সর্বশেষ
বিসিএস ডেন্টাল ক্যাডার অ্যাসোসিয়েশনের ৬ দাবি
পলাশবাড়ীতে অপপ্রচারের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন
২৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে পরেশকে আইনি নোটিশ, যা বললেন অক্ষয়ের আইনজীবী
বজ্রপাতে মায়ের সামনেই মারা গেল ছেলে
সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে কোন নির্বাচন আগে হবে: ইসি
রাতের মধ্যে ঢাকাসহ ১৭ জেলায় ঝড়ের আভাস ও সতর্কবার্তা
অটোপাসের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ওপর হামলা
পছন্দের ঠিকাদার কাজ না পাওয়ায় ‘ভিপি নুর’ বিশৃঙ্খলা করেছেন, ডিএনসিসির বিবৃতি
সাম্য হত্যার ঘটনায় আরও ৩ জন গ্রেপ্তার
লিটারে তেলের দাম ৩৫ টাকা বাড়াল টিসিবি
ইহরাম অবস্থায় অলঙ্কার-চুড়ি পরা জায়েজ?
৪ দাবিতে লাগাতার অসহযোগ কর্মসূচির ঘোষণা এনবিআর কর্মকর্তাদের
মালয়েশিয়ায় প্রবাসীদের হয়রানির ঘটনায় জামায়াতের উদ্বেগ
ব্যারিকেড ভেঙে ইসি ভবনের সামনে এনসিপি নেতাকর্মীরা
দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে ইশরাকের সমর্থকদের স্লোগান

লিবিয়ায় ৮ মাসের বন্দিজীবন ছিল ‘মৃত্যুকূপ’

অনলাইন ডেস্ক

‘মনে হয়েছিল আর বাড়ি ফিরতে পারব না’—এ কথা বলতে বলতে বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিল শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার দুই তরুণ আলতাফ হোসেন ছৈয়াল (৩০) ও আহসান উল্লাহ বলির (৩০)। দালালের প্রলোভনে পড়ে তারা পাড়ি জমিয়েছিলেন লিবিয়ার পথে। গন্তব্য ছিল ইতালি।

কিন্তু ৮ মাস লিবিয়ায় বন্দিদশা ও অমানুষিক নির্যাতনের পর তারা দেশে ফিরেছেন ক্ষতবিক্ষত শরীর ও লাখ লাখ টাকা ঋণের বোঝা নিয়ে।

ঘটনাটি ভেদরগঞ্জ উপজেলার ছয়গাঁও ইউনিয়নের মনুয়া ও আইজারা এলাকার। এখন ভুক্তভোগী দুই তরুণ অসুস্থ।

ভুক্তভোগী দুই তরুণ ও তাদের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, স্থানীয় দালালের প্রলোভনে পড়ে ইউরোপে যেতে বাড়ি ছেড়েছিলেন আলতাফ হোসেন ছৈয়াল ও আহসান উল্লাহ। উদ্দেশ্য ছিল লিবিয়া হয়ে ইতালিতে পাড়ি দেওয়া।

কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন তাদের জন্য এক দুঃস্বপ্নের নাম।
আলতাফ হোসেনের বাবা দুলাল ছৈয়াল জানান, ছয়গাঁও বাংলা বাজার এলাকার হারুন লস্কর ও তার দুই ছেলে পাপ্পু ও ইমন লস্কর তাদের কাছে ইতালিতে উচ্চ বেতনের চাকরির আশ্বাস দেন। চুক্তি হয় ১৬ লাখ টাকায়। এর মধ্যে ৪ লাখ টাকা অগ্রিম দেন তিনি।

পরে বাড়ি-জমি বিক্রি, এনজিও থেকে ঋণ এবং আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে পর্যায়ক্রমে ৬৫ লাখ টাকা দেন দালালদের হাতে। গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর আলতাফ প্রথমে ভারত হয়ে শ্রীলঙ্কা পৌঁছান। সেখানে ২৪ দিন অবস্থানের পর তাকে লিবিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে পৌঁছানোর পরেই তাকে ছোট একটি ঘরে অন্যদের সঙ্গে একত্রে রাখা হয়। কিছুদিন পর তকে বিভিন্ন বন্দিশিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়।

এক পর্যায়ে তাঁকে ত্রিপলির উপকূলে একটি কাঠের নৌকায় তোলা হয় ১৬০ জন অভিবাসনপ্রত্যাশীর সঙ্গে। এরপর পরিকল্পিতভাবে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এরপর শুরু হয় আসল নির্যাতন।

পুলিশের কাছ থেকে উদ্ধার করে চক্রটি ফের একাধিক গুদামঘরে আটকে রাখে। সেখানে শুরু হয় অমানবিক নির্যাতন—বাঁশ, তার ও বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মারধর, অনাহারে রাখা, পরিবারের সঙ্গে ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা দাবি করা—সবই ছিল নিয়মিত ঘটনা। একাধিক দফায় পরিবার থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হয়।

আহসান উল্লাহ বলির অভিজ্ঞতাও একইরকম। তিনি জানান, লিবিয়ায় পৌঁছার পরপরই তার পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া হয়। পালানোর চেষ্টা করায় একটি অন্ধকার কক্ষে আটকে রেখে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়, প্লাস দিয়ে নখ তুলে নেওয়া হয়। শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ৭ মে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দেশে ফেরেন আহসান।

ভুক্তভোগী আলতাফ হোসেন ও আহসান উল্লাহ বলেন, দালাল হারুন লস্কর তার বড় ছেলে পাপ্পু লস্কর ইতালি ও ছোট ছেলে ইমন লস্কর লিবিয়া থাকেন। তারা একটি বড় চক্র। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে লিবিয়ায় রেখে দালালচক্র যেভাবে নিপীড়ন চালিয়েছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। ইতালির আশায় যে স্বপ্ন নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন, সেটি এখন ভয়াবহ স্মৃতি হয়ে তাদের তাড়া করছে।

আলতাফ হোসেনের বাবা দুলাল ছৈয়াল বলেন, ছেলেকে হারাবো ভেবে বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। এখন বেঁচে ফিরলেও সে আর আগের মতো নেই।

আহসান উল্লাহর মা লুৎফা বেগম বলেন, ছেলেকে ফেরত পেয়ে খুশি হয়েছি ঠিকই, কিন্তু এখন ঋণের চাপ সামলাতে পারছি না। জমি বিক্রি করেছি, এনজিওর কিস্তি দিতে পারছি না। এমন দুর্দিন কোনো মায়ের কপালে না আসুক।

অভিযোগের বিষয়ে দালাল হারুন লস্কর ও তার পরিবারের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার চেষ্টা করেও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আহসান উল্লাহ বলি ভেদরগঞ্জ থানায় ছয়গাঁও এলাকার হারুন লস্কর, তার ছেলে পাপ্পু লস্কর ও ইমন লস্করের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পারভেজ আহমেদ বলেন, লিবিয়ায় দুই তরুণের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমরা ওই ঘটনায় একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এখন পুরো ঘটনাটি তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ