সর্বশেষ
কানে উপস্থিতি নিয়ে ট্রল, পাল্টা জবাব দিলেন উর্বশী
ঈশ্বরগঞ্জে বাসচাপায় বাবা-ছেলেসহ নিহত ৩
সুব্রত বাইন ৮ দিনের রিমান্ডে
সমাবেশে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে বিএনপির মজনু
সারাহ কুকের সঙ্গে নাহিদ-জারার সাক্ষাৎ
জাতির প্রয়োজনে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: জামায়াত আমির
আদালতে অসুস্থ আসামিরা পাবেন হুইল চেয়ার সুবিধা
বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে ৬ নদীর পানি
চাকরিজীবীদের বিক্ষোভ-আন্দোলনে চ্যালেঞ্জের মুখে সরকার?
আম রপ্তানি উদ্বোধন, রেকর্ড গড়ার প্রত্যয়
চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের নার্স-কর্মচারীদের কর্মবিরতিতে হামলার অভিযোগ
আশা-আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন আমাদের মনমতো হয়নি: বাঁধন
হজমের সমস্যা কমাতে উপকারী যেসব পানীয়
এ সিরিজ দিয়ে বিশ্বকাপে চোখ পাকিস্তানের
বৃহস্পতিবার ১১ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়

রাজস্ব আদায়, আমদানি ও রপ্তানিতে স্থবিরতা

অনলাইন ডেস্ক

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠার অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। গত ১২ দিনের আন্দোলনে রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রম কার্যত বন্ধ ছিল। প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম এবং স্থলবন্দরগুলোতে আমদানি ও রপ্তানি কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা গেছে।

এদিকে গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসের পর এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ আন্দোলন স্থগিত করেছে। আজ থেকে সব কার্যক্রম স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আন্দোলনের কারণে গত কয়েকদিনে কত টাকা রাজস্ব আদায় কমেছে– এমন প্রশ্নে গতকাল এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে যুগ্ম কর কমিশনার মোনালিসা শাহরীন সুস্মিতা বলেন, বছরের মে এবং জুন মাসে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়। এ সময় সাধারণত দৈনিক দেড় থেকে ২ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়। সেই হিসাবে গত ১২ দিনে ২০ থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকার মতো রাজস্ব আদায় কম হতে পারে।

মতামত জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা সিপিডির সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান সমকালকে বলেন, এনবিআর সংকট অর্থনীতির ওপর ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে আরও বিঘ্ন ঘটুক–তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এনবিআর কর্মকর্তারা কর্মসূচি স্থগিত  করেছেন এবং আলোচনায় অংশ নেওয়ার ও সংস্কারকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সহযোগিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। একটি টেকসই সংস্কার একটি পেশাদার ও ন্যায়সংগত কর ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে।

সমকালের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে গতকাল দিনভর ছিল অচলাবস্থা।
আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে ছিল স্ববিরতা। কাস্টমস কর্মকর্তারা অফিসে থাকলেও করেননি শুল্কায়নের কাজ। ৫টার পরে সীমিত পরিসরে শুল্কায়নের কিছু কাজ করেছেন তারা।

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে স্বাভাবিক সময়ে যে পরিমাণ পণ্য খালাস হয়, তার অর্ধেকও গতকাল হয়নি।  বন্দরে তৈরি হয়েছে কনটেইনার জট। গতকাল পর্যন্ত বন্দরে জমেছিল ৪২ হাজার কনটেইনার। পণ্য খালাস করার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় কনটেইনার বোঝাই আরও ১৮টি জাহাজ ভাসছে বন্দর সীমানায়। ঈদের আগে এমন অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকরা।

ইন্টারন্যাশানাল বিজনেস ফোরামের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি এস এম আবু তৈয়ব বলেন, ‘ঈদের আগে এমন কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত করছে আমাদের। কারখানার কাঁচামাল নিতে পারছি না সময় মতো। এ জন্য ব্যাহত হবে উৎপাদন। আর উৎপাদন ব্যাহত হলে সময়মতো পণ্য রপ্তানি করতে পারব না। অথচ আমাদের মাথার ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বর্ধিত শুল্ক হার হুমকি হয়ে আছে এখনও।’
বন্দরের সচিব ওমর ফারুক জানান, শুল্কায়ন, পরীক্ষণসহ আমদানি কার্যক্রম না হলে বন্দর থেকে কনটেইনার খালাস করা যায় না। কনটেইনার খালাস না হলে জাহাজ থেকে কনটেইনার নামানোর কার্যক্রমেও ধীরগতি দেখা দেয়।

চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের মোট আমদানি-রপ্তানির ৯৫ শতাংশ পণ্যের শুল্কায়ন হয়। শুল্কায়নে মুখ্য ভূমিকা পালন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।  কনটেইনার খালাসে ধীরগতির ফলে তৈরি পোশাক, ওষুধ খাতসহ আমদানিনির্ভর শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমদানি পণ্য খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় শিল্পের অনেক কাঁচামাল আটকে আছে। রোববার  সারাদিন অপেক্ষা করেও তারা পণ্যের শুল্কায়ন করতে পারেননি। ৫টার পর সীমিত পরিসরে কিছু পণ্যের শুল্কায়ন হলেও তা ছিল নগণ্য।

স্থলবন্দরের পরিস্থিতি

দেশব্যাপী কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতিতে সকাল থেকে বিভিন্ন স্থলবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দেয়। শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েন আমদানি ও রপ্তানিকারকরা। এ দিন সকাল থেকে দেশের প্রধান স্থলবন্দর বেনাপোলে আমদানি-রপ্তানি চালু থাকলেও পণ্য শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বিকেল ৫টার পর শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ কার্যক্রমের কিছু কাজ হলেও তা সমস্যা সমাধানের জন্য যথেষ্ট ছিল না। এর মধ্যেই সোমবার থেকে কাস্টমস কর্মকর্তারা পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়ায় ভারতে রপ্তানির জন্য পণ্য লোড বন্ধ করে দেয় অনেক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।

ভারতের পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী জানান, পেট্রাপোল বন্দরের সেন্ট্রাল পার্কিংয়ে পণ্যবোঝাই ৫৫০টি ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। অনেক রপ্তানিকারক পণ্য লোড বন্ধ রেখেছে। এভাবে চলতে থাকলে বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিবেশ নষ্ট হবে।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের কাস্টমসবিষয়ক সম্পাদক শহিদুল আলম বলেন, বিকেল ৫টার পর কিছু কাজ হচ্ছে। তবে ফাইলের স্তূপ জমে গেছে।

শুল্ক ছাড়পত্র না পাওয়ায় তামাবিল বন্দরের ওপারে ভারতের ডাউকি এলাকায় ৪-৫শ পণ্যবাহী ট্রাক আটকা পড়েছে। পাথর ও চুনাপাথর বহনকারী এসব ট্রাক আটকা পাড়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন আমদানিকারকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদ স্থলবন্দরেও এ দিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। স্থলবন্দরের শূন্যরেখায় ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাক কাস্টমস ছাড়পত্র না পাওয়ায় আটকা পড়ে। তবে সন্ধ্যা ৭টার দিকে ১৫০টি ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের শুল্কায়ন সম্পূর্ণ করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।

হিলি স্থলবন্দরেও সকাল থেকে শুল্কায়ন কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। হিলি স্থলবন্দরের আমদানিকারক-রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক জানান, কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মবিরতি পালন করায় বন্দরে পণ্যবাহী শতাধিক ট্রাক খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে করে আমদানিকৃত পণ্যের জন্য অতিরিক্ত বন্দর ভাড়া ও গাড়ি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। পচনশীল পণ্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একই অবস্থা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থলবন্দরে। কাস্টমস জানায়, রোববার বুড়িমারী স্থলবন্দরে ভারত থেকে আদা ও পাথরবাহী ৩৭টি পণ্যবাহী গাড়ি বাংলাদেশে এসেছে। এসব গাড়ির শুল্কায়ন ও পরীক্ষণ হয়নি।

এদিকে কাস্টমস কর্মকর্তাদের কর্মবিরতি মোংলা বন্দরে পালিত হলেও জেটিতে কনটেইনারসহ অন্য কোনো জাহাজ না থাকায় এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বন্দরের নৌ চ্যানেলে রোববার ৮টি জাহাজের অবস্থান ছিল। এসব জাহাজে যথারীতি স্বাভাবিকভাবে পণ্য ওঠানামা করেছে। তবে জেটিতে কোনো জাহাজ না থাকায় অপারেশন কাজ বন্ধ ছিল।

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন চট্টগ্রাম ব্যুরো এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা)

 

এনবিআর      কর্মসূচি

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ