চড়ুই থেকেও ছোট্ট একটা পাখি। দেখে মনে হয় যেন আলতায় মোড়ানো। খুব যত্ন করে তাকে রং করেছে কেউ…এই পাখিটাই আলতা মুনিয়া। আজ থেকে এক যুগ আগে দিয়াবাড়ি ছিল আলতা মুনিয়াদের স্বর্গরাজ্য। সে সময় কলেজ ইউনিফর্মে বন্ধুরা মিলে একদিন ঘুরতে এসে দেখেছিলাম এই পাখির বিশাল এক ঝাঁক। আমার এর আগে কখনো ধারণা ছিল না কোলাহলপূর্ণ রাজধানীতে এমন সুন্দর পাখির দেখা পাওয়া সম্ভব।
ঘাসের বন, মধ্যে লাল আগুনে ফুলের মতো ফুটে আছে এই পাখি। এক ঘাস থেকে আরেক ঘাসে ছোটাছুটি করছে। এই সৌন্দর্য যাঁরা দেখেছেন, তাঁরাই শুধু অনুধাবন করতে পারবেন। এক যুগে দিয়াবাড়ি আমূল বদলে গেল। জলাভূমিগুলো ভরাট করে হলো গগনচুম্বী দালান ও মেট্রোরেল। আর সেই ইকোসাইড নগরায়ণের রিপল ইফেক্ট হিসেবেই মুনিয়ারা একে একে বিদায় নিতে শুরু করল নিভৃতে।
লাল মুনিয়া দিয়ে শুরু হলো, এরপর একে একে সবই হারিয়ে গেল। কালেভদ্রে এক-দুই বা চারটার ছোট গ্রুপ দেখা যায়, এর বেশি নয়। বর্তমানে ঢাকার আফতাবনগর এলাকায় বছরের শরৎ–হেমন্তে লাল মুনিয়ার দেখা মেলে। বহু কষ্টে বড় বড় ক্যামেরা হাতে পাখিপ্রেমীরা ছুটে যান চিত্র ধারণের জন্য। সময় পাখিগুলোকে দেখা যায় কাশফুল মুখে ছুটোছুটি করতে, যা এদের বাসা বানানোর উপকরণ। বাসায় ৮-১০টি ডিম দেয় এরা।
ডিম ফুটে বাচ্চা বেরোনোর সময়কাল ১২-১৫ দিন। আর ছানাগুলো উড়তে শেখার সময় মাসখানেক। আফতাবনগরসহ অধিকাংশ কাশবনে আগুন দেওয়ায় এদের বাচ্চাসহ বাসা পুড়ে যায়। এ জন্য এদের শেষ চিহ্নটুকুও ধীরে ধীরে এই শহর থেকে মুছে যাচ্ছে।