বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রভাবশালী নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানকের সম্পত্তির পরিমাণ গত ১৫ বছরে ৩০ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামা অনুযায়ী, নানক ও তাঁর স্ত্রীর যৌথ সম্পদের পরিমাণ ছিল প্রায় ৬৩ লাখ টাকা। সর্বশেষ ২০২৪ সালের হলফনামায় দেখা যায়, এই সম্পত্তির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকায়।
নানক ২০০৮ সালে ঢাকা-১৩ আসনে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং শেখ হাসিনার সরকারের ছায়ায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পান। মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় তাঁর বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ৬ কোটি টাকায় পৌঁছে।
আওয়ামী লীগের এই নেতার জমিজমা দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে; যার কিছু আছে ঢাকায়, কিছু নিজ জেলা বরিশালে আবার কিছু আছে কক্সবাজারেও।
২০২৪ সালের হলফনামা অনুযায়ী, নানক এখন ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিক জমি, বাড়ি, ও মাছের খামারের মালিক। রাজধানীর উত্তরায় ছয়তলা বাড়ি, মোহাম্মদপুরে আটতলা বাড়ি, বরিশাল ও কক্সবাজারে জমি, এবং বরিশালের বিভিন্ন এলাকায় সম্পত্তি অর্জনের বিষয়টি হলফনামায় উল্লেখ করা হয়েছে, যার অধিকাংশই তিনি পৈতৃক সম্পত্তি বলে দাবি করেছেন।
এর আগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে তাঁর দাখিল করা হলফনামায় দেখা যায়, নানক ও তাঁর স্ত্রীর যৌথ সম্পদের পরিমাণ হিসাবে ৬৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৫১ টাকা। এ ছাড়া ব্যবসা ও কৃষিকাজ থেকে তাঁদের বার্ষিক আয় দুই লাখ টাকা বলেও হলফনামায় উল্লেখ করেন নানক। পরের পাঁচ বছরের ক্ষমতায় যেন আলাদিনের চেরাগ পেয়ে যান নানক। ২০১৪ সালের নির্বাচনের হলফনামায় দাখিল করা তথ্যে নানক পরিবারের সম্পদ ১০ গুণ বেড়ে যায়।
২০১৪ সালে এসে ছয় কোটি ১৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা হয়ে যায়।
সম্পদ বৃদ্ধির কারণ হিসেবে স্ত্রীর চাকরি, কৃষি, মৎস্য ব্যবসাসহ আরো অনেক কিছু উল্লেখ করেন নানক। অলৌকিকভাবে ২০১৪ সালে এসে আওয়ামী এই নেতার বার্ষিক আয়ও দুই লাখ থেকে প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকায় গিয়ে দাঁড়ায়।
এরপর দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়ন চাইলে দল থেকে গ্রিন সিগন্যাল না পাওয়ায় সেবার সংসদের বাইরেই রয়ে যান নানক। তবে ক্ষমতার অপব্যবহার থেকে দূরে থাকেননি এই নেতা। ছলে-বলে-কৌশলে অবৈধ আয় করেই গেছেন তিনি। সর্বশেষ ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারও দলীয় মনোনয়ন পান। এবার নানক ও তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তি ১৫ বছরে প্রায় ৩০ গুণ বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ কোটি ৮৭ লাখ ১৫ হাজার ৯৫১ টাকায়।
তবে বিশাল সম্পদ বৃদ্ধির উৎস নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে সম্পত্তি বৃদ্ধির ব্যাখ্যায় নানক কৃষি ও মৎস্য ব্যবসা এবং তাঁর স্ত্রীর চাকরির কথা উল্লেখ করলেও অপ্রকাশিত ও অবৈধ সম্পদ গোপনের অভিযোগ রয়েছে।