বর্তমানে ইতিহাসের সবচেয়ে বেপরোয়া জাতি হলো ইহুদি জাতি। পবিত্র কোরআনের বর্ণনামতে, যারা বহুবার আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছে। ইসলামের সূচনা থেকে যারা মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্র করেছে, শত্রুতা করেছে। এমনকি প্রিয় নবী (সা.)-কে হত্যা করার পর্যন্ত চেষ্টা করেছে।
এই জাতি যে শুধু মুসলমানদের ওপর ক্ষিপ্ত, তা কিন্তু নয়; বরং তারা আল্লাহর একজন মনোনীত ফেরেশতার ওপর ক্ষিপ্ত। ওই ফেরেশতার ওপর তাদের রাগ এত বেশি যে তারা তাঁকে শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। অথচ আল্লাহর ওপর ঈমান আনা যেমন আবশ্যক, তাঁর ফেরেশতাদের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করাও আবশ্যক। আল্লাহ যাদের ভালোবাসেন, তাদের সঙ্গে শত্রুতা পোষণ ঈমান বিরোধী কাজ।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
‘যদি কোনও ব্যক্তি আল্লাহর, তাঁর ফিরিশতাদের, তাঁর রাসুলগণের এবং জিবরাঈল ও মিকাঈলের শত্রু হয়, তবে (সে শুনে রাখুক) আল্লাহ কাফিরদের শত্রু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৯৮)
তাফসিরবিদদের মতে, এই আয়াতটি নাজিল হয়েছে ইহুদিদের ব্যাপারে। তারা জিবরাঈল (আ.)-কে তাদের শত্রু হিসেবে বিবেচনা করে। কোনো কোনো তাফসিরবিদের মতে, এই আয়াত নাজিল হওয়ার প্রেক্ষাপট তৈরি হয় ইহুদিদের সঙ্গে হজরত উমার (রা.)-এর একটি বিতর্কের সূত্রে। একবার জনৈক ইহুদির সঙ্গে উমার (রা.)-এর সাক্ষাৎ হলে, সে বলল, তোমাদের নবী যে জিবরাঈলের কথা বলে, সে তো আমাদের শত্রু।
তদুত্তরে হজরত উমার (রা.) নিজ ভাষায় বললেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ, রাসুলগণ, বিশেষ করে জিবরাঈল ও মীকাঈল (আ.)-এর সাথে শত্রুতা পোষণ করে, ওই সব কাফির মূলত আল্লাহর সাথে শত্রুতা পোষণ করে।’ অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাঁর কথাগুলোকে আয়াত হিসেবে নাজিল করলেন। (তাফসিরে ইবনে কাসির)
শত্রুতার কারণ:
হজরত জিবরাঈল (আ.)-এর প্রতি ক্ষোভ ও শত্রুতার কারণ তারা নিজেরাই জানিয়েছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, একবার ইহুদিদের একটি দল রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলে, আমরা আপনাকে কয়েকটি প্রশ্ন করছি যার সঠিক উত্তর নবী ছাড়া অন্য কেউই দিতে পারে না। আপনি সত্য নবী হলে এর উত্তর দিন।’ রাসুল (সা.) বলেন, আচ্ছা ঠিক আছে, যা ইচ্ছা তাই প্রশ্ন কর। কিন্তু অঙ্গীকার কর, যদি আমি ঠিক ঠিক উত্তর দেই তবে তোমরা আমার নবুওয়াতকে স্বীকার করে আমার অনুসারী হবে তো?
তারা অঙ্গীকার করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন হজরত ইয়াকুব (আ.)-এর মতো আল্লাহকে সাক্ষী রেখে তাদের থেকে পাকা ওয়াদা গ্রহণ করেন এবং তাদেরকে প্রশ্ন করার অনুমতি দেন। তারা বলে, ‘প্রথমে এটা বলুন তো, হজরত ইয়াকুব (আ.) নিজের ওপর কোন জিনিসটি হারাম করেছিলেন?’
রাসুলুল্লাহ (সা.) তখন বলেন, শোনো! যখন ইয়াকুব ‘আরকুন সিনা’ রোগে ভীষণভাবে আক্রান্ত হন তখন তিনি প্রতিজ্ঞা করেন যে, আল্লাহ তাআলা যদি তাঁকে এ রোগ থেকে আরোগ্য দান করেন, তবে তিনি উটের গোশত খাওয়া ও উষ্ট্রীর দুধ পান করা পরিত্যাগ করবেন। আর এ দুটি ছিল তাঁর খুবই লোভনীয় ও প্রিয় বস্তু। অতঃপর তিনি সুস্থ হয়ে গেলে এ দুটো জিনিস নিজের ওপর হারাম করে দেন।
‘তোমাদের ওপর সেই আল্লাহর শপথ, যিনি হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলেন, সত্য করে বলো তো এটা সঠিক নয় কি?’ তারা শপথ করে বলে, ‘নিশ্চয়ই সত্য।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) আরও বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।’
অতঃপর তারা বলে, ‘আচ্ছা বলুন তো, তাওরাতের মধ্যে যে নিরক্ষর নবীর সংবাদ রয়েছে, তাঁর বিশেষ নিদর্শন কী? আর তাঁর কাছে কোন ফেরেশতা ওহি নিয়ে আসেন?’ তিনি বলেন, ‘তাঁর বিশেষ নিদর্শন এই যে, যখন তাঁর চক্ষু ঘুমিয়ে থাকে তখন তাঁর অন্তর জাগ্রত থাকে।’
‘তোমাদেরকে সেই প্রভুর কসম, যিনি হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত অবতীর্ণ করেছিলেন, বলো তো এটা সঠিক উত্তর নয় কি?’ তারা সবাই কসম করে বলে, ‘আপনি সম্পূর্ণ সঠিক উত্তর দিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।’
তারা বলে, ‘এবার আমাদেরকে দ্বিতীয় অংশের উত্তর দিন। এটাই আলোচনার সমাপ্তি।’ তিনি বলেন, ‘আমার বন্ধু জিবরাঈলই (আ.) আমার কাছে ওহি নিয়ে আসেন এবং তিনিই সমস্ত নবীর কাছে ওহি নিয়ে আসতেন। সত্য করে বলো এবং কসম করে বলো, আমার এ উত্তরটিও সঠিক নয় কি?’ তারা শপথ করে বলে, ‘হ্যাঁ, জবাব সঠিকই বটে; কিন্তু তিনি আমাদের শত্রু। কারণ, তিনি কঠোরতা ও প্রাণান্তকর কারণসমূহ ইত্যাদি নিয়ে আসেন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির)
এই ঘটনা দ্বারা বোঝা যায় যে, বিভিন্ন সময় তাদের বক্রতার কারণে মহান আল্লাহ তাদের ওপর যে কঠোরতা বা শাস্তিগুলো পাঠিয়েছিলেন, সেগুলোর বার্তাবাহক ছিলেন জিবরাঈল (আ.)। এ কারণেই তারা জিবরাঈল (আ.)-এর প্রতি শত্রুতা পোষণ করতো।