শীতের মৌসুমে প্রকৃতির পাশাপাশি ত্বকও হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক, যা মোকাবিলা করতে প্রয়োজন বিশেষ যত্নের। অনেকে হাত ও মুখের ত্বকের চর্চায় বেমালুম ভুলে যান পায়ের যত্নের কথা। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে হাত ও মুখের ত্বকের রুক্ষতা দূর করা গেলেও পায়ের ত্বকের রুক্ষতা যেন কোন ভাবেই বশে আনা সম্ভব হয় না।
শিয়া বাটার
শীতে ত্বকের অন্যতম সাধারণ ও বিরক্তিকর সমস্যা হলো পা ফাটা। দেখতে খারাপ লাগার পাশাপাশি চলতে-ফিরতেও হয় নানা ঝামেলা। যেহেতু শিয়া বাটার বেশ হাইড্রেটিং, তাই এটি পা ফাটা রোধ করতে পারে খুব সহজেই। রাতে ঘুমানোর আগে কিছুটা শিয়া বাটার নিয়ে পায়ে কিছুক্ষণ ম্যাসাজ করে নিন। তাহলে পা ফাটার প্রবণতা কমে যাবে।
গ্লাইকোলিক অ্যাসিড
আবার অনেকের পায়ের গোড়ালির ফাটা সাধারণ যত্নে দূর হয় না। এ সমস্যার একটি দারুণ সমাধান পাওয়া গেছে টিকটকে। টিকটকের অনেক বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারকে ফাটা গোড়ালিতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে দেখা গেছে। ডার্মাটোলজিস্টরাও এই ট্রেন্ডকে দিয়েছেন সবুজসংকেত। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড খুব কোমলভাবে মৃত চামড়া দূর করে পায়ের গোড়ালি মসৃণ করে তোলে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে এটি ব্যবহার করে মিনিট দুই অপেক্ষা করতে হবে। এরপর এর ওপরেই ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন লাগাতে হবে। এভাবেই পা ফাটা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আবার শীতের এই সময় পায়ের ত্বকে দেখা যায় এক অদ্ভুত সমস্যা। যাকে বলা হয় স্ট্রবেরি লেগ। অনেক সময় শেভিংয়ের পর পায়ে কিছু দাগ ফুটে ওঠে। সাধারণত শেভ করার পর চুলের ফলিকল বা আটকে থাকা রোমকূপ বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে। তখন এটি অক্সিডাইজ হয়ে এমন কালো দাগ দেখা দেয়। এই ফুটে ওঠা কালো দাগ দেখতে অনেকটা স্ট্রবেরির গায়ে থাকা বীজের মতো মনে হয়। তাই এই ত্বক সমস্যার নাম স্ট্রবেরি লেগ। এই সমস্যা সমাধানে অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হলো কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন। এ জন্য ব্যবহার করতে পারেন গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন পায়ের ত্বক গ্লাইকোলিক অ্যাসিড দিয়ে এক্সফোলিয়েট করলে এর উপরিভাগে জমতে থাকা মৃত কোষ সরাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আছে, এমন বডি ওয়াশ বা বডি লোশন ব্যবহার করলেও এ সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যাবে।
পা এক্সফোলিয়েট করা
ভিজিয়ে রেখে পা এক্সফোলিয়েট করতে হবে। ফাটল-প্রবণ গোড়ালির চামড়া বেশ মোটা হয়ে থাকে, তা বাকি অংশের তুলনায় রুক্ষও হয়। চাপ পড়লেই তাই সম্ভাবনা থাকে ফেটে যাওয়ার। তাই ভিজিয়ে রেখে এক্সফোলিয়েট করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। পা ভেজানোর জন্য ঈষদুষ্ণ সাবান-পানি নিতে হবে৷ ভিজিয়ে রাখতে হবে বিশ মিনিট। লুফাহ, ফুট স্ক্রাবার বা ঝামা অর্থাৎ পিউমিস স্টোন দিয়ে আলতো হাতে ঘষে তুলতে হবে ত্বকের মরা ও পুরোনো কোষ। এবার মুছে নিয়ে পায়ে হিল বাম বা ভারি যেকোন ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে৷ এবার পেট্রোলিয়াম জেলি পায়ে মেখে এই আর্দ্রতা ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এ অবস্থায় মোজা পরে থাকাই ভালো, যাতে সব জায়গায় লেগে না যায় ক্রিম, বাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি।
আধুনিক স্কিনকেয়ার
যারা বেশি ব্যস্ত তারা পায়ের যত্নে হিল স্লিভস বা লিকুইড ব্যান্ডেজ ব্যবহার করতে পারেন। স্লিভসে উপকারি তেল আর ভিটামিন থাকে বলে হিল স্লিভস মোজার মতো পরে থাকলে পা ভিজিয়ে রাখার মতোই উপকার মেলে অনেকটা। হিল স্লিভস যেখানে মোজার মতো পরে থাকলে পা ফাটা প্রতিরোধ করা যায়, লিকুইড ব্যান্ডেজ আবার ফেটে যাওয়া পায়ের যত্নে কার্যকর। এতে আরও বেশি ফেটে গিয়ে ক্ষত তৈরি হওয়া থেকে গোড়ালি রক্ষা করা যায়। একটু গভীর ক্ষতের জন্য স্প্রে দিয়ে আটকে দেওয়া যায় এমন লিকুইড ব্যান্ডেজ ব্যবহার করলে ভালো। পরিষ্কার, শুকনা পায়ে এই ব্যান্ডেজ লাগাতে হবে।
প্রাকৃতিক উপায়ে গোড়ালির যত্ন
পা ভেজানোর পর তোয়ালেতে মুছে খাঁটি নারকেল তেল লাগানো যায়। আর্দ্রতা ধরে রাখতে এর কার্যকর ভূমিকার প্রমাণ মিলেছে। এর প্রদাহরোধী আর সংক্রমণরোধী গুণও রয়েছে, যা ফাটা পায়ে দিতে পারে স্বস্তি।
সিরকা ব্যবহার করা যায় পা ভেজাত৷ সঙ্গে যেকোন প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার যেমন তেল, শিয়া বাটার, কোকো বাটার ইত্যাদি। প্যারাফিন ওয়্যাক্স তো খুবই জনপ্রিয় পায়ের যত্নে৷
ঘরোয়া টোনার অ্যালোভেরা
ত্বকের আর্দ্রতা বাড়িয়ে এর তারুণ্য ধরে রাখতে অ্যালোভেরার জুড়ি মেলা ভার। আর এ অ্যালোভেরার টোনার বানাতে প্রয়োজন কেবল আধা কাপ অ্যালোভেরা জেল ও আধা কাপ গোলাপজল। ত্বক বেশি শুষ্ক হলে এর সঙ্গে মেশাতে পারেন আধা কাপ শসার রস। স্পর্শকাতর ত্বক ছাড়া সব ত্বকেই এ টোনার ব্যবহার করা যাবে।
বিশেষ সতর্কতা
ফাটা পায়ে গভীর ক্ষত বা সংক্রমণ হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে৷ ক্ষেত্র বিশেষে পোডিয়াট্রিস্ট বা পদ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে, বিশেষ করে ডায়াবেটিস থাকলে৷
ছবি: মালবিকা মোহনন এর ইনস্টাগ্রাম থেকে