সর্বশেষ
১০ বছরে অবৈধ হয়ে দেশে ফিরেছেন ৭ লাখ বাংলাদেশি
সংসদের আগে স্থানীয় নির্বাচন চাইলেন জামায়াতের আমির
ঝলমলে আমেজে দিশা পাটানির যত গ্ল্যাম লুক
পাক অভিনেতার প্রশংসা করে তোপের মুখে বলিউড অভিনেত্রী
দেশে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন হচ্ছে শিগগিরই
ভারতকে ‘চূড়ান্ত জবাব’ দেওয়ার হুঁশিয়ারি আজাদ কাশ্মীরের প্রধানমন্ত্রীর
৮ মাসে ২৬ রাজনৈতিক দলের উত্থান, উদ্দেশ্য কী?
ভারতের কাছে জড়িত থাকার অভিযোগের প্রমাণ চেয়েছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার
ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক দল ‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’
অন্য অভিবাসীদের আটকে দিলেও দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে আনতে চান ট্রাম্প
নির্মাণ সামগ্রী খোলা স্থানে রাখায় পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের জরিমানা
সরকারি প্রতিষ্ঠানে ৯৯ পদে চাকরি, ১৮ বছরেই আবেদনের সুযোগ
‌‘মাথায় ক্যামেরা, খুনের পর সেলফি তুলেছিল তারা’
জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন ক্রিকেটাররা, থাকবেন তামিমও
আজ যেমন থাকবে ঢাকার আকাশ

বীজসংকটে আলুর ফলন কমার শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মানসম্মত বীজের সংকট দেখা দেওয়ায় বগুড়ায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে চলতি মৌসুমে সংরক্ষণযোগ্য আলুর উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ফলে আগামীতে এ বছরের চেয়ে বেশি দামে ভোক্তাদের আলু কিনতে হতে পারে। সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) বগুড়া জেলা কমিটির সাবেক সভাপতি মাসুদার রহমান হেলাল আলুর বাজার স্বাভাবিক রাখতে এখন থেকেই সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সঠিক ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি প্রয়োজনে এখনই আলু আমদানির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। এ মৌসুমে আলুর বীজে সরকারের ভর্তুকি দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি সরকার।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে বলা হয়েছে, গত মৌসুমে দেশে আলু চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৪ লাখ ২৫ হাজার ৪৪৩ বিঘা জমিতে। আর এ বছর আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ ৫৭ হাজার ২৮৪ বিঘায়। কৃষি বিভাগের হিসাবে বলা হয়েছে, গত বছর দেশে আলুর উৎপাদন হয় ২৯ কোটি ৪১ লাখ ৯২ হাজার ৭৭৭ মণ। আর এ বছর উৎপাদন আশা করা হচ্ছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ ৮১ হাজার ৪৪৮ মণ, অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই বলা হয়েছে আলুর উৎপাদন কম হবে ২ কোটি ৬১ লাখ ১১ হাজার ৩২৯ মণ।

আরও পড়ুন: খুলনার ‘পরবাসী’ পেশার মানুষের সুখ-দুঃখ

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে বলা হয়েছে, সেখানে এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে আলু চাষ হবে। গত মৌসুমে বগুড়ায় আলু চাষ হয়েছিল প্রায় ৪ লাখ ১৫ হাজার বিঘায়। এ বছর ৪ লাখ ৮ হাজার বিঘা জমিতে ইতোমধ্যে আলু লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে। সময় আরও আছে- এমন তথ্য দিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে আরও কিছু জমিতে আলু চাষ হবে। আলু চাষ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করবে।

বগুড়ায় আলু চাষের জন্য এ বছর মানসম্মত অর্থাৎ ভিত্তি বীজ প্রয়োজন ছিল ২২ লাখ ৫০ হাজার মণ। কিন্তু বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) বগুড়ায় বীজ দিয়েছে মাত্র ১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ মণ। আর অন্য বেসরকারি বীজ বিপণন কোম্পানিগুলো দিয়েছে ৫ লাখ মণ।

আরও পড়ুন: কয়েকটি গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা বাঁশের সাঁকো

বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মতলুবর রহমান বলেন, ‘বীজের সংকট সত্ত্বেও বগুড়ায় কোনো এলাকাতেই আলু চাষযোগ্য জমি পড়ে নেই। দেশীয় পদ্ধতিতে সংরক্ষিত বীজে চাষ করা জমিতে এ বছরও গত বছরের মতোই ফলন পাওয়া যাবে, যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে আর রোগবালাই কম হয়।’

বগুড়ায় গত বছর আলুর উৎপাদন হয় প্রায় তিন কোটি মণ। বগুড়ার যেসব এলাকায় আলুর উৎপাদন বেশি হয় তার মধ্যে নন্দীগ্রাম অন্যতম। বীজের অভাবে এ উপজেলার অনেক চাষিই এবার আলু চাষ করতে পারেননি। যারা চাষ করেছেন, ভালো মানের বীজের জন্য এবার তাদের অতিরিক্ত অর্থ গুনতে হয়েছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলার যেসব এলাকায় আলুর ভালো ফলন হয় তার মধ্যে বিদইল গ্রাম অন্যতম। ওই গ্রামে আলু লাগানোর সময় কথা হয় চাষি শহিদুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘গত বছর পাঁচ বিঘায় আলু চাষ করতে বীজে ব্যয় হয়েছিল ৬০ হাজার টাকা। আর এ বছর চার বিঘা জমির জন্য আলুবীজে লেগেছে ৯০ হাজার টাকা।’ বীজের অভাবে এক বিঘা জমি ফেলে রেখেছেন- এমন দাবি করে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যে আলুবীজের দাম গত বছর ২ হাজার ৩০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা ছিল, সেই মানের এবং জাতের আলুবীজ এবার কিনতে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি দামে।’ একই উপজেলার রনবাঘা গ্রামের চাষি গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘সারা বছর খাবার জন্য হিমাগারে রেখেছিলাম তিন মণ আলু। কিন্তু জমি চাষ করার জন্য বীজ না পাওয়ায় হিমাগারে রাখা আলু দিয়ে আবাদ করেছি ১৬ শতাংশ জমি।’ ফলন কেমন হতে পারে- এমন প্রশ্নের উত্তরে গোলাম মোস্তাফা বলেন, ‘গত বছর বীজসংকটের মুখে তাকে ঘরে রাখা আলু দিয়ে একই পরিমাণ জমি চাষ করতে হয়েছিল, ১৬ শতাংশে পাওয়া যায় ২৫ মণ। তার ধারণা, হিমাগারে রাখা আলু বীজ হিসেবে ব্যবহার করায় কোনোভাবেই ১৬ শতাংশে ২৫ মণের বেশি আলু আসবে না।’

আরও পড়ুন: ঘুরতে গিয়ে নদীতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু

রনবাঘার আরেক চাষি মো. আব্দুল ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ‘গত মৌসুমে স্থানীয়ভাবে রাখা আলুবীজ যেখানে ৩০ টাকা কেজি পাওয়া গেছে, সেই একই বীজ তাদের এবার কিনতে হয়েছে ৬৫ টাকায়।’ মো. আব্দুল ওয়াদুদ হোসেন বলেন, ‘গত বছর ঘরে রাখা আলুবীজে ১৬ শতাংশ জমিতে পেয়েছিলাম ৩০ মণ আলু। এবারও ঘরে রাখা বীজেই চাষ করেছি ১৬ শতাংশ। আশা করছি ৩০ মণই হবে। চাষিদের দাবি, ভালো বীজে নন্দীগ্রামের অধিকাংশ এলাকাতেই বিঘায় আলু পাওয়া যায় ১০০ থেকে ১১৫ মণ পর্যন্ত।

কৃষিবিদরা বলছেন, ভালো ফলনের জন্য ভালো বীজ, আবহাওয়া এবং সঠিক গুণাগুণসম্পন্ন মাটি প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে বীজ খারাপ হলে ফলন কমতে পারে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত।

দেশের যেসব জেলার আলু দিয়ে অন্য জেলার চাহিদা মেটানো হয় তার মধ্যে জয়পুরহাট অন্যতম। জয়পুরহাটে এ বছর তিন লাখ বিঘায় আলু চাষের জন্য ভালো মানের ১৫ লাখ মণ বীজের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কয়েকটি বেসরকারি কোম্পানি ও সরকারি প্রতিষ্ঠান বিএডিসি তাদের বীজ দিতে পেরেছে মাত্র ৬ লাখ ২৫ হাজার মণ।

আরও পড়ুন: কাহারোলে বাঁশের সাঁকোই ১৫ গ্রামের মানুষের ভরসা

জয়পুরহাটের যেসব উপজেলায় আলুর ভালো ফলন হয় তার মধ্যে আক্কেলপুর অন্যতম। বিঘায় গড়ে ফলন ১০০ মণ দাবি করে সোনালী মাগুরা গ্রামের চাষি শাহজাহান জানান, গত বছর আট বিঘায় আলু চাষ করে বীজে খরচ হয় ৬৫ হাজার টাকা। আর এ বছর আট বিঘায় বীজ কিনতে লেগেছে ৯৫ হাজার টাকা। জয়পুরহাটে এলাকাভেদে আলুর ফলন হয় ১০০ থেকে ১২০ মণ পর্যন্ত।

হিমাগারমালিকরা বলছেন, গত বছর মৌসুমের শুরুতে আলু বেচাকেনা হয়েছে ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা মণ দরে। বাজারে আলুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মৌসুমের মাঝামাঝি হাট-বাজারগুলোতে শেষ হয়ে যায় আলু। বগুড়ার নন্দীগ্রাম এলাকার মাঠে চলছে পুরোদমে আলুর চাষ।

আরও পড়ুন: সাঘাটায় বিএনপি ও জামায়াত নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১০

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ