বাংলাদেশের বহু শিশু কৃমির সমস্যায় ভোগে। তবে তাদের অনেকেরই তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না। কৃমির সমস্যা এড়াতে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস গড়ে তোলা আবশ্যক—এ কথা সবাই জানেন। তবে খাবারদাবার ছাড়াও অন্যান্য পথে কৃমি ঢুকে পড়তে পারে শিশুর দেহে। এভাবেই হতে পারে বহু সমস্যার সূত্রপাত।
পেটের ভেতর থাকা কৃমির কারণে রক্তক্ষরণ হয় অন্ত্রে। বাইরে থেকে তা বোঝার উপায় নেই। কিন্তু আক্রান্ত শিশুটি রক্তস্বল্পতায় ঠিকই ভুগতে থাকে। কোনো মেয়েশিশু রক্তস্বল্পতায় ভুগলে কৈশোরে তা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। শিশুটি খাবার থেকে যে পুষ্টি উপাদান পায়, তার অন্ত্র থেকে সেসবের অনেকটাই শোষণ করে নেয় এই পরজীবী। ফলে অপুষ্টিতেও ভোগে সে। তাই কৃমির ব্যাপারে সচেতন হতে হবে সব অভিভাবককে। এ প্রসঙ্গে বলছিলেন মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসালট্যান্ট, শিশুবিশেষজ্ঞ ডা. তাসনুভা খান।
যেভাবে ছড়ায় কৃমি
আক্রান্ত ব্যক্তির মলের মাধ্যমে কৃমি ও কৃমির ডিম ছড়ায়। পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা উন্নত না হলে মাটিতে পড়া ফলমূল বা মাটির সংস্পর্শে আসা কাঁচা সবজির মাধ্যমে সহজেই কৃমির সংক্রমণ হতে পারে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা না হলে আক্রান্ত ব্যক্তির হাতের নখের মাধ্যমেও সংক্রমণ হতে পারে। আবার সরাসরি মাটির সংস্পর্শ থেকেও সংক্রমিত হতে পারে একটি শিশু। খালি পায়ে মাটিতে হাঁটলে কিংবা খালি হাতে মাটি স্পর্শ করলে কৃমির লার্ভা ত্বকের মাধ্যমে ঢুকে পড়তে পারে মানবদেহে।
কিছু উপসর্গ জানা থাক
কৃমির সংক্রমণ হলে ক্ষুধামান্দ্য, পেটব্যথা, পেটফাঁপা, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে কারও কারও। শিশু প্রায়ই এমন সমস্যায় ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। গুঁড়াকৃমির অন্যতম উপসর্গ আবার পায়ুপথে চুলকানি। অল্প কিছু ক্ষেত্রে কৃমির কারণে অন্ত্রের ভেতর বাধা সৃষ্টি ( ইনটেস্টাইনাল অবস্ট্রাকশন) হয়। এ রকম হলে মল আটকে যায়। তখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কৃমি বের করা জরুরি হয়ে দাঁড়ায়।
সংক্রমণ এড়াতে
ছোটবেলা থেকেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়মকানুন মেনে চলা প্রয়োজন। খাওয়ার আগে এবং টয়লেট ব্যবহারের পর সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার নিয়ম শিখিয়ে দিন শিশুকে। যিনি শিশুর খাবার তৈরি করেন কিংবা পরিবেশন করেন, তাঁকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার নিয়ম মেনে চলতে হবে। ফলমূল ও কাঁচা সবজি ধুয়ে নিতে হবে খুব ভালোভাবে। বাড়ির সবারই নখ ছোট রাখা জরুরি। মাটিতে খালি পায়ে না হাঁটাই ভালো। তবে কৃমির সংক্রমণের ভয়ে মাটির সংস্পর্শ পুরোপুরি এড়িয়ে শিশুকে বড় করতে চাইলে তা হবে খুব বড় এক ভুল। সুযোগ থাকলে শিশুদের মাটিতে খানিক লাফঝাঁপ করার স্বাধীনতা দিন। কাদামাটি হাতে খেলতেও দিন। শৈশব হোক প্রাণোচ্ছল। শৈশবের উচ্ছ্বাসে বাধা না দিয়ে বরং সতর্কতা হিসেবে কৃমির ওষুধ খাইয়ে দিন শিশুকে। একই দিনে বাড়ির সব সদস্যের কৃমির ওষুধ খেয়ে নেওয়া আরও ভালো এক চর্চা।
ওষুধ কি সবার জন্য
কৃমির সংক্রমণের উপসর্গ থাকুক আর না থাকুক, শিশু-কিশোরদের কৃমির ওষুধ খাওয়ানো উচিত। সরকারি উদ্যোগে স্কুলেই যদি তা খাওয়ানো হয়ে যায়, তাহলে বাড়িতে আর খাওয়ানোর প্রয়োজন নেই। বাড়ির অন্য সদস্যরাও সেদিনই খেয়ে নিন কৃমির ওষুধ। তবে বয়স এক বছর পূর্ণ না হলে এই ওষুধ দিতে নেই। এ ছাড়া অন্তঃসত্ত্বা ও স্তন্যদানকারী মা এবং গর্ভধারণের চেষ্টা করছেন, এমন নারী বাদে অন্য সবাইকে দেওয়া যায় এই ওষুধ। তবে অল্প কিছু মানুষের কৃমির ওষুধে অ্যালার্জি থাকতে পারে। তাঁদের কৃমির ওষুধ দেওয়া যাবে না।
সূত্র: প্রথম আলো