সর্বশেষ
বাংলাদেশ-চীনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার প্রয়াস
রাকসুর চূড়ান্ত বিধিমালা হয়নি, জুনে নির্বাচন নিয়ে সংশয়
মেট্রোরেলের র‍্যাপিড পাসও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায়, ভোগান্তি যাত্রীদের
নারী বিশ্বকাপে খেলতে ভারতে যাবে না পাকিস্তান
৩ মে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশের ডাক
সিইসির সঙ্গে আজ বৈঠকে বসছে এনসিপি
ক্যাস্ট্রলের আফটারমার্কেট ডিস্ট্রিবিউটর রক এনার্জি
রাজনৈতিক বিবেচনায় আর কোনো নতুন ব্যাংক নয়
বিএনপি-এনসিপির পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, প্রশাসন আসলেই কার পক্ষে?
৮ মাস পর খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের ঝটিকা মিছিল  
সাবেক ১১ মন্ত্রীসহ ১৯ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির
বিচার ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে হবে: আইন উপদেষ্টা
১০ বছরের গবেষণায় ভাতেও পাওয়া গেছে আর্সেনিক, বিজ্ঞানীদের সতর্কবার্তা
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে বিএনপি
ভিনগ্রহে প্রাণের অস্তিত্বের শক্ত প্রমাণ পেলেন বিজ্ঞানীরা

অর্ধলাখ মানুষ পানিবন্দি

অনলাইন ডেস্ক

তৃতীয় দফায় পানি বাড়ছে পদ্মায়। ফলে কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের দুই ইউনিয়নের ৩৬ গ্রামের আনুমানিক ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির মাষকলাই ও মরিচ ক্ষেত। ক্ষতিগ্রস্তদের আশঙ্কা, ১০ দিন ধরে পদ্মা নদীতে যে হারে পানি বেড়ে চলেছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে লোকালয়ও শিগগিরই তলিয়ে যাবে। এরই মধ্যে প্রশাসন দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করেছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি নেওয়ার তথ্য জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। তাদের ভাষ্য, বন্যাঝুঁকিতে থাকা চার ইউনিয়নের মানুষের জন্য দুটি সাইক্লোন শেল্টার ও নদীর কাছাকাছি স্কুল-কলেজের বহুতল ভবনগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, দৌলতপুরের সীমানায় পদ্মা নদীর পানি ১৪ সেপ্টেম্বর থেকে বাড়ছে। উপজেলার ভাগজোত পয়েন্টে ১০ দিনে পানিপ্রবাহ বেড়েছে ১ দশমিক ৭৩ সেন্টিমিটার। দিনে গড়ে পানি বাড়ছে শূন্য দশমিক ১৭ সেন্টিমিটার। এ পয়েন্টে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত পানির উচ্চতা ছিল ১৪ দশমিক ২৬ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৪ সেন্টিমিটার নিচে। পদ্মা নদীর হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পয়েন্টে এদিন পানির উচ্চতা ছিল ১২ দশমিক ৩৪ সেন্টিমিটার, যা বিপৎসীমার ১ দশমিক ৪৬ সেন্টিমিটার নিচে। এর আগে জুলাই ও আগস্ট মাসে পদ্মায় দুই দফা পানি বেড়েছিল।
চরাঞ্চলের বাসিন্দারা জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধির ফলে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৩৬টি গ্রামের ৫০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দি। বাড়িঘরে পানি না ঢুকলেও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। গ্রামের চারদিকে পানি হওয়ায় উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ইউনিয়ন দুটির। নৌকা দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। রাস্তা ডুবে যাওয়ায় ভবন্দীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তেমাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

পদ্মায় বর্ষাকালে পানি বাড়লেও সাধারণত মাষকলাই চাষের আগেই জমি থেকে নেমে যায়। ফলে কৃষকরা চরাঞ্চলে ব্যাপকভাবে এ ডালের চাষ করেন। এ বছর তেমন হারে পানি না বাড়ায় আশাবাদী হয়ে অনেকে মাষকলাই চাষ করেছিলেন। হঠাৎ পানি বৃদ্ধির কারণে তাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, এ বছর চর এলাকার নিম্নাঞ্চলের বেশ কিছু জমিতে আউশ ধানের চারা রোপণ করা হয়েছিল। কিছুদিন আগের বন্যায় ওই ধানও নষ্ট হয়ে যায়। মাষকলাই দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছিলেন। সেই আশা ধূলিসাৎ হয়ে গেছে।

চিলমারী হাজি পাণ্ডব আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রায়হানুল হক বলেন, কয়েক দিন ধরে হঠাৎ পদ্মায় দ্রুতগতিতে পানি বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী সপ্তাহের মধ্যে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।

রামকৃষ্ণপুর ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজ মণ্ডল বলেন, তাঁর ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে মাষকলাই, মরিচসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এ ইউনিয়নের প্রায় ১৬টি গ্রামের মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় দুর্ভোগে পড়েছেন।
পাশের চিলমারী ইউনিয়নের ২০ গ্রামেও একই পরিস্থিতি। এ তথ্য জানিয়ে চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান বলেন, পানিতে রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফসল তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম লেমনের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, চলতি মৌসুমে উপজেলার ২ হাজার হেক্টর জমিতে মাষকলাই চাষ হয়েছে। তাদের লক্ষ্যমাত্রার ৬৫ শতাংশই চাষ হয় চরাঞ্চলে। এরই মধ্যে প্রায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমির মাষকলাই ও মরিচ ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে। বেশি ক্ষতি হয়েছে চিলমারী ও রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নে।
কুষ্টিয়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশিদুর রহমান বলেন, ভারী বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসায় ১০ দিন ধরে পদ্মায় পানি বেড়েই চলেছে। আরও দু-এক দিন পানি বাড়বে, তার পর কমা শুরু করবে বলে আশা করছেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নদীভাঙন রোধে উদয়নগর বিজিবি ক্যাম্পের কাছে জিও ব্যাগ ও টিউব ফেলা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যসহ অন্যান্য উপকরণের সংকট মোকাবিলায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন বলে জানান দৌলতপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আবদুল হান্নান।

আর ইউএনও মো. ওবাইদুল্লাহর ভাষ্য, বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে তথ্য জানতে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে দুই ইউনিয়নের মানুষের জন্য দুটি সাইক্লোন শেল্টার প্রস্তুত করেছেন। নদীর কাছাকাছি স্কুল-কলেজের বহুতল ভবনগুলোকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ