সর্বশেষ
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাতের
এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: নাহিদ ইসলাম
দেরি করে পৌঁছানোয় স্বপ্নভঙ্গ ওদের
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
নির্বাচনের জন্য এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি
বিলাসবহুল অফিস ও বন্দর কমিটি নিয়ে যা বললেন হান্নান মাসউদ
শাহজাদপুরে যুবদল কর্মীকে হত্যার অভিযোগ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া প্রমাণ করে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়: দুদু
‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠিত

উনকোটি: পাহাড় কেটে গড়া এক কোটির চেয়ে এক কম দেব–দেবীর লীলাভূমি

অনলাইন ডেস্ক

ঝটিকা সফরে ত্রিপুরা যাওয়াটা সার্থক করল ইউনেসকো হেরিটেজ সাইট উনকোটির পাহাড় কেটে গড়া এক কোটির চেয়ে এক কম দেব–দেবীর লীলাভূমি। উনকোটি শব্দের অর্থ এক কোটি থেকে এক কম। অর্থাৎ ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯। ইউনেসকোর হেরিটেজ স্থানের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে ত্রিপুরার এই পাহাড়ি অঞ্চল। এখানকার পাথরে খোদাই করা সপ্তম-নবম শতাব্দীর অনবদ্য ভাস্কর্যগুলো নিয়ে নানা গল্প রয়েছে।

হিন্দু পুরাণমতে, শিব এক কোটি দেব–দেবীকে নিয়ে কাশী যাওয়ার পথে এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। সকালে শিব ঘুম থেকে উঠলেও বাকি দেব–দেবীরা উঠতে পারেননি। তাই তিনি বাকিদের পাথর হয়ে যাওয়ার অভিশাপ দিয়ে নিজেই কাশীর উদ্দেশে রওনা দেন। তাই এখানে এক কোটির চেয়ে এক কম দেব-দেবীর মূর্তি রয়েছে।

এই ভাস্কর্যগুলো ত্রিপুরার রঘুনন্দন পর্বতশ্রেণির মধ্যে একটি পাহাড়ে খোদাই করা আছে। জানা যায়, এখানে ৯৯ লাখ ৯৯ হাজার ৯৯৯টি (৯৯,৯৯,৯৯৯) মূর্তি পাওয়া গেছে। উনকোটি কেবল ধর্মীয় গুরুত্বই রাখে না, এটি প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক দিক থেকেও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। স্থানীয় ককবরক ভাষায় একে বলা হয় সুব্রাই খুং। এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ত্রিপুরার কৈলাশহর মহকুমার উনকোটি জেলার প্রধান পর্যটন স্থান। আগরতলা থেকে এই উনকোটির দূরত্ব প্রায় ১৪২ কিলোমিটার। গাড়ি ভাড়া করেও যাওয়া সম্ভব। আমাদের বাজেট কম ছিল, তাই সকালের ট্রেনই একমাত্র আস্থা। কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ছয়টায় এবং আগরতলা শিলচর এক্সপ্রেস বেলা ১১টায় আগরতলা স্টেশন থেকে ছাড়ে। ভোরের ট্রেনটা ধরার চেষ্টা করাই উচিত। কারণ, অনেকটা সময় লাগে। আবার বিকেল ৫টার পর উনকোটির গেট বন্ধ হয়ে যায়। আগরতলার উদ্দেশে শেষ ফিরতি ট্রেন ছাড়ে বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে।

প্রথমে এই ট্রেনে করে নামতে হবে কুমারঘাট স্টেশনে। ওখান থেকে কৈলাশহর প্রায় ২৬ কিলোমিটার। আমরা একটা ছোট মারুতি গাড়ি ভাড়া করেছিলাম। যাওয়া ও আসা বাবদ ৮০০ রুপি নিল। লোকাল অটো করেও যাওয়া যায়। প্রায় ১৫০ টাকা করে। যাওয়ার পথে দুই ধারের পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি যেন আমাদের সঙ্গেই চলছে উনকোটির পথে। আঁকাবাঁকা পথ ধরে পৌঁছে গেলাম শেষমেশ উনকোটি।

এখানে কোনো টিকিট ভাড়া নেই। শুধু পানির বোতল নিয়ে প্রবেশ করতে দেয়। খাবার নিয়ে ঢোকা নিষিদ্ধ। ওনাদের এই কঠোর ব্যবস্থার জন্যই হয়তো পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে। গেটের বাইরে যথেষ্ট সংখ্যায় খাবারের দোকান আছে। আপনারা চাইলে খেয়ে নিতে পারবেন। গেট দিয়ে ঢোকার আগে নাম লিখতে এবং পাসপোর্ট দেখাতে হবে।এগুলো শেষ করেই আস্তে আস্তে পা ফেলছি পাহাড়ের বুকে।

কোথাও থেকে ঝরনার আওয়াজ কানে ভেসে আসছে। সবুজের সমারোহ ঘিরে আছে এই পাহাড়। এই সবুজের দিকে তাকিয়েও চোখের আরাম হয়। পাহাড়ের শরীর খোদাই করে গড়া এসব স্থাপত্য দেখার জন্য উন্মুখ হৃদয়ের স্পন্দন যেন কানে শুনতে পাচ্ছিলাম। একটু সামনে এগোতেই বিশাল এক সিঁড়ি পাহাড় ঘেঁষে নিচে নেমে গেছে। পাশে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া। পাহাড় কেটে এত এত মুখমণ্ডল ও শরীর গড়া! এত বছর আগে পুরো এলাকাজুড়ে এভাবে পাহাড় কেটে কিছু বানানো কি আদৌ সম্ভব? অনেকক্ষণ ধরে তাকিয়ে রইলাম। সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে দেখছি আর অবাক হচ্ছি। বর্তমানের প্রযুক্তিগত উৎকর্ষের যুগেও মনে হয় না এসব বানাতে পারবে কেউ। অথচ সপ্তম থেকে নবম শতাব্দীতে নাকি তৈরি এসব।

পাহাড়ের সবুজের শরীরে যেন দৈত্যাকৃতি কিছু মুখমণ্ডল বসিয়ে দিয়েছে কেউ। সনাতন ধর্মের দেব-দেবীর মূর্তি এসব। গবেষণার কাজে এখানে অনেক গবেষক এসেছেন। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলেও এর ওপর একটা ডকুমেন্টারি তৈরি হয়েছে।

আসলেই সৃষ্টির রহস্য অনেক বিস্ময়কর। এখানে এসে সব ধরনের দাম্ভিকতা যেন চূর্ণ হয়ে যায়। একটু নিচে নামতেই পাহাড় ঘেঁষে নামছে ঝরনা অঝোর ধারায়। এখানে শুধু হিন্দুধর্মাবলম্বীরা নয়, বরং রয়েছে নানা ধর্মের মানুষের বিচরণ। কেউ হয়তো পূজার জন্য আসেন। আবার কেউ হয়তো আমারই মতো প্রকৃতির সৌন্দর্যে বিলীন হতে আসে, হারিয়ে যেতে আসে।

পুরো পাহাড় ঘুরে দেখতে এক ঘণ্টার মতো সময় লেগেছিল। এখানে যাতায়াতব্যবস্থা যথেষ্ট উন্নত। শেষমেশ সবচেয়ে বড় মূর্তির কাছে দাঁড়িয়ে দেখে নিলাম পাহাড়ের পাদদেশের সেই পুরোনো প্রহরীকে। তাঁর মুখমণ্ডল বেয়ে নামছে ঝরনাধারা। খুব সম্ভবত ইনিই সেই সনাতন ধর্মের দেবতা শিব।

ঝরনায় একটু পা ভিজিয়ে আশপাশটা দেখে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। সবুজের এত বর্ণ একসঙ্গে দেখার সৌভাগ্য আমার সেদিন হয়েছিল! এই পাহাড়ের রূপ যেন আজও চোখ বুজলে ধরা দেয়। আমাকে এখনো টেনে নিয়ে যায় তাঁর কোলে।

কুমারঘাট স্টেশনে পৌঁছানোর পর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ট্রেন এল। টিকিট বাবদ ২৫ টাকা নিয়েছিল। কারণ, এটা আগরতলা ডেমু ট্রেন। আমাদের এখানকার লোকাল ট্রেনের মতো। এটাই শেষ ট্রেন আগরতলা ফেরার। বাসে অনেকটা সময় লাগে আগরতলা থেকে কুমারঘাট পৌঁছাতে। আর আগরতলার উদ্দেশ্যে শেষ বাস দুপুরে ছাড়ে। ৪টা ৫০ মিনিটে  কুমারঘাট স্টেশনে পৌঁছাল এই ট্রেন। ৯টার মধ্যেই আমরা আগরতলা স্টেশনে নামলাম।

হোটেলে ফিরে পরের দিনের প্রস্তুতি নিলাম। সকালেই বের হয়ে পড়ব বাংলাদেশের উদ্দেশে। পরের দিন সকালে বটতলা থেকে বর্ডার পৌঁছে গেলাম ২০ মিনিটের মধ্যেই। বর্ডার অতিক্রম করতে ৩০ মিনিটও লাগল না। এদিকে অটোতে ভাড়া চাইল ৪০০ টাকা। দর–কষাকষি করে জনপ্রতি ১২০ টাকা করেই পৌঁছালাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশন। ওখান থেকে বিকেল চারটার ট্রেন ধরে ৬টা ৩০–এর মধ্যেই কমলাপুর স্টেশনে।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ