সর্বশেষ
পালানো ব্যক্তিদের ফেরানোর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে পাচারের অর্থ ফেরত আনা
অপারেশন সিন্দুরে মোদির ভূমিকা নিয়ে এবার মুখ খুললেন ভারতের প্রতিমন্ত্রী
প্রযুক্তিনির্ভর মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনার কাজ চলছে: শিক্ষা উপদেষ্টা
সৌদি এলেই হজ কবুল হয় না, মিনায় মামুনুল হক
মা এখনও বুঝতে পারছেন না ছেলে ও নাতিরা আর কখনোই ফিরবে না
‘ভারতের আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের দাবি ধূলিসাৎ হয়ে গেছে’
সংস্কারের নামে হাসিনার মতো উন্নয়নের সবক দিচ্ছে বর্তমান সরকার: শামসুজ্জামান দুদু
যানবাহনের চাপ বাড়ায় যমুনা সেতুতে বাড়ছে দুর্ঘটনা
টেস্ট দলে ফিরছেন এবাদত, দীর্ঘমেয়াদে নেতৃত্ব পাচ্ছেন শান্ত
ঈদের ছুটিতে সরকারি হাসপাতালে ১৭ নির্দেশনা
সোহেল আলমের ‘বড্ড ভালোবাসি’,মডেল হয়েছেন শ্যামল-চমক
মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা: উপদেষ্টা ফারুক ই আজম
সুখবর নেই চ্যালেঞ্জের পাহাড়
ঘুম থেকে উঠলেই পেট ফাঁপা?
ঈদে জাকারিয়া সৌখিনের নতুন চমক ‘প্রিয় প্রজাপতি’

গাইবান্ধায় বন্যা: ক্ষতির মুখে কৃষি ও মৎস্য খাত

অনলাইন ডেস্ক

বন্যার পানিতে গাইবান্ধার সাত উপজেলার ১৬৫ চর পুরোপুরি নিমজ্জিত রয়েছে। গত দুদিনে পানি বেশ কিছুটা কমলেও টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে নদ-নদীর পানি। দীর্ঘদিন পানিতে নিমজ্জিত থাকায় জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল পাটের ক্ষেত নষ্ট হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া রোপা আমন, তিল, কালাই, বাদাম, ভুট্টাসহ অন্যান্য শাকসবজির ক্ষেত পানিতে ডুবে থাকায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন কৃষকরা।

গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. খোরশেদ আলম জানান, বন্যায় জেলার ৬ হাজার ৪৩৬ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৯৭৩ হেক্টর জমির ফসল পুরোপুরি নষ্ট হতে পারে। ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে ৬৬ হাজার ৮৬৯ জন কৃষক। এতে প্রাথমিকভাবে কৃষকের ৭৬ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। তবে, বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে এই ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারজান রহমান জানান, বন্যায় এ পর্যন্ত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার ৩৪৭ জন মৎস্যচাষি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ৯৬ দশমিক ৪৭ হেক্টর আয়তনের ৪৫৭টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এর মধ্যে ৪ কোটি ৬৩ লাখ ২২ হাজার টাকা মূল্যের বড় মাছ, ২৯ লাখ ৭৪ হাজার টাকার পোনামাছ ও ৩৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা মূল্যের অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষিদের প্রণোদনা দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ড. মাহফুজুর রহমান জানান, বন্যার কারণে এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ লাখ গবাদি পশু ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। খামারিদের জন্য ১৮টি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় গবাদি পশুর জন্য রুচিবর্ধক ওষুধ, স্যালাইন ও ভিটামিন ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুর ১২টা পর্যন্ত ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সাঘাটায় যমুনার পানি বিপৎসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের নিউ ব্রিজ স্টেশনে ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও গত ২৪ ঘণ্টায় পানির উচ্চতা ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া তিস্তার পানি ও করতোয়ার পানি বিপৎসীমার নিচে থাকলেও গত ২৪ ঘণ্টা পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বন্যাকবলিত চার উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ৩৯ হাজার ৬৫৯ পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। বন্যাদুর্গতদের জন্য স্থায়ী-অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা ১৮১টি। এর মধ্যে সাঘাটায় ৩৬, সুন্দরগঞ্জে ৪৮, ফুলছড়িতে ২৩, সদরে ২৪, সাদুল্লাপুরে ৩৩, পলাশবাড়ীতে ৬ এবং গোবিন্দগঞ্জে ১১টি আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রশাসনের গৃহীত কার্যক্রমে তিন হাজার ৫০ প্যাকেট শুকনা খাবার, ৩৮৫ মেট্রিক টন জিআর চাল এবং নগদ ১৫ লাখ টাকা চারটি উপজেলায় বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা ও স্পিডবোট প্রস্তুত রয়েছে। জেলা-উপজেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে পানির পাত্র এবং পানি বিশুদ্ধিকরণ ট্যাবলেট সরবরাহ করা হচ্ছে।

স্থানীয় কুন্দেরপাড়া গণউন্নয়ন কেন্দ্র, বন্যা আশ্রয় কেন্দ্র ও বিভিন্ন বাঁধে ২০টি ল্যাট্রিন ও দুটি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। টিনসেট স্থাপন করে শতাধিক পরিবারের অস্থায়ী বাসস্থান তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়া গবাদিপশুর জন্য এক হাজার ফুট পলিথিন সিট দেওয়া হয়েছে। ৪৫টি ইউনিয়নে ২৫০ জন স্বেচ্ছাসেবক বন্যা সংক্রান্ত জরুরি সংবাদ আদান-প্রদান করছেন। দুই শতাধিক দক্ষ কর্মী ভানবাসি মানুষকে উদ্ধার ও ত্রাণ প্রদান কাজে সহায়তা করছে। ডব্লিউএফপি’র সহায়তায় ১০ হাজার পরিবারকে শুকনো খাবার হিসেবে বিস্কুট ও সাত হাজার পরিবারের মাঝে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া বাঁধ ও আশ্রয়কেন্দ্রে ৩০টি ল্যাট্রিন স্থাপন করার কাজ চলছে।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক বলেন, গাইবান্ধায় নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও আবারও কিছুটা বেড়েছে। ভাঙন রোধসহ বন্যাকবলিতদের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজি নাহিদ রসুল বলেন, বানভাসিদের মাঝে শুকনা খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। তাদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ করার পাশাপাশি সার্বিক খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে।

এনএফ নিউজ ডেস্ক

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ