ঘামাচি এক ধরনের চর্মরোগ। আমাদের ত্বকের ঘর্মগ্রন্থির সঙ্গে এক ধরনের জীবাণু মিশে থাকে। এই জীবাণুর নাম স্টেফ এপিডারমাইডিস। গরমের সময় স্বাভাবিকভাবেই ঘর্মগ্রন্থি থেকে ঘাম বেশি নিঃসৃত হয়। তাই ধুলাবালি জমে বেশি পরিমাণে। ত্বকের মৃত কোষে ধুলাবালি জমে যখন ঘর্মগ্রন্থি থেকে স্বাভাবিকভাবে ঘাম নিঃসরণ হতে পারে না তখন স্টেফ এপিডারমাইডিস-এর সংস্পর্শে এসে ঘামাচির উৎপত্তি হয়।
মূলত ৯০ শতাংশ ঘাম গ্রন্থি হচ্ছে এক্রাইন গ্লান্ড। এই গ্লান্ড বা গ্রন্থি যদি কোনো কারণে বন্ধ বা ব্লক হয়ে যায়, তখন সেখানে কিছু ছোট আকারের র্যাশ দেখা যায়। এই র্যাশগুলোর দৃশ্যমান অংশ লালচে হয়ে থাকে। এই ছোট র্যাশগুলো যখন বেড়ে যায় তখন শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হয়। এ রকম র্যাশকে হিট র্যাশও বলা হয়। মেডিকেলের ভাষায় একে বলা হয় ‘মিলিয়ারিয়া’।
সাধারণত বুকে, পিঠে ফুসকুড়ি দেখা দিলেই আমরা ভাবি যে ঘামাচি হয়েছে। কিন্তু বুকে, পিঠে ছাড়াও শরীরের যেসব অংশে ভাঁজ পরে যেমন- কনুই, ঘাড়, কাঁধ, কুঁচকি ইত্যাদি অংশেও ঘামাচি হয়। আমরা অনেকেই মনে করি ঘামাচি খুব বেশি ক্ষতিকারক কিছু নয়। কিন্তু ঘামাচির সংক্রমণের ফলে চুলকানি ও প্রদাহের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে ক্লান্তি ভাব দেখা দেয়। কখনো কখনো বমি বমি ভাব, নিম্ন রক্তচাপ, মাথা ব্যথা, অবসাদ এমনকি হিট স্ট্রোকও হতে পারে।
ঘামাচির কারণ
* অতিরিক্ত ঘাম হওয়া
* গরম বা আর্দ্র আবহাওয়া
* আটসাট বা মোটা কাপড় পরা
* ঘাম শুকাতে না পারা (বায়ু চলাচলের অভাব)
লক্ষণ
* ত্বকে লালচে ফুসকুড়ি বা ছোট ছোট দানা
* চুলকানি বা জ্বালাপোড়া
* অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার জায়গায় বেশি ঘাম হয়
* শিশুদের ক্ষেত্রে ঘাড়, পিঠ, গলায় বেশি হয়
ঘামাচির প্রতিকার ও নিরাময়ের উপায়
১. ঠান্ডা পরিবেশে থাকুন
* ঘর ঠান্ডা রাখতে হবে।
* প্রয়োজন হলে ফ্যান বা এয়ার কুলার ব্যবহার করুন
২. হালকা ও ঢোলা জামা পরুন
* সুতির হালকা কাপড় পরুন
* টাইট ও সিনথেটিক কাপড় এড়িয়ে চলুন
৩. বারবার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন
* সাধারণ তাপমাত্রার বা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করুন
* ঘামাচি বেশি হলে অ্যান্টিসেপটিক মিশ্রিত পানি ব্যবহার করা যেতে পারে
৪. শরীর ঠান্ডা রাখতে যা করবেন
* বেশি পানি পান করুন
* শসা, তরমুজ, ডাবের পানি বেশি খান
* রোদ এড়িয়ে চলুন
চিকিৎসা :
ঘামাচি অনেক সময় প্রচণ্ড চুলকায়। তাই বাজারে আইসকুল পাউডার বা ঘামাচি পাউডার পাওয়া যায়। অনেক ক্ষেত্রে এসব বেশ ভালো আরাম দেয়। তবে এসব পাউডার ভালো মানের হতে হবে। দুবেলা করে ক্যালামিন লোশন ব্যবহার করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে চোখ এবং মুখে যেন এই লোশন না যায়। চুলকানির জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ওষুধ সেবন করতে হবে। যদি অতিরিক্ত চুলকানি থাকে তখন স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধের প্রয়োজন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে অবশ্যই অভিজ্ঞ চিকিৎসকের নির্দেশনা মেনে ওষুধ নিতে হবে। যে কোনো প্রয়োজনে রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া চিকিৎসা নেওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।
ছবি: পেকজেলসডটকম ও ইনস্টাগ্রাম