সর্বশেষ
‘কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে ইরান’
দ্বিকক্ষ সংসদ নিয়ে অধিকাংশ দল একমত: আলী রিয়াজ
রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ভূপাতিত, নিহত পাইলট
ভারতে যাওয়ার সময় নেত্রকোনার সাবেক চেয়ারম্যান গ্রেফতার
জাবি ছাত্রীকে হেনস্তার অভিযোগে রাবি শিক্ষার্থী আটক
বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে কানাডিয়ান হাইকমিশনারের বৈঠক
‘উমামার সব অভিযোগ ফেলে দেওয়ার মতো না, আবার সব গ্রহণ করার মতোও না’
পেহেলগামকাণ্ডের পর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ভারত-পাকিস্তান
বিকালে আন্দোলকারীদের সঙ্গে বসবেন অর্থ উপদেষ্টা
মুরাদনগরের ধর্ষণ: পোস্টে যা লিখলেন দীঘি ফারিয়া মিশা ও জয়
ঢাবির নারী শিক্ষার্থীদের হল সমস্যা সমাধানে স্মারকলিপি প্রদান
এনবিআরের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টার বৈঠক আজ হবে না
মাংস নয়, এবার কাঁঠালের বীজ দিয়ে তৈরি করুন মজাদার কোরমা
৮ আগস্ট ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ‍পালিত হবে না: প্রেস সচিব
‘ইসরায়েল হামলা বন্ধ না করলে অস্ত্র ছাড়বে না হিজবুল্লাহ’

বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম

অনলাইন ডেস্ক

২০১৬ সালে জাপানের ফুকুয়ামায় এক জোড়া আম (এক কেজি) বিক্রি হয় পাঁচ লাখ ইয়েনে। তখনকার বিনিময় হার হিসাবে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা! ২০১৯ সালে এক জোড়া আমের দাম ওঠে ৪ লাখ টাকার বেশি। ২০২৩ সালে এক কেজি আম বিক্রি হয় সাড়ে চার লক্ষাধিক টাকায়। এই আম এখন ফলের জগতের ‘তারকা’, বলা হয়ে থাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম। ইন্টারনেটের কল্যাণে মোটামুটি সবার কাছেই এটি পরিচিত। পোশাকি নাম ‘মিয়াজাকি’। আসল নাম ‘তাইয়ো নো তামাগো’, ইংরেজিতে ‘এগ অব দ্য সান’ অর্থাৎ সূর্যডিম। গায়ের রং সকালের সূর্যের মতো টকটকে লাল। আকৃতি ডিমের মতো। এ জন্যই এমন খেতাব। সবই না হয় বোঝা গেল, কিন্তু এর উচ্চমূল্যের কারণ কী? কী এমন আছে এই আমে?

কেন এত দাম

আদতে যতটা না আমে আছে, তার চেয়ে বেশি আছে নামে। সেই যে কোনোভাবে কোনো কিছুর একবার ‘নাম’ হয়ে গেলে, সেই নামের ভারেই বাড়বাড়ন্ত দাম থাকে তার! হ্যাঁ, এ কথা ঠিক যে ফল-দুনিয়ার ‘সেনসেশন’ হওয়ার ফলে নামের ভার আছে বটে; তবে উচ্চ মূল্য হওয়ার যোগ্যতাও কিন্তু এর কম কিছু নয়। মূলত বাজারদর নির্ধারণে কোনো জিনিস উচ্চমূল্য হওয়ার জন্য যেসব বিষয় বিবেচিত হয়, মিয়াজাকির ক্ষেত্রে তা বেশ ভালোভাবেই আছে।

কথায় আছে ‘আগে দর্শনদারি, পরে গুণবিচারী’। তাই প্রথমেই বলা যেতে পারে এর বাহ্যিক সৌন্দর্যের কথা। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এই আম দেখতে উদীয়মান সূর্যের মতো উজ্জ্বল লাল। ডিমের মতো গোল। ফলে মিয়াজাকি দেখাও যেন ‘চোখের সুখ’। এরপর অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে এর অতুলনীয় স্বাদের কথা। এই আমে ১৫ শতাংশ বা তার বেশি পরিমাণে সুগার থাকে। ফলে খেতে বেশ মিষ্টি ও রসালো। সেই সঙ্গে আঁশবিহীন বলে জিবে বা দাঁতের ফাঁকে আঁশ আটকায় না। আমের ভেতরের অংশ, অর্থাৎ পাল্প অত্যন্ত নরম ও মোলায়েম। মুখে দিলেই গলে যায়। চিবোতে কষ্ট হয় না। মিয়াজাকির গন্ধ? মিষ্টি ফুলের মতো। তবে মোটেই তীব্র নয়, হালকা। পাল্পে থাকে হালকা মধুর সুঘ্রাণ। আর প্রাকৃতিকভাবে পাকানো হয় বলে এর ঘ্রাণ হয় বিশুদ্ধ ও সতেজ।

নাম কেন মিয়াজাকি

বিশ্বের সবচেয়ে দামি আম হওয়ার ক্ষেত্রে এর নিখুঁত ও নিয়ন্ত্রিত চাষপদ্ধতির ভূমিকাও উল্লেখযোগ্য। ‘আরউইন’ প্রজাতির এই আমের আদি নিবাস মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায়। আশির দশকে বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য এর বীজ নিয়ে আসা হয় জাপানে। এরপর মিয়াজাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এবং স্থানীয় কয়েকজন কৃষক পরীক্ষামূলকভাবে এই আমের স্বতন্ত্র প্রজাতি উদ্ভাবন করেন। তাঁদের ঐতিহ্যবাহী চাষপদ্ধতির সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে কয়েক বছরের প্রচেষ্টায় তাঁরা এই অনন্য প্রজাতির মিয়াজাকি উৎপাদনে সফল হন।

মিয়াজাকির পুরো চাষপদ্ধতি অত্যন্ত সুনিয়ন্ত্রিত। জাপানের একদম দক্ষিণের অঞ্চল মিয়াজাকি প্রদেশ এই আম চাষের জন্য সর্বাধিক উপযোগী। এই প্রদেশের উষ্ণ জলবায়ু, উর্বর মাটি ও পর্যাপ্ত সূর্যালোকের পাশাপাশি বিশেষ চাষকৌশলের দরুন একমাত্র এখানেই উৎপাদিত হয় সর্বোচ্চ মানের মিয়াজাকি আম। এই আমের নামকরণ হয়েছে মিয়াজাকি প্রদেশের নামানুসারেই।

মিয়াজাকি প্রদেশের আমচাষিরা সাধারণত গ্রিনহাউসের নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে এটি চাষ করেন। গ্রিনহাউসের ভেতর উচ্চ পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ মাটিতে এর চারা লাগানো হয়। নিয়মিত সার ও পানি দেওয়ার পাশাপাশি ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা খুব কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে চাষিরা একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রা এবং পর্যাপ্ত বায়ুপ্রবাহ নিশ্চিত করেন। ভেতরের বাতাস যেন বেশি আর্দ্র না হয়, সূক্ষ্মভাবে সেটিও লক্ষ রাখেন। এমনকি একটি গাছে একটি আম রাখা কিংবা আমের গায়ে সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে সার্বক্ষণিক নিবিড় পরিচর্যার রীতিও আছে সেখানে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে গাছ থেকে বিকাশের সময় প্রায় ৮০ শতাংশ কুঁড়ি কেটে ফেলা হয়, যাতে বাকি ফলগুলো সম্পূর্ণ পুষ্টি পায়। সমান রং ও ভর তৈরির জন্য প্রতিটি আমকে তার ওজন ও আকৃতি অনুযায়ী ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। পরিপক্ব হয়ে গাছ থেকে প্রাকৃতিকভাবে নিজে নিজে ছিঁড়ে না পড়লে আম পাড়া হয় না।

সব মিয়াজাকির দাম সমান নয়

মিয়াজাকি আম-মাত্রই যে লাখ টাকা মূল্যের হবে, তা কিন্তু নয়। এমন দাম হওয়ার জন্য এই আমকে পেতে হয় ‘তাইয়ো নো তামাগো’ তথা ‘সূর্যডিম’ টাইটেল। কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড উত্তীর্ণ হওয়া সাপেক্ষে এই খেতাব, (বলা ভালো ‘ছাড়পত্র’) দেয় মিয়াজাকি অ্যাগ্রিকালচারাল ইকোনমিক ফেডারেশন। প্রতিষ্ঠানটি খুব নিখুঁতভাবে আমের সার্বিক গুণাগুণ পরীক্ষা করে দেখে। প্রথমেই আমের রং পরীক্ষা করা হয়। দেখা হয় আমের লাল রঙের ফাঁকে কোথাও কোনো সবুজ দাগ আছে কি না এবং কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ লাল রং হয়েছে কি না। রং-পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মাপা হয় এর ওজন। কমপক্ষে ৩৫০ গ্রাম ওজন হলে তবেই সেটি পরবর্তী ধাপ, অর্থাৎ স্বাদ-পরীক্ষার জন্য বিবেচিত হবে। স্যাকারিমিটার অনুযায়ী আমটিতে সুগারের পরিমাণ থাকতে হবে অবশ্যই ১৫ শতাংশ বা তার বেশি। এ সবকিছুতে উত্তীর্ণ হলে দেওয়া হয় মর্যাদাপূর্ণ মিয়াজাকি সনদ।

পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমগুলোকে পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়। প্রথম দুটি শ্রেণিকে দেওয়া হয় ‘তাইয়ো নো তামাগো’ খেতাব। আর এই দুই শ্রেণির মিয়াজাকিই মূলত বিক্রি হয় এমন আকাশছোঁয়া দামে। সূত্র বলছে, মাত্র ১০ শতাংশ আম এই সম্মানজনক সনদ পেয়ে থাকে। বাকি মিয়াজাকির মূল্য মোটামুটি সাধারণের ক্রয়সীমার মধ্যেই থাকে।

বেশ কয়েক বছর ধরে ভারত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিয়াজাকি আমের চাষ হচ্ছে। অবশ্য এসব মিয়াজাকির মূল্য অতটা নয়। যদিও ভারতে বছর দুয়েক আগে এক কেজি মিয়াজাকি আড়াই লাখ রুপিতেও বিক্রি হয়েছে। তবে সে দেশে সাধারণত কেজিপ্রতি ১০০ থেকে ২০০ রুপিতে এই আম পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে এই আমের উৎপাদন বেশ ভালো। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অল্প কিছু অঞ্চলেও এর চাষ হচ্ছে। এ দেশে কমবেশি দুই হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকা কেজিতে পাওয়া যায় এই আম। প্রশ্ন জাগতে পারে, এত কমে কীভাবে? ওই যে, সূর্যডিমের খেতাব!

 

সূত্র: জাপানিজ ফুড গাইড, টাইমস অব ইন্ডিয়া ডেইলি স্টার

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ