ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পাঁশকুড়া গ্রামে চিপস নেওয়ার অভিযোগে প্রকাশ্যে অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করেছে ১২ বছর বয়সী এক স্কুলছাত্র। শুক্রবার (২৩ মে) সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী কৃষ্ণেন্দু দাস-এর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে স্থানীয় পুলিশ। হৃদয়বিদারক এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ঘটনার বিবরণ অনুযায়ী, গোসাইবাজার এলাকায় একটি দোকানে চিপস কিনতে গিয়েছিল কৃষ্ণেন্দু। দোকানদারকে বেশ কয়েকবার ডাকলেও কোনো সাড়া না পেয়ে দোকানের বাইরে পড়ে থাকা একটি প্যাকেট হাতে নেয় সে। ঠিক সেই সময় দোকানে ফিরে আসেন দোকানদার শুভঙ্কর দীক্ষিত, যিনি শিশুটিকে চুরির অভিযোগে চড় মারেন ও কানে ধরে উঠবস করান। উপস্থিত লোকজনের সামনে এই অপমানজনক আচরণ সহ্য করতে না পেরে কৃষ্ণেন্দুর মন ভেঙে পড়ে।
পরবর্তীতে কৃষ্ণেন্দুর মা দোকানে এসে ছেলেকে বকাঝকা করেন এবং মারধর করেন। ছেলেটি তখন জানায়, সে চিপসটা পরে এসে দাম দিয়ে দিত এবং সে চুরি করেনি—এই কথা বারবার বললেও তাকে মিথ্যাবাদী বলা হয়।
চরম অপমানের পর কৃষ্ণেন্দু ঘরে ফিরে নিজের কক্ষে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। ডাকাডাকির পরও কোনো সাড়া না পেয়ে দরজা ভেঙে দেখা যায়, তার মুখে ফেনা, পাশে পড়ে আছে আধখালি কীটনাশকের বোতল। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তমলুক হাসপাতালে ভর্তি করানো হলেও শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচানো যায়নি তাকে।
ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া চিরকুটে কৃষ্ণেন্দু লিখে গেছে, “মা, আমি চোর নই। আমি চুরি করিনি। আঙ্কেল দোকানে ছিলেন না, অনেক ডাকাডাকি করেও পাইনি। ফেরার সময় রাস্তার পাশে পড়ে থাকা একটা কুরকুরে (চিপস) প্যাকেট হাতে তুলে নিই। আমি কুরকুরে পছন্দ করি।”
চিরকুটে আরও লেখা ছিল, “এইটাই আমার শেষ কথা। এ কাজের (কীটনাশক খাওয়া) জন্য আমাকে ক্ষমা করে দিও।”
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, অভিযুক্ত দোকানদার শুভঙ্কর দীক্ষিত একজন সিভিক ভলান্টিয়ার, যিনি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সহায়ক হিসেবে কাজ করেন। প্রথমে তিনি মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করলেও পরে ঘটনা জানাজানি হলে দোকান বন্ধ করে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
সূত্র: নিউজ টোয়েন্টিফোর