যেকোনো ভিটামিন খাওয়ার মাত্রা সঠিক হতে হবে। কম বা বেশি হলে সমস্যা হবে। এ জন্য এই সিরিজে আজ থাকছে ভিটামিন ই-এর ভালো–মন্দ।
আমাদের মধ্যে ভিটামিন নিয়ে নানা ধরনের সত্য–মিথ্যা গল্প চালু আছে। আমরা অনেক সময় হেলথ টিপস নিয়ে এসব কথা শুনি ও দেখি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এখন হেলথ নিয়ে অনেক কনটেন্ট পাওয়া যায়, যার মধ্যে ভিটামিন খাওয়ার উৎসাহ দিয়ে নানা সাপ্লিমেন্ট খাওয়ানোর ফাঁদ পাতা হয়। ভিটামিন আমাদের খেতে হবে, দেহের চালিকা শক্তি হিসেবে ভিটামিন হতে হবে ভারসাম্যপূর্ণ; বেশিও নয়, কমও নয়। এই কমবেশিতে আপনি ভুগতে পারেন নানা সমস্যায়। আগের সপ্তাহে ভিটামিন এ নিয়ে কথা বলেছিলাম। আজ থাকছে ভিটামিন ই।
ভিটামিন ই আটটি ফ্যাট দ্রবণীয় যৌগের একটি গ্রুপ, যার মধ্যে আছে চারটি টোকোফেরল ও চারটি টোকোট্রাইনল। শরীরে ভিটামিন ই-এর ঘাটতি হলে ডায়েটরি ফ্যাট হজমের অন্তর্নিহিত সমস্যার কারণেই বেশি হয়; এর ফলে স্নায়ুর সমস্যা হতে পারে। ভিটামিন ই একটি চর্বিতে দ্রবণীয় অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট, যা প্রতিক্রিয়াশীল অক্সিজেন প্রজাতি থেকে কোষের ঝিল্লি সুরক্ষা দেয়। এটি চোখের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা ও কোষের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে ভিটামিন ই-এর মাত্রা কম হলে সমস্যা হয়।
আমাদের শরীরে ভিটামিন ই কী করে
চুলের স্বাস্থ্য: এটি চুলের গোড়াকে শক্তিশালী করে, চুলের বৃদ্ধি করে ও চুলের সমস্যা, যেমন চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
হৃদ্রোগের ঝুঁকি কমায়: ভিটামিন ই খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে ও রক্তনালিগুলোকে স্বাস্থ্যকর রাখতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়: ভিটামিন ই শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাকে শক্তিশালী করে।
চোখের স্বাস্থ্য: মকুলা ডিজেনারেশন ও ক্যাটার্যাক্টের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
ত্বকের স্বাস্থ্য: ভিটামিন ই ত্বকের কোষকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে, ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখে ও বয়সের ছাপ কমাতে সাহায্য করে।
শারীরবৃত্তীয় কাজ
শরীরে উৎপন্ন ক্ষতিকর পারক্সাইড ও সুপার অক্সাইড আয়নকে প্রশমিত করতে সাহায্য করে। সেলেনিয়াম ধাতু এই কাজে ভিটামিন ই-এর সাহায্যকারী।
• কোষ পর্দার গঠন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
• স্বাভাবিক প্রজনন ক্ষমতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• হিমোগ্লোবিনের হিম রঞ্জক উৎপাদনে সাহায্য করে।
• কোষীয় শ্বসনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে এবং জারণ বিক্রিয়াকে প্রশমিত করে।
• পেশি কোষে ক্রিয়েটিনের ঘনত্ব বজায় রাখে।
• নিউক্লিক অ্যাসিড ও অ্যামিনো অ্যাসিড শোষণ ও গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
• লিভারের বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ থেকে রক্ষা করে।
• ক্যানসার ও হৃদ্রোগ কমাতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ই-এর অভাবের ফলে
- চোখের সমস্যা: রাতকানা, শুষ্ক চোখ, কর্নিয়ার আলসার ও দীর্ঘকালীন অভাবের ক্ষেত্রে অন্ধত্ব পর্যন্ত হতে পারে।
• ত্বকের সমস্যা: ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ঠোঁট ফাটা ও একজিমা হতে পারে।
• রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া: এর ফলে সংক্রমণের প্রতি সহজে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া: শিশুদের ক্ষেত্রে শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, যার কারণে সরকারিভাবে শিশুদের ভিটামিন ই খাওয়ানোর কর্মসূচি থাকে।
মাত্রাতিরিক্ত ভিটামিন ই সেবনে ক্ষতি
- হাড়ের সমস্যা: হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়া, যা ভঙ্গুর হাড়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
• লিভারের সমস্যা: লিভারের ক্ষতি হতে পারে।
• চুলের সমস্যা: চুল পড়া ও চুলের বৃদ্ধি দুটিই হতে পারে।
• ত্বকের সমস্যা: ত্বকের ওপরের গ্লো কমে যাওয়া, সেই সঙ্গে চুলকানি হওয়া।
• গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে: ভ্রূণের জন্মগত ত্রুটির ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
• রক্তক্ষরণের ঝুঁকি: অতিরিক্ত ভিটামিন ই রক্ত পাতলা করে দিতে পারে এবং রক্তক্ষরণের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
• প্রদাহ: কিছু লোকের ক্ষেত্রে ভিটামিন ই অ্যালার্জি বা প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে।
• অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া: ভিটামিন ই কিছু ওষুধের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়া করতে পারে, যেমন রক্ত পাতলা করার ওষুধ।
• ক্যানসারের ঝুঁকি: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে যে অতিরিক্ত ভিটামিন ই কিছু ধরনের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
কতটা ভিটামিন ই খাওয়া উচিত?
দৈনিক পরিমাণ: ভিটামিন ই নারীদের দৈনিক গড়ে ৭ মিলিগ্রাম ও পুরুষদের ১০ মিলিগ্রাম প্রয়োজন। আপনি একটি বৈচিত্র্যময় খাদ্য খাওয়ার মাধ্যমে আপনার প্রয়োজনীয় সব ভিটামিন ই পেতে পারেন।
ভিটামিন ই কোথা থেকে পাওয়া যায়?
বাদাম: চিনাবাদাম, আলমন্ড বাদাম, কাজুবাদাম বিশেষভাবে ভিটামিন ই-সমৃদ্ধ।
বীজ: সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়ার বীজ ও তিলের বীজে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
সবুজ শাকসবজি: পালংশাক, কেল ও ব্রকলি ভিটামিন ই-এ ভরপুর।
ফল: অ্যাভোকাডো, কিউই ও টমেটোতে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
তেল: সূর্যমুখীর তেল, অলিভ অয়েল ও ভুট্টার তেলে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
অন্যান্য খাবার: গমের চারা, মাছ ও মাংসেও কিছু পরিমাণে ভিটামিন ই পাওয়া যায়।
ভিটামিন ই-এর সঠিক পরিমাণ আপনার বয়স, লিঙ্গ, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য কারণের ওপর নির্ভর করে। সুষম খাদ্য গ্রহণ করলে সাধারণত ভিটামিন ই–এর অভাব হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। তবে যদি আপনার কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে বা কোনো ওষুধ সেবন করেন, তাহলে ভিটামিন ই সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।