সর্বশেষ
সিরিজ নিশ্চিতের ম্যাচে টস জিতে বোলিংয়ে বাংলাদেশ
আবারও কেন বিক্ষোভে ফেটে পড়ল পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীর?
যে মেলায় মেলে পছন্দের জীবনসঙ্গী
মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু
টাকা খরচ করে এমপি হতে চায় ব্যবসা করার জন্য: হাসনাত আব্দুল্লাহ
ময়মনসিংহ বিভাগে তরুণদের মধ্যে বিএনপির মনোনয়ন দৌড়ে যারা
বাচ্চা নিয়ে সেঞ্চুরি করতে চান পরীমনি!
৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে জামায়াত
১ পেনাল্টি নিতে হলো ৩ বার, ৩ বারই ‘সেভ’ দিয়ে দলকে জেতালেন তিনি
দেশের বাজারে আজ যে দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ
ফের সবজির বাড়তি দাম, নাকাল ভোক্তা
জাহ্নবী আমাকে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছিল: বরুণ ধাওয়ান
খোলামেলা মন্তব্য করে বিপাকে পাকিস্তানি অভিনেত্রী
ঢাকায় বৃষ্টি নিয়ে আবহাওয়া অফিসের বার্তা
টানা ছুটিতে পর্যটনকেন্দ্রে উপচে পড়া ভিড়

যে মেলায় মেলে পছন্দের জীবনসঙ্গী

অনলাইন ডেস্ক

শুক্রবার দুপুর গড়িয়ে বিকাল। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষের পদচারণায় মুখরিত দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ। কাচের চুড়ির টুংটাং শব্দ, ঢাক-ঢোলের বাজনা আর মাইক থেকে ভেসে আসা আদিবাসীদের গানের সুরের মূর্ছনায় মেতেছে পুরো এলাকা।

এ দৃশ্য দীর্ঘ ২০০ বছর ধরে চলা অনন্ত এক উৎসব, যা সবার কাছে ‘বাসিয়া হাটি’ নামে বেশ পরিচিত। এ মেলায় পছন্দের জীবনসঙ্গীও খুঁজে নেন তরুণ-তরুণীরা।

প্রতি বছর দুর্গাপূজার বিজয়া দশমীর পরের দিন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার গোলাপগঞ্জ এলাকায় আয়োজিত এ মেলায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষ ছুটে আসেন।

মেলায় সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে তরুণ-তরুণীদের সাজসজ্জা। রঙিন শাড়ি, মাথায় ফুল, হাতে কাঁচের চুড়ি, ঠোঁটে লাল লিপস্টিক- একেকজন যেন রঙের উৎসবে হারিয়ে যান তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ভেলায়। মেলার মাঠে দোকানের পসরা চোখে পড়ার মতো। কাচের চুড়ি, রঙিন ফিতা, ঝিনুক, মাটির পাত্র থেকে শুরু করে গৃহস্থালির দা-কুড়াল, হাঁড়ি-পাতিল সবই মেলে একসঙ্গে।

এই মেলা শুধু কেনাকাটার আয়োজন নয় এ যেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের এক সামাজিক উৎসব ও মিলনমেলা। দিনভর চলে নাচ-গান, বাজনার তালে দলগত পরিবেশনা আর তরুণ-তরুণীদের আড্ডা। শুধু সাঁওতাল নয়, হিন্দু-মুসলিমসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষও মেতে ওঠেন এই উৎসবে। মেলায় এত ভিড় হয় যে, মোবাইল নেটওয়ার্কও কাজ করতে হিমশিম খায়।

প্রতি বছরের মতো এবারো শারদীয় দুর্গোৎসবের পরের দিন শুক্রবার (৩ অক্টোবর) বিকাল ৪টায় পর থেকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, রাজশাহী, বগুড়া, পঞ্চগড় ও নীলফামারী হতে আসা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের হাজারও নারী-পুরুষ ভিড় জমিয়েছেন উপজেলার গোলাপগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। সঙ্গে এসেছেন অন্য সম্প্রদায়ের মানুষও।

দুইশ বছরের ঐতিহ্য ধরে চলে আসা এই মেলা ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর আত্মীয়-স্বজনদের মিলনমেলায় পরিণত হলেও এর বিশেষ আকর্ষণ হলো যুবকদের পছন্দের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সুযোগ। এখানে তরুণ-তরুণীরা একে অপরকে পছন্দ হলে পরিবারের মাধ্যমে আলোচনার পরে বিয়ে হয় বলে এমন প্রচলন আছে এই মেলাকে ঘিরে।

মেলায় আসা আদিবাসী তরুণী এঞ্জিলিনা মার্ডি জানান, এক সময় এই মেলায় জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার প্রচলন ছিল বলে শুনেছি। তবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় সব বদলে গেছে। এখন এই রীতিতে ভাটা পড়েছে। সময়ের সঙ্গে আদিবাসীদের জীবনযাত্রার মান এখন অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বেশিরভাগ আদিবাসী ছেলে-মেয়ে এখন স্কুলমুখী হয়েছে। কালের বিবর্তনে পুরোনো ঐতিহ্যগুলো অনেকটাই মুছে যেতে বসেছে।

আদিবাসী সমাজ উন্নয়ন সমিতির আহ্বায়ক জোসেফ হেমরম বলেন, পূর্বপুরুষেরা এই মেলা শুরু করেন। আমরা শুধু ধারাবাহিকতা রক্ষা করছি। তবে কবে থেকে এ মেলার প্রচলন শুরু হয়েছে সেটি সঠিকভাবে বলা যাবে না। আনুমানিক দুশ বছর ধরে এ মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এটি বাপ-দাদার কাছে শুনেছি। তবে বিয়ের বিষয়টি আগের মতো করে এখন আর হয় না। মেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে এলাকার সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন।

এ ব্যাপারে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বিশিষ্ট সমাজসেবক কেন্দ্রীয় কৃষক দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মনজুরুল ইসলাম মনজু বলেন, এই মেলা আমাদের দীর্ঘ দিনের সম্প্রীতির নিদর্শন। এই মেলায় সব ধর্ম ও বর্ণের মানুষ ছুটে আসেন। এখানে আসা মানুষ খুঁজে পায় তাদের সংস্কৃতি ও সম্প্রীতির বন্ধন। কয়েকশ বছরের পুরোনো এই মেলা যেন আমাদের আত্মার সঙ্গে মিশে গেছে। যেখানে শুধু স্নেহ ও ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে আমাদের বিবেকবোধ।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ