বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এর ছয়টি ধারায় দুর্বলতা রয়েছে। জনস্বাস্থ্য রক্ষায় এখনই সেগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে তরুণ চিকিৎসকরা।
শনিবার বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ: তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় এ দাবি করেন তারা। ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি যৌথভাবে এ কর্মশালার আয়োজন করে।
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটি হাসপাতাল এন্ড ওয়েলফেয়ার হোম-এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হাই-এর সভাপতিত্বে কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারক। তিনি বলেন, তামাক ব্যবহারজনিত কারণে দেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ অকালে মারা যায়। দিন যত গড়াবে তামাকজনিত কারণে মৃত্যুর সংখ্যা তত বাড়বে। তাই এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধে দ্রুত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করতে হবে। তা না হলে তামাকজনিত এই অকাল মৃত্যু প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।
আরও পড়ুন: চাঁদাবাজের তালিকা হচ্ছে, দুই-তিনদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার শুরু: ডিএমপি কমিশনার
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী বলেন, ই-সিগারেট মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর। এর ব্যবহারে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক ও ফুসফুসের ক্ষতি হয়। ই-সিগারেটের ভয়াবহতা উপলব্ধি করে ইতোমধ্যেই ৪২টি দেশ ই-সিগারেটকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করেছে।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ বেলজিয়াম আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসপোজেবল ভ্যাপ বিক্রি নিষিদ্ধ করছে। মূলত শিশুদের আকৃষ্টকরণ এবং পরিবেশগত ক্ষতির কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। তাই আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মকে বাঁচাতে ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টসের (ভ্যাপিং, ই-সিগারেট) নিষিদ্ধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ এখই আইন সংশোধন করা প্রয়োজন।
আরও পড়ুন: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছবক দিতে আসবেন না, ভারতকে জামায়াত আমির
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রী কিডস, বাংলাদেশের এডভোকেসি ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ব্যাটেল অব মাইন্ডস নামে তরুণ শিক্ষার্থীদের চাকরি দেওয়ার নাম করে সিগারেটের প্রচারণা করে তামাক কোম্পানি। একই সঙ্গে রেস্তোরাঁগুলোতে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত এলাকা (ডিএসএ) তৈরি করে দেয়; যাতে তরুণরা সহজেই তামাক পণ্যের ওপর আসক্ত হয়ে পড়ে। তাই তামাক কোম্পানির এসব অপকৌশল বন্ধে সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি (সিএসআর) এবং পয়েন্ট অব সেলস্-এ তামাক পণ্যের প্রদর্শন বন্ধ করতে হবে।
এ সময় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রী কিডস, বাংলাদেশের লিড পলিসি এডভাইজার মো. মোস্তাফিজুর রহমানসহ দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগ আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না: ডা. তাহের
বিদ্যমান ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে চিহ্নিত ছয়টি দুর্বল ধারা হলো- পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশনী নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির যেকোনো ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা। তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
আরও পড়ুন: ‘জনশক্তি’ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি: জাতীয় নাগরিক কমিটি