশিয়া ঘুরতে গিয়েছিলেন জ্যোতি। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, ওই ইউটিউবার একটি বড় ষড়যন্ত্র চক্রের অংশ। হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব জুড়ে এই চক্রের অনেকেই ছড়িয়ে আছে।
তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ১৫২ ধারায় ও অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩-এর ৩, ৪ ও ৫ নম্বর ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “গোটা ঘটনাটি একটি বৃহত্তর গুপ্তচরবৃত্তির চক্রান্তের অংশ যেখানে সমাজের দুর্বল ও প্রান্তিক মানুষদের আবেগ, অর্থ ও বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে ফাঁদে ফেলা হয়েছে। তদন্ত চলছে।”
সূত্র: আজকাল